ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচন কমিশনে ঐক্যফ্রন্টের স্মারকলিপি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 নির্বাচন কমিশনে ঐক্যফ্রন্টের স্মারকলিপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের স্মারকলিপি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার কাছে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি প্রদান শেষে ইসির মিডিয়া সেন্টারে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের নামে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনের ফলকে প্রত্যাখ্যান করেছি। ফল বাতিল করে আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেছি। একেবারে তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে যে অনিয়মগুলো হয়েছে, নির্বাচনে জনগণের যে বিশ্বাসঘাতকতা প্রতারণা করা হয়েছে তার তথ্য প্রমাণ নিয়ে এসেছি। যেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন সেখানে কারচুপি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সেগুলোতেও ডাকাতি হয়েছে, তবে তারা কুলিয়ে উঠতে পারেনি। পরে সাংবাদিকদের স্মারকলিপি পড়ে শোনান মির্জা ফখরুল। স্মারকলিপিতে তারা অভিযোগ করেন নির্বাচনের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সহায়তার আওয়ামী লীগের কর্মী ও সন্ত্রাসী বাহিনী ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। তিনি তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের ভেটিংকরণ ও হয়রানি, দলীয় মনোনয়নে বাধা প্রদান, মনোনয়নপত্র বাছাই এবং আপীলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের রহস্যজনক ভূমিকা, গায়েবি মামলা, গ্রেফতার হয়রানি ও নির্যাতন, প্রার্থীদের গ্রেফতার ও ‘অন্যায়ভাবে’ আটক, দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের নিরুৎসাহিত করা, বিশেষ করে বিদেশী পর্যবেক্ষকদের আসতে না দেয়া, প্রচারে বাধা প্রদান এবং সরকারের সাজানো প্রশাসন ও পুলিশের রদবদল না করে তাদের অধীনে নির্বাচন করার বিষয়ে কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, দীর্ঘ দশ বছর ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আবারও বঞ্চিত করার দায় নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে। ভোটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সহায়তায় আওয়ামী কর্মী ও সন্ত্রাসী বাহিনী ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ও আশপাশের মোড়ে সরকারী লাঠিয়াল বাহিনী মহড়া দেয় এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব পর্যায়ের সদস্যদের কাছে সহযোগিতা চাইলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেয়া, পোলিং এজেন্টদের মারধর, হয়রানি, গ্রেফতার ভোটের আগের রাতে প্রিসাইডিং অফিসারদের ভোট কাটতে বাধ্য করা, সারাদেশে জালভোটের মহোৎসব চললেও দেশের কোথাও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ভোট সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কোন স্তরেই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ঐক্যফ্রন্টের দাবি না মানা হলে পরবর্তীতে কি ধরনের কর্মসূচী দেয়া হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা জানানো হবে। এই নির্বাচনে এটাই প্রমাণিত হলো যে, ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করেছিলাম, সেটাই সঠিক। দলীয় সরকারের অধীনে কখনই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। অনতিবিলম্বে নির্বাচন বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি জানিয়েছি স্মারকলিপিতে। এরই মধ্যে নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ হয়েছে, সংসদ সদস্যদের শপথও হয়েছে। এ রকম অবস্থায় সরকারের কাছে না গিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কেন এলো ঐক্যফ্রন্ট এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ইসিই তো নির্বাচন করেছে। তাদের কাছে আমাদের দাবি জানালাম। এরপর আমরা অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ইসি কী বলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্মারকলিপি দিতে এলেও কমিশনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন কথা হয়নি। তারা শুধু স্মারকলিপি জমা নিয়েছে। তারা কী বলবে ? তাদের তো কোন কথা নেই। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা শপথ নেবেন কিনা, জানতে চাইলে মুখপাত্র ফখরুল বলেন, শপথের প্রশ্ন আসে কেন। আমরা তো ফলই প্রত্যাখ্যান করেছি। মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে এ সময় ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু।
×