ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিটি মানুষই ম্যাজিশিয়ান

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 প্রতিটি মানুষই ম্যাজিশিয়ান

২০১৫ সালের কথা। মাত্র বিবিএ শেষ করে এমবিএ- তে ভর্তি হলাম। সবাই বলত এমবিএর পড়াশোনা বেশ একগুয়ে টাইপ। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অথবা বলা যেতে পারে, আনন্দ আর একগুয়ে ব্যাপারটা অনেকটা নিজের উপর নির্ভর করে। তারিখটা ছিল ১৫-০১-২০১৫। হাসান স্যারের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (এইচআরএম) ক্লাস। শিক্ষক হিসেবে হাসান স্যারের প্রচুর দুর্নাম ছিল, উনি ভীষণ কঠোর আর প্যারাদায়ক স্যার। মনে মনে ভাবছিলাম, উনার ক্লাস নেয়াটা কোন ভুল সিদ্ধান্ত হয়নি তো। কিন্তু স্যারের প্রথম ক্লাস, আমার পড়াশোনার প্রতি যে একগুঁয়েমি ধারণা ছিল তা চিরদিনের মতো বদলে দিল। স্যার প্রথম ক্লাসে এসেই বললেন, সবাই ৩ জনের গ্রুপ করেন। ৩ জন মিলে এইচআরএম-এর নতুন একটা থিউরি আবিষ্কার করবেন। সময় পাবেন ৩ মাস। যেই কথা, সেই কাজ। সঙ্গে সঙ্গে আমার দুইজন বন্ধু তামহিদ আর মুজতাহিদার সঙ্গে গ্রুপ করে ফেল্লাম। এরপর শুরু হলো থিউরি খোঁজার কাজ। এ যেন ছিল, অন্যরকম চ্যালেঞ্জ। সারা দিন-রাত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বসে এইচআরএম-এর সব বই ঘাটতে লাগলাম। নিজের তৈরি থিউরি, কথাটার মধ্যে আছে অন্যরকম শক্তি। এতদিন নিজেরা থিউরি পড়েছি। আর এখন থিউরি আবিষ্কার করব। এভাবে চলে গেল ২ মাস। কিন্তু কোন থিউরি মাথায় আসছিল না। স্যার আমাদের প্রত্যেকটা থিউরি রিজেক্ট করতে লাগলেন এবং আমরা তিনজনই ভীষণ হতাশ হয়ে পরলাম, কিন্তু হার মানলাম না। এমনই এক চরম মুহূর্তে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে বসে লাঞ্চ করছি আমি, তামহিদ আর মুজতাহিদা। তামহিদ : উফ্ খিচুড়িটা যা মজা হয়েছে না। মুজতাহিদা : হুম ক্যান্টিনের মামা যাদুকর। তার হাতে যাদু আছে। যাই রান্না করেন, ভীষণ মজা হয়। এই রান্নার ব্যবসা করে সে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে। শুনলাম নিজের রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করবেন কিছুদিন পর। আমি : আমার মতে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষই ম্যাজিশিয়ান। প্রত্যেকটা মানুষই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে মন্ত্র ও ম্যাজিক জানে। কিন্তু সবাই সেই ম্যাজিক এবং মন্ত্র সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। তামহিদ : কি রকম? আমি : এই যেমন- ১) ক্যান্টিনের মামা রান্নার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ যাদুকর। তিনি তার নিজস্ব জাদু-মন্ত্র দিয়ে সুস্বাদু রান্না করেন এবং সকলের বাহবা নেন। ২) যে সেলস্-এ চাকরি করে বেশ উন্নতি করছেন, ধরে নিতে তার নিজস্ব কিছু কৌশল বা যাদু-মন্ত্র আছে। তাই সে এ ধরনের কাজ করে অনেক সহযেই উন্নতি করে ফেলেছেন। সবাই তো আর সেলস্-এর কাজ করতে পারেন না। ৩) আবার হুমায়ন আহমেদ। কত চমৎকার একজন লেখক ছিলেন। উনার মতো করে আর কেউ লিখতে পারবে না। তিনিও ছিলেন গল্পের যাদুকর। মুজতাহিদা : বাহ্ ব্যাপারটা দারুণ তো। এইভাবে চিন্তা করিনি কখনও। তার মানে আমি অঙ্কের যাদুকর। অঙ্কের অনেক কঠিন সমস্যাগুলো আমি আমার নিজস্ব নিয়মে সমাধান করে ফেলতে পারি। আমি : সেইটাই। তামহিদ : আচ্ছা তাহলে আমরা এমন একটা থিউরি আবিষ্কার করলে কেমন হয়- ‘প্রত্যেকটা মানুষই ম্যাজিশিয়ান।’ এইচআর-এর ভাষায় একটি কোম্পানির প্রত্যেকটা মানুষই তার সম্পদ। আমরা এখন তার আপডেট ভার্সন তৈরি করব যে, একটি কোম্পানির প্রত্যেকটা মানুষই ম্যাজিশিয়ান। আমি : করা যায়। এমনকি একজন অফিস এসিস্ট্যান্ট যার কাজ কিনা অফিস কর্মচারী ও অফিসে যে অতিথিরা আসেন, তাদের চা বানানো। প্রতিদিন এতগুলো মানুষের চা বানানোও তাদের আপ্যায়ন করা ম্যাজিকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। মুজতাহিদা : হ্যাঁ। মনে আছে তোমাদের, গতকাল, আমার ল্যাপটপটা চলছিল না। আমি ইউনিভার্সিটির ল্যাব এসিস্টেন্ট দেখালাম, তিনি ৫ মিনিটের মধ্যে সেটা ঠিক করে দিলেন। কারণ তিনি এইসবে পারদর্শী। অথবা আমাদের ভাষায় বলা যায়, তিনি আইটি-তে ম্যাজিক জানেন। এভাবে করে হেসে খেলে বানিয়ে ফেললাম নিজেদের শখের থিউরি- ‘এইচআরএম হিউম্যান রিসোর্স ম্যাজিক।’ প্রত্যেকটা মানুষের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা তার জীবনে ও কর্মক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। * একজন ভাল চিত্রকার, রং-তুলি যেন তার হাতে ম্যাজিকের মত কাজ করে। * যে এইচআর, হাজার হাজার সিভি-এর মধ্যে কম সময়ে উপযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে পারবেন, তিনিই হলেন এইচআর-এর যাদুকর। * একজন ঝালমুড়িওয়ালাও নিজের সর্বোচ্চ যাদু-মন্ত্র মির্মিত করে ঝালমুড়ি মাখায়, যা একবার খাওয়ার পর, একই কাস্টমার বার বার আসে। * চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। সঠিক চিকিৎসা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। আবার মন্ত্রে ভুল হলে, রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। সুতরাং, যার যে বিষয়ে পারদর্শীতা ও অভিজ্ঞতা আছে, তার উচিত ওই বিষয়টাতে আরও বেশি মনোযোগ দেয়া এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন করা। নতুন নতুন মন্ত্র আবিষ্কার করে, সবার চেয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। মনে রাখতে হবে, তুমি কোন না কোন বিষয়ে ম্যাজিশিয়ান, আর তোমার যাদুর কাঠি তোমার কাছেই। এখন সেই যাদুর কাঠি তুমি ব্যবহার করবে নাকি ফেলে বাখবে, সেটা তোমার নিজস্ব ব্যাপার মাত্র।
×