ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গরিবের সম্বল ঝুটের কম্বল

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

 গরিবের সম্বল ঝুটের কম্বল

কম্বল বিক্রির ধুম পড়েছে শিমুলদাইড় বাজারে। কাজীপুর উপজেলার শিমুলদাউড় বাজারে গরিবের কম্বল তৈরি হয়। শৈত্যপ্রবাহে কাজীপুর উপজেলায় তৈরি ঝুট কাপড়ের কম্বলের কদর বাড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে গরিবের কম্বল কিনে নেয়। কাজীপুর উপজেলার শিমুলদাইড় বাজারে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় উপজেলার চালিতাডাঙা ইউনিয়নের শিমুলদাইড়, বড়শিবাঙ্গা গ্রামের মানুষ তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট কাপড় কিনে এনে কম্বল তৈরি শুরু করেন। ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মণ হিসেবে ঝুট কাপড় কিনে এনে সেলাইমেশিনে একটার সঙ্গে একটা জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয় এ কম্বল। এর নামকরণ হয় ঝুট কম্বল। এ কাজে জড়িয়ে পড়েন উপজেলার আরও কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ। নদী ভাঙ্গা এসব মানুষ খুঁজে পায় জীবিকার আরেকটা দিক। অল্পদিনের মধ্যে শিমুলদাইড় বাজার কম্বলের বড় বাজার হিসেবে গড়ে ওঠে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা পেরিয়ে এ কম্বল ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রায় সব জেলায়। বাজারের তিনজন কম্বল ব্যবসায়ী বলেন, ঝুট কাপড়ের পাশাপাশি নতুন কাপড়ের কম্বলও তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে নতুন কাপড় কিনে সেলাই করে তৈরি করা হয় এ কম্বল। বাজারে একশ’ থেকে পঁচিশ’ শ’ টাকা দামের কম্বল পাওয়া যায় জানিয়ে এক ব্যবসায়ী জানান, প্রথম দিকে শুধু দুস্থ মানুষের কথা চিন্তা করে ঝুট কাপড়ের কম্বল তৈরি করা হতো। এ কম্বল মহিলারা বাড়িতে বসে সেলাই মেশিনে জোড়া দিয়ে তৈরি করতেন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে বাড়তে থাকে কম্বলের চাহিদা। ফলে সাধারণ কম্বলের সঙ্গে সঙ্গে বাহারি কম্বলও তৈরি শুরু হয়। উপজেলার শিমুলদাইড়, বরশীভাঙ্গা, সাতকয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মুসলিমপাড়া, মানিকপোটল, গাড়াবেড়, রশিকপুর, হরিনাথপুর, ভবানীপুর, মাথাইলচাপড়, রৌহাবাড়ি, পলাশপুর, বিলচতল, চকপাড়া, লক্ষ্মীপুর, বেলতৈল, চালিতাডাঙা, মাধবডাঙাসহ অর্ধশতাধিক গ্রামে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের কম্বল। এ সব গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। ছালাভরা গ্রামের নার্গিস খাতুন, চায়না খাতুনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, প্রতিটি কম্বল সেলাই করে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে মজুরি পান। বাড়ির কাজের ফাঁকে ফাঁকে কম্বল সেলাই করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা জানান। তিনজন কম্বল ব্যবসায়ী বলেন, সাধারণ মাপের একটি লেপ তৈরি করতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু মানভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় কম্বল পাওয়া যায়। ফলে কম্বলের কদর দিন দিন বাড়ছেই বলে তিনি জানান। শিমুলদাইড় বাজারের ব্যবসায়ী, আয়নাল হক, সোহেল রানা, আবদুল লতিফ, রাশেদুল ইসলামসহ ১০ জন বলেন, এ বাজারে শতাধিক কম্বলের দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান থেকে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক জেলায় কম্বল যাচ্ছে। ক্রেতারা পছন্দ করে দরদাম ঠিক করে টাকা পাঠালে এখান থেকে ট্রাকে কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে তারা জানান। রংপুর থেকে কম্বল কিনতে আসা ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। সাধারণ মানুষের কাছে কাজীপুরের ঝুটকাপড়ের কম্বলের কদর বেশি। দামে কম কিন্তু টেকসই তাই ঘরে ঘরে এখন এ কম্বল। তাছাড়া নতুন কাপড়ের কম্বলও দেখতে সুন্দর ও নাগালের মধ্যে দাম বলে অনেকেই কেনেন। এলাকার রফিকুল ইসলাম, সালমা খাতুন, সাইদুল ইসলামসহ পাঁচজন বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে শুরু হওয়া ঝুট কাপড়ের কম্বল ব্যবসা এখন প্রতিষ্ঠিত রূপ পেয়েছে। এটিকে টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন তারা। কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, কাজীপুরে ঝুট কাপড় ও নতুন কাপড়ে তৈরি হওয়া কম্বল এ অঞ্চলের হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সহযোগিতা দেয়া হবে বলে তিনি জানান। -বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে
×