ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্যে বিপন্ন শ্রমিক

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 মধ্যপ্রাচ্যে বিপন্ন শ্রমিক

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারের সুদিন আর নেই। বরং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেরাই এখন সমূহ সঙ্কটে। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের জন্য সর্ববৃহৎ ও আকর্ষণীয় শ্রমবাজার সৌদি আরব বর্তমানে নানা বিপদের সম্মুখীন। একদিকে প্রতিবেশী ইয়েমেনের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, অন্যদিকে সাম্প্রতিক ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার দায় নিয়ে সমূহ বিপাকে পড়েছে দেশটি। কুয়েত ও ইউএই-র অবস্থাও তেমন ভাল না। অন্যদিকে কাতারের ওপর এক তরফা অবরোধের ফলে প্রতিটি দেশই রয়েছে রাজনীতি-অর্থনীতিসহ নানা টানাপোড়েনের মধ্যে। মাত্রাতিরিক্ত বিদেশী শ্রমিক নির্ভরতা স্বভাবতই তাদের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সৃষ্টি করছে বাড়তি চাপ। অতঃপর শ্রম নির্ভরতা কমাতে তাড়া এখন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদেশী শ্রমিক বিতাড়নে। সৌদি আরব কিছুদিন আগে থেকেই প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য। দোকানপাট ইত্যাদি। এসব কাজের সুযোগ তারা করে দিতে চাইছে স্বদেশের নাগরিকদের বিকারত্ব ঘোচাতে। ফলে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ফেরত আসতে বাধ্য হবে দেশে। ভারত, পাকিস্তান, মিসরের নাগরিকদেরও অনুরূপ অবস্থা হবে। ভালো নয় কুয়েতের অবস্থাও। সেদেশে এখন শ্রমিকের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। অথচ কুয়েতের জনসংখ্যা মাত্র ১৪ লাখ। দেশটির জনগণ প্রবাসীর সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছে। আগামী ৭ বছরে তারা তা বাস্তবায়ন করবে। ফলে এর অনিবার্য শিকার হবে বাংলাদেশী শ্রমিকরা। অনুরূপ অবস্থা বিরাজ করছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও ক্ষতবিক্ষত অর্থনীতি কবলিত মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই। অথচ এসব হতভাগ্য শ্রমিক সব হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হলে দেশের অবস্থা কি হবে, সে বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের তেমন চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না। বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির সুসংবাদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, ২০১৭ সাল ছিল প্রবাসী আয় বৃদ্ধির এক উজ্জ্বল বছর, যা অব্যাহত থাকতে পারে ২০১৮ সালেও। গত বছর সারা বিশ্বে প্রবাসী আয় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ, যার পরিমাণ ৪৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছর এর পরিমাণ বাড়তে পারে আরও চার শতাংশ। এর ফলে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলো উপকৃত এবং উন্নত হচ্ছে। রেমিটেন্স প্রবাহের তালিকায় শীর্ষে আছে ভারত, দ্বিতীয় চীন, তৃতীয় ফিলিপিন্স ও চতুর্থ মেক্সিকো। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম, দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। তবে এও সত্য যে, এই অবস্থা আর বেশিদিন থাকবে না। কেননা উন্নত বিশ্বে দক্ষ ও প্রযুক্তিভিত্তিক জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে উন্নত শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকের স্থান দখল করে নিচ্ছে রোবট ও কম্পিউটার। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। দেশেই তৈরি করতে হবে দক্ষ মানবসম্পদ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। তদুপরি আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক, অভিবাসন পরিস্থিতিসহ আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই নাজুক। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অতঃপর চাই অবকাঠামো উন্নয়ন। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমজীবীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
×