ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাছের মানুষকে নিজের করে নিলেন

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

কাছের মানুষকে নিজের করে নিলেন

চাঁদপুরবাসীর কাছের মানুষ : চাঁদপুরবাসীর কাছের মানুষ হিসাবেই তিনি পরিচিত। তিনি এমপি থাকাকালীন মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে বাঁচিয়েছিলেন চাঁদপুর সদর, হাইমচরের বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষকে। যিনি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হয়েও সাধারণের মতো জীবন-যাপন করেন। যিনি ধনী আর দরিদ্রের প্রার্থক্য না করে আপন করে নিয়েছেন সকলকে। মানুষের বিপদের কথা শুনলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন। একজন নারীর নাকি পথে পথে শত বাধা। কিন্তু কোন বাধাই যেন তার কাছে টিকে থাকতে পারল না। সাধারণের কাছে এক অসাধারণ মানুষ দীপু মনি। চাঁদপুরবাসী কেনই বা তাকে বেছে নিলেন। এমন প্রশ্ন হয়তো অনেকের মনে ঘুরপাক খেতেই পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যিনি সাধারণের মাঝে মিশে যেতে পারেন তাকে হারানোটা তো কষ্টেরই বটে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাঁদপুরবাসী বেছে নিলেন তাঁদের কাছের মানুষ দীপু মনিকে। তাঁরা ভেবেছেন বিগত দশ বছরে চাঁদপুরে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে দীপু মনিকেই ভোট দিয়ে জেতাতে হবে। এই দীপু মনি এক সময় ছিলেন দেশের সফল পররাষ্ট্র মন্ত্রী। ছিলেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যতম মুখপাত্র হিসাবে তিনি সারাদেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুনামও কুড়িয়েছেন। তরুণ প্রজন্মের খুব প্রিয় একজন নেত্রী হতে পেরেছেন তিনি। দশ বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ফলোআপ : চাঁদপুরে গত দশ বছরে বিপুল পরিমাণ উন্নয়ন করেছেন তিনি। যে কারণকে সাধারণ ভোটাররা বেশ প্রাধান্য দিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো, চাঁদপুরে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ ২৩৭ কি.মি. রাস্তা পাকাকরণ, ৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ, ফিশারিজ ইনস্টিটিউট নির্মাণ, আধুনিক মানের দুটি পানি শোধনাগার নির্মাণ, ৩০টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৭৫০টি ঘর নির্মাণ (যেখানে কিনা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে গৃহহীন মানুষেরা), ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন স্থাপন, ১৫৯টি সেতু/ কালভার্ট নির্মাণ, ১১টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও কম্পিউটার ল্যাব নির্মাণ, মেরিন একাডেমি নির্মাণ, পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ, নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ, আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ (প্রক্রিয়াধীন), সাড়ে দশ হাজার একর জমির ওপর অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করবেন যা কিনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা। ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ- সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এর আওতায় চাঁদপুরবাসী। লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইন সংস্কার, ৩২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ, ৫৩টি মাদ্রাসা ও কলেজের ভবন নির্মাণ। এত উন্নয়নের পরও সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি ভোটাররা মাথায় রেখেছেন তা হলো নদী ভাঙন রোধ। চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের জনগন তাই তাঁদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে তাকেই বেছে নিয়েছেন। নির্বাচনে ব্যতিক্রম ছিল তাঁর প্রচারণা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সরব ছিলেন তিনি। উন্নয়নের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে। তরুণরা বেশিরভাগই সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযুক্ত। আর তাই তাঁরা সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে সাদরে গ্রহণ করেছেন। প্রচারণার মাধ্যমে তিনি তাঁর দশ বছরের ক্ষমতায় থাকাকালীন উন্নয়নগুলোকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন। নির্ঘুম, বিরামহীন প্রচারণা : কি দিন, কি রাত, নির্বাচনকে ঘিরে যেন তাঁর ছিল না চোখে ঘুম। মানুষের ভালবাসা তাকে পেয়ে বসেছিল, আর তাইতো মানুষের কাছে বিরামহীন ছুটে গিয়েছেন তিনি। এমনিতেই মিষ্ঠভাষী হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে চাঁদপুরে তাঁর ওপর আবার ভালবাসা যে মানুষকে কতটা কাছে নিতে পারে সেটা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। অনেকটা এমন যে ‘ভালবাসা ভালবাসে শুধুই তাকে, ভালবেসে ভালবাসায় বেঁধে যে রাখে।’ সবারই তিনি আপা : ছোট কী বড়, মেঝো কী সেজো, সকলের কাছেই তিনি আপা নামে বেশ পরিচিত। সকলের মুখেই আপার গুণগান। দীপু আপা নামেই বেশ পরিচিত তিনি। এক সময় অন্ধকার ঘরে থাকা মেয়েটিও তাই আলোর মুখ দেখে প্রশংসার বুলি ছড়িয়েছেন তাঁর নির্বাচনী আসনে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে এখন চাঁদপুরের চরাঞ্চলগুলোর মানুষরা আলোর সন্ধান পেয়েছেন। জয়ের পর দীপু মনি বলেন : চাঁদপুরের জনগণ আমায় পুনরায় নির্বাচিত করায় প্রথমেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। চাঁদপুরবাসীর কাছেও কৃতজ্ঞ আমি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নমিনেশন দিয়ে পাঠিয়েছিলেন মানুষের সেবা করার জন্য। মানুষ আমাকে ভালবাসে তার প্রমাণ হলো, তারা আমাকে বিপুল ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। আমি নির্বাচনী প্রচারণার কালে সাধারণ মানুষের একান্ত কাছে গিয়ে তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার কথা শুনেছি। নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেকটি মানুষের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে আমি কাজ করব। তিনি আরও বলেন, ন্যায্য পরামর্শ যদি একজনও দেন সেটা আমি সাদরে গ্রহণ করব। ‘আমি কখনও কাউকে শত্রু মনে করি না। যা কিছু আমাকে পেছনে টেনে নিয়ে যাবে তাই আমার শত্রু।’ ‘সর্বদাই মুখে মিষ্টি হাসি লেগে থাকে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ এর ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয়া শিশুটিই আজকের দীপু মনি। দেশ-বিদেশ সবখানেই সমান আলো ছড়িয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। চাঁদপুর থেকে রাজধানী শহর সবখানেই তার রাজনীতির পদচারণায় মুখরিত। নিজের মুখেই বলেছেন, কখনও তিনি প্রতিহিংসার শিকার হননি। বেশ গুছালো কথা বলার ভঙ্গি। টানা তৃতীয় বারের মতো তিনি চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। হেভিওয়েট এমপির তালিকায় ও রয়েছেন তিনি।’
×