ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল গুজব বনাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

 ডিজিটাল গুজব বনাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। বর্তমান সময় থেকে দশ বছর আগে যা আমরা কল্পনাতেও আনতে ভয় পেতাম, আজ তা হাতের নাগালে। ঘরে বসে দৈনন্দিন প্রতিটি কাজে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে যাচ্ছি। যার ফলে বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজ নামে পরিচিত। আজকের ভার্চুয়াল জগত এতটা উৎকর্ষ যা আমাদের কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা পুরো বিশ্ব একটি ছোট ঘরে বসে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে প্রযুক্তির এক বিশাল উন্নয়নের হাতিয়ার। প্রতিটি জিনিসের মতো প্রযুক্তিরও ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক রয়েছে। ইতিবাচক দিককে কাজে লাগিয়ে মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে আবার নেতিবাচক দিক ব্যবহার করে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নেতিবাচক দিকের মধ্যে সাইবার ক্রাইম হচ্ছে একটি। সাইবার ক্রাইম বলতে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে ক্রাইম করাকে বোঝায়। বর্তমান সময়ে সাইবার ক্রাইমের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডিজিটাল গুজব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদির ব্যবহার করে মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে। এ ধরনের ডিজিটাল গুজব ও অপপ্রচার দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ছাত্র আন্দোলনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, ২৯ জুলাই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে সংঘটিত এক সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মাধ্যমে আন্দোলনে সূচনা হলেও পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে এবং নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়ে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলে। এরই মধ্যে একদল কুচক্রী লোক এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এদের অনেকেই ভুয়া ছাত্র সেজে রাতারাতি স্কুল ড্রেস বানিয়ে, পিঠে স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে রাস্তায় নেমে অরাজকতা ও নাশকতা সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ফেসবুকে প্রতিনিয়ত ছবি ও ভিডিও ভাইরালের মাধ্যমে ডিজিটাল গুজব প্রচার করা হয়, যা ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। অন্যদিকে ডিজিটাল গুজব নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস করা হয়। নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রপাগান্ডা চালালে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা। ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখায়, তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা। ২৮ ধারায়, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা। ২৯ ধারায়, মানহানিকর কোন তথ্য দিলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। ৩০ ধারায়, না জানিয়ে কেউ যদি কোনো ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে, তাহলে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৩১ ধারায়, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। ৩২ ধারায়, সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনীভাবে প্রবেশ করে কোন ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যে কোন ধরনের ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা। ডিজিটাল ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের সবগুলো ধারাই ভয়ঙ্কর। তবে ৩২ ধারায় সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। ডিজিটাল গুজব প্রতিরোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতনতামূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। তা ছাড়া সতর্ক মনোভাব রেখে সামাজিক যোগাযোগের প্রতিটি ক্ষেত্র ব্যবহার করতে হবে। যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে অবগত নয়, তাদের এই আইন সম্পর্কে জানিয়ে সচেতন করতে হবে। সাইবার অপরাধ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা পরিচালনার মাধ্যমেও ডিজিটাল গুজবের মতো ভয়াবহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আইটি ডটকম ডেস্ক
×