আঙ্গুলপাঠ
অনিকেত সুর
সব মুখ স্রোতে ভেসে যায় সব সত্যপুরাণ; শুধু
দৃশ্যাদৃশ্যপটে অফুরান
ফুটে থাকে তোমার আঙ্গুল
ওই নীলগিরি, রম্য বনস্থলী
পরিকীর্ণ তমিস্রায় জেগে ওঠা নক্ষত্রের পথ
তোমার আঙ্গুলে আঁকা
আজ এতদিন পরে জানলাম
যে চিত্রী এঁকেছিল ও হেনরির ‘শেষ পাতা’
সে আর কেউ নয়, তুমি!...
ইতিহাস যারা লেখে, তারাও লেখে সব ভোঁতা কলমে
বিঠোফেন, মোজার্ট, তানসেন, আমির খসরু
তোমার আঙ্গুল ছুঁয়ে শিখেছিল সুরকলা, সুরের ইন্দ্রজাল...
কেউ বলেনি!
তোমার আঙ্গুল চিহ্নে আঁকা আছে নাবিকের চোখ
দূর তটরেখা, পাললিক ভ‚মি
প্রিয়তমা, তোমার আঙ্গুলের উৎসমুখ থেকে
বয়ে গেছে সব নদী সমুদ্র গহনে
তোমার অলৌকিক আঙ্গুল থেকে উড়ে যায়
অদম্য আগুনপাখি, নীল প্রজাপতি
বৃষ্টি ঝরে খরাদীর্ণ মাঠে, বৃক্ষেরা ফলবান হয়
যারা ঈর্ষাতুর নিচক্ষু হেনেছে তোমাকে
দিয়েছে ঐশী বিধানের নামে প্রবঞ্চনা
প্রিয়তমা, ওরা সব দানবের ভাই
তোমার শুদ্ধতম আঙ্গুল ছুঁয়ে আজ আমি
অন্ধ পৃথিবীর চোখে তুলে দেব আলো
লেখা হবে নতুন ইতিহাস
তোমার আঙ্গুল সত্যে মগ্ন হবে দেশ, মহাদেশ, বিহŸল কাল
পাপ
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
বৃত্তের চারপাশে পাপ থাকে
বহুবিধ রঙঘরে
লাল-নীল-হলুদ পাপ
ঘিরে থাকে চন্দ্রচ্যূত মন।
সাঁতার জানি না, না ছলাকলা
ডুবে আছি আকণ্ঠ শুভ্র-প্রপাতে
বৃত্তের সীমারেখা পাথর মেনে
ক্ষয়ে যায় হরিণ জীবন!
জল-তৃষ্ণার মরীচিকা শেষে
রাখি শরীর বৃষ্টির নিচে
সমুদয় আলো রাত্রিতে মুছে গেলে
পাপঘরে ছুঁয়ে যায় মন।
সোয়েটার
বিবিকা দেব
মেঘের উঠোনে কুড়িয়ে পাওয়া শীতের সোয়েটার। বুক পকেটে হিম নিশ্বাসের উত্তাপে সমস্ত লোমকক‚পে শিহরণ। আড়মোড়া ভাঙ্গা রোদের চুমুকে হিম স্পর্শ। দীর্ঘ বুনন আলুলায়িত ইচ্ছে বিলি কাটে কেশর বিন্যাসে। খোলা আকাশজুড়ে শিশিরের পসরা নিয়ে বসেছে প্রকৃতি। ধানফুলের গন্ধে রাতজাগা ভোর। সবুজ সবজির মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা কাকতাড়–য়ার সোয়েটার। তারও পকেটে জমা ধানের বৃত্তান্ত আর আনাজ পাতির দিনান্তের কথা। খালি পায়ে শিশির ভেজা আইলে হেঁটেছে যে কিশোরী, তার ছিল না শীতের সোয়েটার। চিকন ঠোঁটে কাঁপছে শিশির স্পর্শে। হিমের কাঁপন হাড়-মাংস, পাঁজরজুড়ে। বাতাস যত জোরে বইছে, ততই কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে নিচ্ছে পাতলা শরীর। চোখের পাতায় কুয়াশার কেন্দ্রবিন্দু। আধো ঘুম থেকে জেগে ওঠে সূর্য। উষ্ণতার সোয়েটার পরিয়ে দেয় কিশোরীর নরোম গায়ে। চোখে স্বপ্ন, বুকে বই জড়িয়ে এগিয়ে চলে পাঠশালায়। উলে বোনা লাল সবুজ রঙের সোয়েটারে আছন্ন কাটে সারাদিন।
প্রিয় বৈতরণী
সুমন আহমেদ
প্রিয় বৈতরণী...
তোমাকে পাবার নেশাটা শত প্রহরের নই-
যেন দীর্ঘ কোটি বছরের আক্ষেপ; বুকের ভেতর অবিরাম
বিরামহীন জ্বলছে অনল দাও দাও করে- তুমি নামের মহা শূন্যতায়।
সুখ নামের সুখপাখিটা ঠাঁই নিয়েছে বিষাদের শালবনে...
হারিয়ে ফেলেছি যত ছিল বেঁচে থাকার সীমাহীন উন্মাদনা।
প্রিয় বৈতরণী...
তোমার ক‚ল নামের যুগল ঠোঁটে আজ অচেনা ঠোঁটের সোহাগী
চুম্বন; সমস্ত অবয়বে ডানা জাপটে সাতার কাটে বুনোহাঁস...
দুইয়ে মিলে এক হয়ে বেলা-অবহেলায় সঙ্গমে লিপ্ত হও রোজ।
যৌবন জোয়ারে-ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে হয় রং বদল,
রাতের আকাশের মতো ভরা পূর্ণিমায়-
মধুর মিলনে বিলিন হয়ে যাই- এক জীবনের সমস্ত সঞ্জয়।
প্রিয় বৈতরণী...
তুমিহীন বেঁচে থাকা আজ বেঁচে থাকা নই; কেবল-ই
এই পৃথিবী নামের রংমহলে সবটুকুই বেঁচে থাকার অভিনয়।
আমাদের শ্লাঘা!
নুশরাত রুমু
একটি পতাকা দাও আমায়
ঢেকে রাখি ধর্ষিতার শরীর,
দোহাই তোমাদের... আলোকচিত্র তোলা বন্ধ করো সবাই
গণমাধ্যম কর্মীরা বিরতি নাও এবার।
কবির প্রলাপে কান দিও না কেউ,
বাসি ফুলের মালাটি ঝুলে আছে কবরখানায়,
যেখানে পারুল বেগমদের লাশ সমাহিত হয়।
অনেক তাজা ফুল চাই এবার
মৃত নয় জীবিতকে সম্ভাষণ জানানোর এখনই সময়।
সিংহাসন সাজানো আছে বিজয় মঞ্চে
ধর্ষক এসে অলঙ্কৃত করবে সে আসন।
ঐ তো, ঐ তো দেখা যাচ্ছে ধর্ষকের হাসিমুখ।
মাইকে ধ্বনিত হবে, এরাই আমাদের শ্লাঘা!
দু’হাত কর্মহীন রাখো সবাই সবাই।
তালি বাজাতে দেরি হয় কিনা আবার।
চেতনার কপালে জয়ের টিক এঁকে-
দম্ভের বেলুনে উড়ে চলুক বিদগ্ধ সমাজ
প্রেমের অভিধান
শফিকুল ইসলাম শফিক
একটি অভিধানে আজকাল প্রতিক্ষণ চেয়ে চেয়ে থাকি,
অজস্র শব্দ খুঁজি ফিরি স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে।
স্বপ্নের হাতছানিতে উঁকি দেয় প্রেয়সীর মিষ্টি হাসি,
না পাওয়ার উথাল পাতাল ঢেউ বয়ে যায় অন্তঃপুরে।
সময়ের স্রোতে স্রোতে ভেসে বেড়াই অশান্ত পথিক,
ক্ষণে ক্ষণে কে যেন ডেকে যায় নিরুদ্দেশে!
স্বপ্নেই আসে আর যায় প্রতিক্ষণ প্রতি প্রহর,
সাধ জাগে প্রেয়সীকে এবার চোখের ভাষার কিছু বলি।
মোমের মতো নিজেকে গলে
এক পা দু পা করে সমুখে এগুতে থাকি।
আজো মেলাতে পারিনি প্রণয়ের একটি শব্দ, একটি পঙ্ক্তি।
আশা নিরাশার সমীকরণে প্রেয়সীকে খুঁজে পাইনি,
নিবেদনের আগেই সে আজ হয়ে গেছে অন্য কারো।
রিক্ত হাতেই আনমনে ফিরে আসি ভাবনার আঙিনায়।
বুকের পাঁজরে লুকিয়ে রাখি স্বপ্নের মায়াজাল,
মনে হয় তার কাছে এতটুকুই অপরাধবোধ।
ক্ষমার দৃষ্টি বাড়িয়ে দিলাম তারি আশার প্রহরে,
তবু সে একটিবারও এসে ক্ষণিকের জন্য ধরা দেয় না,
এতদিনে বুঝেছি তার সাথে আমার বিভেদ সাত আসমান।
হয়তো শত জনমে কস্মিনকালেও তার একটু নাগাল পাব না।
মানুষ কী এতই স্বার্থপর হতে পারে?
উত্তর খুঁজে খুঁজে একাকী কেটে যায় না পওয়ার দিন।
বুকের মাঝে বহু যত্নে আগলে রাখি প্রেমের অভিধান,
এটিই আমার জীবনের বেঁচে থাকার একমাত্র পুঁজি।
শীর্ষ সংবাদ: