ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পিএসসি ও জিএসসিতে মেয়েদের সাফল্য

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 পিএসসি ও জিএসসিতে  মেয়েদের সাফল্য

উদ্দীপন-বদর-সামছু বিদ্যানিকেতন সমৃদ্ধির প্রবহমান দীপ্তি সারা বাংলাকে আজ আলোকিত করেছে। শিক্ষা কার্যক্রমের মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ সূচকে এর প্রভাব লক্ষণীয়। শুধু তাই নয় অর্ধাংশ নারীরাও এই আলোকিত জগতে নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রতিনিয়তই প্রমাণ করে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতার সার্বিক উন্নয়নে যে চিত্র স্পষ্ট হয় তা শুধু যুগান্তকারীই নয়, বিস্ময়ের মাত্রাও কোন অংশে কম নয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীর অনুপ্রবেশে বাংলাদেশ বিশ্বের একেবারে শীর্ষে। এক সময় মাঝপথে ঝরে পড়ার দুঃসময় আজ আমাদের ছাত্রীরা অতিক্রম করতে পেরেছে। বোর্ড পরীক্ষার বিভিন্ন ফলাফল বিশেষ করে পিএসসি এবং জিএসসিতে ছাত্রীদের অভাবনীয় সাফল্য এখন দৃষ্টিনন্দন। এবারের পিএসসির চূড়ান্ত ফলাফলে ছাত্রীরা যে মাত্রায় মেধা ও মননে তাদের সমৃদ্ধ করেছে তা সত্যিই অনেকটা চমকে যাওয়ার মতো। পিএসসিতে ছাত্ররা যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার সেখানে ছাত্রীদের সংখ্যা ২ লাখ ৪৮ হাজার। নদীবিধৌত বাংলার বাগেরহাট জেলা সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক বৈভবের এক শান্ত স্নিগ্ধ প্রতিবেশ। সেই ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় পল্লী জননীর কোলে লালিত একটি অগ্রসরমান গ্রাম বৈটপুর। সেই গ্রামে শিক্ষাবিদ মরহুম সামছুদ্দিন আহমদের পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত ‘উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু থেকেই মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সেটা শুধু ছাত্রীর ক্ষেত্রেই নয় শিক্ষক নির্বাচনে এমনকি বিদ্যালয়ের কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে যোগ্যতম বিবেচনায় লিঙ্গ বৈষম্য কখনও স্থান পায়নি এবাারের পিএসসি এবং জিএসসির প্রাপ্ত ফলাফল সেই সম্ভাবনারই নির্দেশক। ছাত্রছাত্রী ভর্তির ব্যাপারেও মেয়েরা সব সময়ে এগিয়ে থাকে। সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের নিয়ে তৈরি এই বৃহৎ প্রকল্প ‘সামছুদ্দিন নাহার ট্রাস্ট’ জ্ঞানচর্চা ছাড়াও স্বাস্থ্য সচেতন এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমৃদ্ধ আঙ্গিনায় সম্পৃক্তকরণে আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সময়ের মিছিলে শামিল করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় লেখাপড়ায় মনোযোগী যেমন হচ্ছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও তারা কোনভাবে পিছিয়ে থাকছে না। আর উন্নত প্রযুক্তিতে তাদের অব্যাহত অগ্রগামিতা নজরকাড়া। দেশের সমৃদ্ধ প্রতিবেশকে লালন করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভেতরের বোধকে জাগিয়ে তোলা থেকে শুরু করে বিশু পরিসরের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে আয়ত্তে আনাও তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের নিয়মিত পাঠ্যসূচী। এবারের পিএসসি ও জিএসসির বোর্ড পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর পাসের হার আশাব্যঞ্জকই শুধু নয় মেধা ও মনন বিকাশে তাদের প্রাপ্ত জিপিএর মানও চোখে পড়ার মতো। ২০০২ সালে ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি হওয়া এই নতুন বিদ্যানিকেতনের যাত্রাপথ খুব বেশি দিনের নয়। আর বোর্ড পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সমাপনী পর্বে অংশগ্রহণ ২০০৯ সালে পিএসসি, ২০১০ সালে জিএসসি এবং ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্পৃক্ত হওয়া। মাত্র ৫ বছরের অগ্রযাত্রায় স্কুলটির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফল সত্যিই দেখার মতো। পঞ্চম শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২২ জন। তার মধ্যে ১৪ জন মেয়ে আর ৮ জন ছেলে। সবাই পাস করে। ৬ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জনই মেয়ে এবং ২ জন ছেলে। যা পুরো বাংলাদেশের যথার্থ চিত্র। অপরাজিত প্রতিবেদক জেএসসিতে দুইজন কৃতি ছাত্রী এ ছাড়া জিপিএ-৪ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২। এখানেও ছাত্রীরা এগিয়ে, ৮ জন ছাত্রীর বিপরীতে ৪ জন ছাত্র। জিএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ২ জন- ছেলেরা কেউ পায়নি। জিপিএ-৪ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯- কাজল আক্তার যেখানে ৫ জন ছাত্রীর প্রতিকূলে ৪ জন ছাত্র। জিএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ২ জন- ছেলেরা কেউ পায়নি। কৃতি ছাত্রীরা হলেন- যুথি আক্তার কাজল আক্তার। জিপিএ-৪ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ যেখানে ৫ জন ছাত্রীর প্রতিকূলে ৪ জন ছাত্র। অর্থাৎ আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি উন্নয়নের বাংলাদেশ এখন অর্ধাংশ নারীকে নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে বিস্ময়কর এবং যুগের চাহিদা মেটানো। ভবিষ্যত বাংলাদেশ গড়তে নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব সুস্থ এবং আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে অন্যতম নিয়ামক শক্তি। পিএসসি এবং জিএসসি পরীক্ষার এই অভাবনীয় ফলাফল সারা বাংলাদেশের সচিত্র প্রতিবেদন। যেখানে শুধু ছেলেমেয়ের সমান পর্যায়ে আসা নয় শহর ও গ্রামের ফারাকও অনেকাংশে কমে গেছে। গ্রাম পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফলেও তার যথার্থ প্রতিচ্ছবি। গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোররা আজ শিক্ষার মতো আবশ্যকীয় সূচকে নিজেদের সাবলীল এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে শিক্ষা বিস্তারকে সর্বজনীন করতে হরেক রকম প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের মানবসম্পদ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগী করছে। উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যানিকেতন সরকার অনুমোদিত একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ট্রাস্টের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান। যেখানে অবৈতনিক শিক্ষা কার্যক্রমে হতদরিদ্র, পিছিয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের জীবন গড়ার বৃহৎ মহৎ ও বৃহৎ বিদ্যাচর্চাশ্রম। এখানে দেশীয় কৃষ্টি সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বিত হয় ঐতিহ্যকে পটভূমি, স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটই শুধু নয় আরও জোরালোভাবে যুক্ত করা হয় বিশ্বজনীনতার অপার সম্ভাবনা।
×