ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মইনুল হোসেনকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে চিকিৎসার নির্দেশ

নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের ফের শুনানি ১৩ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের ফের শুনানি ১৩ জানুয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে নারী সাংবাদিককে কটূক্তি করার মানহানির মামলায় গ্রেফতারকৃত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এনে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালত এ আদেশগুলো প্রদান করেছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ জানুয়ারি। পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত আদালতের ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান এ আদেশ প্রদান করেন। এদিকে আদালতে কার্যক্রম শেষে খালেদা জিয়া বেরিয়ে যাওয়ার সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন আমার বলার কিছু নেই। তিনি আর কোন মন্তব্য করেননি। অন্যদিকে আদালতের জায়গা কম হওয়াতে খালেদা জিয়া অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারককে বলেন, এত ছোট জায়গায় মামলা চলতে পারে না। এখানে আমাদের কোন আইনজীবী বসতে পারেন না। এখানে মামলা চললে আমি আর আদালতে আসব না। আমাকে সাজা দিলে দিয়ে দেন। নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানি উপলক্ষে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সোয়া ১২টার দিকে হুইল চেয়ারে সাদা শাড়ি ও গোলাপী ওড়না পরে আসেন খালেদা জিয়া। দুপুর ২টায় শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মামলা চলছে সেই কক্ষের বিষয়ে আদালতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বিচারকের উদ্দেশে বলেন, এত ছোট জায়গায় মামলা চলতে পারে না। এখানে আমাদের কোন আইনজীবী বসতে পারেন না। এখানে মামলা চললে আমি আর আদালতে আসব না। এখানে আইনজীবীদের গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আপনারা সাজা দিলে দিয়ে দেন, তাও আমি এ আদালতে আসব না। হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করার সময় ভোগান্তির শিকার হন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি বলেন, রাস্তা ছেড়ে দেন। এত লোক কেন? জজের সামনে এত লোক তো থাকার কথা নয়। এত লোকই যদি থাকে, তা হলে আদালতের জায়গা এত ছোট কেন? মওদুদ আহমদ বিচারকের উদ্দেশে বলেন, আমরা বারবার বলেছি- এ জায়গায় এ্যাকোমোডেশন করা হয় না। এখানে কষ্ট হয়। ব্যারিস্টার মওদুদের কথার সঙ্গে যোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, আদালতে এত লোক থাকলে তাদের বসতে দিতে হবে। আমি বলতে চাই, এ রকম সংকীর্ণ জায়গায় কোর্ট চলতে পারে না। জবাবে আদালত বলেন, আগামী কোর্টে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হবে। তখন খালেদা জিয়া আবারও বিচারককে বলেন, ব্যবস্থাই শুধু করার কথা বলা হয় কিন্তু করা হয় না। এর উত্তরে বিচারক বলেন, আমি নতুন এসেছি। এখানে আজ আমার প্রথম কোর্ট। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। এরপর আদালতে শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে এফবিআইয়ের প্রতিবেদন ও আসামিপক্ষের দরখাস্ত আদালতে নথিভুক্ত করা হয়। নতুন বিচারক আসায় রাষ্ট্রপক্ষের চার্জ শুনানি নতুন করে শুরু হয়। এদিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আলাদা আবেদন জানালে আদালত তা খারিজ করে দেন। শুনানির শুরুতেই দুদকের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। পরে এর বিরোধিতা করে আসামি মওদুদ আহমদ নিজেই তার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন। বেলা বারোটার পর মামলার শুনানি শুরু হয়। দুপুর ২টায় শুনানি শেষে বিচারক এজলাস থেকে নেমে গেলে খালেদা জিয়া তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে ১০ মিনিট কথা বলেন। এর পরপরই খালেদা জিয়াকে আবারও নেয়া হয় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের কক্ষে। এ সময় সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কোন কথারই জবাব দেননি। শুধু নির্বাচন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে কিছু বলার নেই বলে জানান। এর আগে বেলা সোয়া ১২টার দিকে হুইল চেয়ারে করে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত আদালতের এজলাসে আসেন খালেদা জিয়া। চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ ॥ নারী সাংবাদিককে কটূক্তি করার মানহানির মামলায় গ্রেফতারকৃত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এনে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ব্যারিস্টার মইনুলের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন মোঃ মাসুদ রানা। এর আগে গত ১০ নবেম্বর বিশেষায়িত হাসপাতালে ব্যারিস্টার মইনুলের চিকিৎসা ও রংপুর আদালতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। মইনুল হোসেনের স্ত্রী এ রিট দায়ের করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে রংপুর কারা কর্তৃপক্ষ ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মইনুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। যার ধারাবাহিকতায় গত ২৯ নবেম্বর বোর্ড গঠন করে মইনুলকে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর পুনরায় মইনুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাইকোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
×