ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে ভাইরাস আক্রান্ত আখ ক্ষেত ॥ দিশেহারা কৃষক

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 চাঁপাইয়ে ভাইরাস আক্রান্ত আখ ক্ষেত ॥ দিশেহারা কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ চিনিকলের জোনভুক্ত না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আখ চাষীরা ও ব্যবসায়ীরা আখ মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই আখ মাড়াইয়ের সময়ে জেলায় এ বছর আখ ফলনে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় দিশেহারা কৃষক। কোন কোন জমিতে কৃষকের খরচই উঠবে না বলছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া আখের গুড়ের দামও কম হওয়ায় তেমন লাভ হচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। আখের জমিতে এ বছর ভাইরাসজনিত মড়ক রোগে ফলন হচ্ছে না। অনেক জমির আখ একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। শিবগঞ্জ উপজেলায় আখের চাষ হয়েছে এ বছর ৭ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। এ বছর আখের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ মেট্রিক টন। ফলন বিপর্যয়ের কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না বলে মনে করছেন চাষীরা ও কৃষি বিভাগ। গত বছর চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে। তবে আখের জমিতে রোগ বালায়ের কারণে ফসলের ক্ষতির বিষয়ে একমত বলছেন চাষী ও কৃষি বিভাগ। আর ফলন বিপর্যয়ের দোষ চাপাচ্ছেন একে অপরের ঘাড়ে। প্রায় অর্ধেক জমির ফলন বিপর্যয় হলেও কৃষি বিভাগ বলছেন মাত্র ১শ’ ৫০ হেক্টর আখ জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। জানা গেছে, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পুঠিমারী, পিয়ালিমারী বিলসহ অন্যান্য মাঠে হাজার হাজার একরের এই পুরো মাঠে রোগে আক্রান্ত হয়ে আখের জমির ফলন বিপর্যয় ঘটলেও দেখা মিলেনি কৃষি অফিসারদের। খোঁজও নেয়নি কৃষকদের বা ব্যবসায়ীদের কৃষি বিভাগ। ফলন বিপর্যয়ের কারণে কৃষকদের অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে। জেলায় এ বছর আখের চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় আখের চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। সদর ও গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রায় শতাধিক হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়। তবে এই ২ উপজেলার আখ মাড়ায় হয় না, এগুলো হাটে-বাজারে বিক্রি হয়। এ বছর আখের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ মেট্রিক টন। তবে আখের আগা কাটা রোগসহ নানা রোগ বালায়ের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া সম্ভব হবে না। কৃষক ও চাষী মাসুদ, সালাম, শামীমসহ অনেকেই বলছেন, এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৮ থেকে ২০ ঘানি গুড় হয়। কিন্তু এ বছর এক বিঘা জমিতে গুড় হচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৫ ঘানি। এক বিঘা জমিতে যেখানে ১৮ থেকে ২০ মণ গুড় হওয়ার কথা, সেখানে হচ্ছে ৪ থেকে ৫ মণ। এক বিঘা জমির আখের মূল্য ১৮ হাজার, ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। শত শত বিঘা জমির আখের জমিতে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় এক বিঘা জমিতে চাষী পাচ্ছে মাত্র ৫ হাজার টাকা, কোন জমি একেবারেই নষ্ট। অনেক ব্যবসায়ী অন্যের জমির আখ ক্রয় করে মাড়াই করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারাও পড়েছেন চরম বেকায়দায়। ফলন অনুমান করে আখের জমি ক্রয় করে উঠছে না কেনা দামও। আলাদা ও উন্নত জাতের আখ চাষের আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষকরা। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম আমিনুজ্জামান জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার পুঠিমারী, পিয়ালিমারী বিলসহ অন্যান্য মাঠে আখের চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে। এ বছর আখের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ মেট্রিক টন। তবে আখের আগা কাটা রোগসহ নানা রোগ বালায় এর কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া সম্ভব হবে না। আখ চাষের পাশাপাশি একই জমিতে আলু, রসুন, পেঁয়াজ ও ধনিয়া চাষ করার কারণে আখের জমিতে লাল পচা রোগ, মাজরা পোকার আক্রমণ ও উইল্ট রোগের প্রভাব এবং রোগ বালায়ের প্রকোপ বেশি হয়।
×