বাস্তবতা আর স্বপ্নের মিথস্ক্রিয়ার ফলে জন্ম হয় সাহিত্যের। জীবন জগৎ নিয়ে গভীর ভাবনা স্থান পায় সাহিত্যে। কবিরা ভাবনার পিরামিডে গড়ে তুলেন কবিতার মিনার। সন্ধ্যাপ্রদীপ যেমন জগতের দর্পণে মিটিমিটি করে জ্বলে মানবজীবন প্রণালিও কবির ভাবনায় মিটিমিটি করে ঘুরপাক খায়। আর এই ভাবনা থেকে জন্ম হয় কবিতার।
কবি শাহ কামাল আহমদ একজন আপাদমস্তক কবিতার ফেরিওয়ালা। প্রবাস জীবনের ব্যস্ততম সময়ের মধ্যেও তিনি অবিরত রচনা করে চলছেন কবিতার ভান্ডার। তাঁর মনে ও মননে ভাবনার নুড়ি আর নুড়ি। জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত সেই সূ² ভাবনাগুলোকে তিনি সাজিয়েছেন কবিতার নিবেশে।
অমর ২১ বইমেলা ২০১৮ তে সিলেটের ‘পায়রা প্রকাশ’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতাগ্রন্থ ‘মেঘবালিকা’। প্রকাশক সিদ্দিক আহমদ। বইটির বেশিরভাগ কবিতায় স্থান পেযেছে মোহময় জীবনের কথা। ৬৪ পৃষ্ঠার এ বইটিতে স্থান পেয়েছে মোট ৫৪টি কবিতা। এ নিবন্ধটিতে কিছু কবিতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা হলো।
বাহ্যিক গঠনের মানুষ আর মানব মনের অধিকারী মানুষের মধ্যে রয়েছে বিস্তর তফাৎ। জৈবিক দিক থেকে মানুষ আর পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে মানুষের ভেতরে রয়েছে ‘মন’ নামক অনন্য এক সত্তা। আর এই সত্তােেক যে যত পবিত্র কাজে লাগাতে পারে সে ততই সুনিপুণ চরিত্রের অধিকারী হয়ে উঠে। ‘মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন’ই হচ্ছে বিশ্বমানবতার মূলকথা। কবির ভাবনায়ও তাই ফুটে উঠেছে।
‘আমি মানুষ হতে চাই
মানুষের মতো
—-খুব বেশি বড় হতে চাই না
চাই সুন্দর একজন মানুষ হতে।
‘আমি মানুষ হতে চাই’
মানবজীবন স্রাষ্টার সুনিপুণ হাতে গড়া এক নাট্যমঞ্চ। পার্থিব জীবনের ফাঁদে পড়ে আমরা ক্রমেই ভুলে যাই স্রাষ্টার কথা। সচেতন কবিমনে এ বিষয়টি সূ²ভাবে ধরা পড়েছে।
‘জীবন আসলে এক মিথ্যা নাটকের মঞ্চ
কিন্তু আমরা ভুলে যাই আমাদের সৃষ্টিকর্তার কথা
যিনি এত সুন্দর আয়োজন করে
আমাদের পাঠিয়েছেন।’
‘নাটকের মঞ্চ’
প্রতিটি মানুষের রয়েছে অনন্য বিবেক। বিবেক মানুষকে সুপথে কিংবা কুপথে পরিচালিত করে। আমরা দুনিয়ার ভ্রমে পড়ে পরজনমের কথা ভুলতে বসিযা যা কবিকে আহত করেছে। তিনি আহবান জানান মানবকুলকে স্রাষ্টার তৈরি সুপথে আসার জন্য।
‘আসুন আমাদের ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত করি
দুনিয়া এবং আখেরাত আল্লাহর তৈরি
জান্নাতের জন্য কাজ করি।’
‘আহবান’
প্রিয়জনকে হারিয়ে মানুষের বোধ লোপ পায়। মানুষের মধ্যে উদ্ভট, অদ্ভুত পরিবর্তন আসে। যাপিত জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে কবি এ সত্য উপলব্ধি করেছেন।
‘কেউ হারিয়ে গেলে হয়তো
তাঁকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব
কিন্তু কেউ বদলে গেলে তাঁকে
আগের মতো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।’
‘বদলে গেলে’
কবিদের মনে সবসময় শব্দের জোয়ার খেলা করে। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে সবাই যখন নিদ্রাদেবীর কোলে শুয়ে পড়ে কবিরা তখন ক্লান্তিহীনভাবে রচনা করেন কবিতা। খেলা করেন শব্দ নিয়ে।
‘দিনান্তের ক্লান্তি শেষে
সুখের পাযরা উড়ে
সকল পাখি নীড়ে ফিরে
সাঁঝের বেলা।
নীল আকাশে তারা উঠে
কত শত কাজের ফাঁকে
আমি কলম নিয়ে করি শুধু খেলা।’
‘ক্লান্তি শেষে’
বইটিতে জবিন ও জগতের বাস্তবতা সুনিপুণভাবে কলমের শৈল্পিক আঁচড়ে ফুটে উঠেছে। বাস্তব জীবনবোধ থেকে কবি রচনা করেছেন এ কবিতা সম্ভার। আমি আশা করি বইটি পাঠকসমাজে গ্রহণযোগ্য স্থান দখল করবে।
শীর্ষ সংবাদ: