ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউমোনিয়া ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

 নিউমোনিয়া ঝুঁকি

বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের সূচকে অবস্থান করলেও এটা খুবই দুঃখজনক যে, দেশে এখন পর্যন্ত শিশু মৃত্যুর মধ্যে প্রথম নিউমোনিয়া। বিশ্বে নিউমোনিয়ায় ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশতম। দেশে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ২০ হাজার শিশু মারা যায়। অথচ একটু সচেতন হলেই, বিশেষ করে মায়েরা সহজেই এই রোগ প্রতিরোধ প্রতিকার ও চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিহত করা সম্ভব। এসডিজি পূরণে ২০৩০ সালের পর অপুষ্ট ৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ জনে নামাতে হলে নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুর হার ও অপুষ্টি কমাতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, শিশুদের ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ, হাত ধোয়া, সময়মতো টিকা দেয়া, শীত ও ধুলাবালি থেকে শিশুদের সুরক্ষা সর্বোপরি সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। দুর্ভাগ্য যে, দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ শতাংশের মতো শিশু নিউমোনিয়ায় চিকিৎসা পায়। সারাদেশে সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এক্ষেত্রে সবিশেষ অবদান রাখতে পারে। কেননা, নিউমোনিয়া নির্মূলে রোগ নির্ণয় মূল কথা। বিশেষ করে শীত মৌসুমে শিশুর গলা ফোলা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সংক্রমিত হলেই সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে হবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। এর জন্য যথাযোগ্য দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা ও সর্বোপরি রয়েছে সচেতনতা। রাজধানীর মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এ্যাডভান্সড এডুকেশন এ্যান্ড রিসার্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশে জনসংখ্যা ও রোগী অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, আয়া সর্বোপরি রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনায় দক্ষ জনশক্তির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রধানত এই কারণেই দেশের রোগীরা ক্রমশ বিদেশমুখী হয়ে থাকে। এই অবস্থার অবসানে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী- বেসরকারী উদ্যোগে নানা হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরকালে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রায় স্ব-উদ্যোগে গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে মুগদার আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং ইনস্টিটিউট। অতঃপর দেশে প্রয়োজন অনুপাতে ডাক্তার-নার্স-আয়ার পাশাপাশি রোগ নির্ণয় ও প্যাথ ল্যাব পরিচালনার জন্য দেশেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। সত্য বটে দেশে বিবিধ ক্যান্সার নিরূপণ ও চিকিৎসা, কিডনি ও লিভার হাসপাতাল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইত্যাদি পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পর্যাপ্ত দক্ষ জনশক্তির অভাব প্রকট। দুঃখজনক হলো, অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সামান্য এক্সরে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। দক্ষ জনবলের অভাবে বিভিন্ন প্যাথ-ল্যাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিডিং আসে বিভিন্ন রকম। এর অবসান হওয়া জরুরী ও অত্যাবশ্যক। তদুপরি উন্নত বিশ্বে নিত্য নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার ও ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশেও সে সবের আমদানি ও ব্যবহারের ওপর সরকার উৎসাহ দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। স্বীকার করতে হবে যে, দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে অল্পবিস্তর চিকিৎসা সুবিধা মেলে। বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে জনবল পর্যাপ্ত না হোক, কমবেশি বাড়ানো হয়েছে। ওষুধপত্রসহ চিকিৎসা উপকরণের সরবরাহও আশানুরূপ। এক্স-রেসহ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ-সুবিধাও আছে। আছে ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাদের বেতন-ভাতাও বাড়ানো হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এতকিছুর পরও সরকারী হাসপাতালের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ তথা রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এসব হাসপাতালে প্রায় বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায় বিধায় অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষ স্বভাবতই ভিড় জমিয়ে থাকেন। সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ থেকেও রোগীরা এসে ভিড় জমান রাজধানীতে, যারা একটু জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কেননা, জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ হেলথ কমপ্লেক্স থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ রোগ নির্ণয়ের সুযোগ-সুবিধা কম। আর এ কারণেই রাজধানীর ঢামেক, মিটফোর্ড, পঙ্গু ও হৃদরোগ হাসপাতালসহ বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রচন্ড ভিড় পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সেই অনুপাতে থাকে না রোগীর শয্যা, ওষুধপত্র, রোগ নির্ণয়সহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা, সর্বোপরি পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স ইত্যাদি। নবগঠিত জনবান্ধব সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে এসব সমস্যার সমাধান করবে বলে প্রত্যাশা।
×