ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ

আমরা জন্মের পর দেখেছি আমাদের বাপ-দাদাদের রোপণ করা ঐতিহ্যবাহী কিছু গাছের মধ্যে খেজুর গাছ ছিল অন্যতম। আমরা অপেক্ষার প্রহর গুনতাম শীতকালের জন্য। কারণ শীত এলেই খেজুরের রস ও খেজুরের মিঠা (রাভমিঠা) গন্ধে গ্রামীণ জনপদ মৌ মৌ করত। শীত এলেই গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ত খেজুর গাছ রসের উপযোগী করতে পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত হতে। এতে গাছিরা এই সময় অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতো। কালের বিবর্তনে অর্থনীতির চাকাকে চাঙ্গা করতে গিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনেক গাছের মতো খেজুর গাছকেও কেটে ফেলে লাগানো হয়েছে কাঠের গাছ। একসময় গ্রামীণ উপজেলাগুলোতে অধিকাংশ রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে ও কৃষিজমির পাশে ছিল প্রচুর পরিমাণে খেজুর গাছ। শীত মৌসুম শুরু হতেই গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ত খেজুরের রস সংগ্রহ করার কাজে। সেই রসের চাহিদাও ছিল প্রচুর। ফলে বিভিন্ন পিঠা, পুলি ও পায়েসসহ নানা প্রকার খাবার তৈরির জন্য খেজুরের রস ছিল অন্যতম উপাদান। এ জন্য গাছিদের চাহিদার কথা বলে রাখতে হতো। ফলে যাদের খেজুর গাছ ছিল না তারাও রস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন না। তখন শীতে আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করত। বিশেষ করে পৌষ-মাঘ শীত মৌসুম এলে গাছিদের আনন্দের সীমা থাকত না। খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য মহাব্যস্ত হয়ে পড়তেন তারা। সকাল হলেই রস সংগ্রহ করত বাজারে গিয়ে বিক্রি করত এক কলসি রস ৫০-৭০ টাকা পর্যন্ত। গাছিদের থেকে জানা যায় ৫ লিটার রসে এক কেজি গুড় (মিঠা) হয়। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এ মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে থাকত উৎসবমুখর পরিবেশ। এ সময় মেহমান আসা মানেই খেজুরের রস ও আমনধানের ভাঁপাপিঠা, পুলি ও পায়েশ দিয়ে আপ্যায়ন। তা ছাড়া খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিরার মোয়া ও মুড়ি খাওয়ার জন্য কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের শীতের মৌসুম ছিল অতি প্রিয়। কিন্তু ইটভাটি, বাণিজ্যিক চাষ, সুষ্ঠু তদারকি না করার ফলে মীরসরাই তথা সারাদেশে ঐতিহ্যের বাহক গ্রাম-গঞ্জ থেকে খেজুরগাছ আজ বিলুপ্তি পথে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অনুমতি ও বিনা অনুমতিতে শত শত ইটভাটি গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মীরসরাই উপজেলায় ১৭টি ইটভাঁটি রয়েছে। এই ইটভাঁটিগুলোর বেশির ভাগই কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কেবল তা-ই নয়, খেজুর গাছের দহন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় মীরসরাই উপজেলার অধিকাংশ ইটভাঁটিগুলোতে খেজুরগাছ পোড়ানো হচ্ছে। এতে করে খেজুরগাছ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মীরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের ঘড়ি মার্কেট এলাকার গাছি জসিম উদ্দিন জানান, ইটভাঁটিগুলোতে প্রধানত খেজুরগাছ পোড়ানো হচ্ছে। আবার অনেকে খেজুরগাছ কেটে সাঁকোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে গাছ কমে যাওয়াতে তারা খেজুরের রসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×