ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণার অভিযোগে ব্রিটেনে পাঁচ বাংলাদেশীর জেল

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

  প্রতারণার অভিযোগে ব্রিটেনে পাঁচ বাংলাদেশীর জেল

ফিরোজ মান্না ॥ প্রতারণার অভিযোগে পাঁচ বাংলাদেশীকে ৩১ বছর জেল দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত। তাদের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে ব্রিটেনের পুলিশ। জাল ভিসার মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনে অবস্থানকারী অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার কাজ করেছে। বাংলাদেশী আবুল কালাম মুহাম্মদ রেজাউল করিমের (৪২) নেতৃত্বে চক্রটি এমন কাজ করে আসছিল। তারা বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশীদের নকল ‘ডকুমেন্ট’ তৈরি করে দিত। সেসব ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে ভিসা আবেদন করা হতো। এসব অভিযোগে ওই চক্রের ৫ সদস্যকে মোট ৩১ বছরের জেল দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত। সম্প্রতি লন্ডনের অনলাইন টেলিগ্রাফ তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আবুল কালাম লন্ডনে আইনের ছাত্র। সে চক্রটি গড়ে তুলেছে। প্রতিষ্ঠা করেছে কমপক্ষে ৭৯টি ভুয়া কোম্পানি। এ ছাড়া ৬ বছরে এইচএম রেভেন্যু এ্যান্ড কাস্টমস (এইচএমআরসি) থেকে প্রতারণার মাধ্যমে তারা দাবি করেছে এক কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড। তদন্ত কর্মকর্তারা আবুল কালাম মুহাম্মদ রেজাউল করিম, তার শ্যালক এনামুল করিম, কাজী বরকত উল্লাহ, হিসাবরক্ষক জলপা ত্রিবেদী ও মোহাম্মদ তমিজ উদ্দিন চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করেন। যেসব অভিবাসী তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ব্রিটেনে অবস্থান করতে চান তাদের অস্থায়ী ভিসা তৈরি করে দিয়েছে। একটি জাল ভিসা তৈরি করতে প্রতিজনের কাছ থেকে তারা আদায় করেছে ৭ শ’ পাউন্ডের বেশি। অবৈধ বাংলাদেশীদের খুঁজে বের করার জন্য তারা দালালও নিয়োগ করেছিল। দালালদের বেতনও ভুয়া স্লিপের মাধ্যমে দিতেন। ৯শ’র বেশি ভিসা আবেদনে ভুয়া তথ্য দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে টায়ার-১ ভিসা নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করেছে ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্টের ক্রিমিনাল এ্যান্ড ফিনান্সিয়াল ইনভেস্টমেন্ট (সিএফআই) টিম। তারা এ যাবত এ খাতে যেসব অপরাধ দেখতে পেয়েছে তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। গত বছরের ২৩ নবেম্বর অভিযুক্তদের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে দ-িত করা হয়েছে। এর মধ্যে রেজাউল করিম, এনামুল করিম ও বরকত উল্লাহকে শাস্তি দেয়া হয়েছে তাদের অনুপস্থিতিতে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে প্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। রেজাউল করিমকে দেয়া হয়েছে ১০ বছর ৬ মাসের জেল। এনামুল করিমকে দেয়া হয়েছে ৯ বছর ৪ মাসের জেল ও বরকত উল্লাহকে দেয়া হয়েছে ৫ বছর ১০ মাসের জেল। ত্রিবেদীকে দেয়া হয়েছে তিন বছর ও তমিজউদ্দিনকে দেয়া হয়েছে আড়াই বছরের জেল। পৃথক মেয়াদে শাস্তির পরিমাণ মোট ৩১ বছর। একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের দালালচক্র দেশ থেকে কোন রকমে কাগজপত্র তৈরি করে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দেয়। ব্রিটেনে যাওয়া স্বপ্ন দেখা তরুণরা ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা দালালচক্রের হাতে তুলে দেন সরল বিশ্বাসে। দালালরা পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশী আবুল কালাম মুহাম্মদ রেজাউল করিমের কাছে। সেখানে বাংলাদেশী তরুণদের ভুয়া কোম্পানির নকল ডকুমেন্ট তৈরি করে দিত। এরপর তাদের দিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করাতো। এভাবে বেশ কিছু তরুণ বৈধতাও পেয়েছেন। পরের দিকে বিষয়টি ইমিগ্রেশন বিভাগের সন্দেহ হয়। তারা অনুসন্ধান করতে থাকে আবুল কালামকে। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান কাজ শেষ করার পর ওই চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। বাকি দুই জনকে পুলিশ এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় সাইনবোর্ড লাগানো আছে ‘আপনি কি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপের যে কোন দেশে যেতে চান-তাহলে আজই যোগাযোগ করুন’। এসব সাইনবোর্ডের নিচে লেখা থাকে ভিসা প্রসেসিংযে অভিজ্ঞ ‘ল ইয়ারের’ নাম। মানুষ সরল মনে বিশ্বাস করে তাদের কাছে গেলেই কথার মারপ্যাঁচে তাদের আটকে ফেলে। তখন তারা বাবা মার কাছ থেকে দাবি অনুযায়ী টাকা এনে তাদের হাতে তুলে দেয়। টাকা পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় ভোগান্তি। আজ না কাল ভিসা হয়ে আসছে। এমন কথা শুনতে শুনতে এক সময় অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। যারা যেতে পারেন তারা সেখানে কয়েক দিনের মধ্যে অবৈধ হয়ে পড়েন। পরে তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের দালাল চক্র কব্জায় নিয়ে নেয়। সেখানেও মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। টাকা দিতে না চাইলে তাদের অত্যাচারও করা হয়। বাংলাদেশের দালাল চক্রের সঙ্গে তাদের বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে।
×