ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কর্মসংস্থান হবে ৩০ লাখ

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

কর্মসংস্থান হবে ৩০ লাখ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ৪ জানুয়ারি ॥ ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে মীরসরাই শিল্প শহরের অবকাঠামো। মীরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুর চর, শিল চর, মোশাররফ চর ও পীরের চর এলাকার ৩০ হাজার একর চরাঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। জানা গেছে, ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে এবং সমুদ্র তীরবর্তী জেগে ওঠা ১৫ হাজার একর জমির মধ্যে চারটি মৌজায় ৬ হাজার ৩৯০ একর জায়গায় শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। চায়না হারবার কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সেখানে নির্মিত হচ্ছে অবকাঠামো, তৈরি হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। ইতোমধ্যে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মীরসরাই ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে চার লেনের আরও ১০ কিলোমিটার শেখ হাসিনা এভিনিউ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের সঙ্গে। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নেভি ও চায়না হারবার কোম্পানি সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে তৈরি করা হবে জলাধার। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে। গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড স্থাপন করবে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্র। এছাড়া ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র করার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে ৫০ একর জমি। মীরসরাই শিল্প শহর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এই অঞ্চলে দেশী-বিদেশী শিল্প উদ্যোক্তাদের ৮৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা, পিএইচপি, কেএসআরএম, বিএসআরএম, ঝেজিয়াং, কুনমিংসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ। এছাড়া ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে সামিট চিটাগাং পাওয়ার, ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ১ হাজার কোটি টাকা, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১০০ কোটি টাকা, গ্যাস-১ লিমিটেড ২০০ কোটি টাকা, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২০০ কোটি টাকা, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা, আরমান হক ডেনিমস ১০০ কোটি টাকা এবং অর্কিড এনার্জি ২০০ কোটি টাকা। গত বছর ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেপজা ইকোনমিক জোন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মীরসরাইয়ের সংসদ সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরিকল্পনায় এই বিশাল কর্মযজ্ঞ এখন দৃশ্যমান। জানা গেছে, মীরসরাইয়ে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে পিএইচপি গ্রুপ। পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে সেখানে স্টিল মিল স্থাপন করবে। এই গ্রুপ ৫৬৪ একর জমিতে স্টিল মিলসহ বিভিন্ন খাতে দুই ধাপে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। এতে আধুনিক পাল্প এ্যান্ড বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন ও ইকোনমিক জোনের উন্নয়নে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা ভাগ্যবান আমাদের এলাকায় এ রকম একটি শিল্প শহর প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এটি হলে মীরসরাই হবে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো শহর। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ১০ হাজার একর জমি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ২০৩০ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে শিল্প শহর চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পুরো কাজ শেষ হলে এখানে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৩০ লাখ লোকের।
×