ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার না বিরোধী দলে সিদ্ধান্ত হয়নি, এরশাদও শপথ নেননি

নাটকের শেষ অঙ্ক মঞ্চস্থ হচ্ছে জাপায়

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 নাটকের শেষ অঙ্ক মঞ্চস্থ হচ্ছে জাপায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনের পরও এরশাদের দল জাতীয় পার্টিতে নাটক শেষ হয়নি। সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের শপথ নেয়া ও সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচনসহ সরকারী দল না বিরোধী দলে জাপার অবস্থান হবে এই তিন ইস্যুতে নাটকের সর্বশেষ অংশ মঞ্চস্থ হচ্ছে। নির্বাচনের পর তিন দফা বৈঠক করেও জাতীয় পার্টি সরকারী দল নাকি বিরোধী দলে থাকবে এ ব্যাপারে দলটি অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি। তবে তিনটি বৈঠকই হয়েছে এরশাদের অনুপস্থিতিতে। তাই সিদ্ধান্তহীনতায় জাপার শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনের পর বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হয়। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত ২২ সদস্যের মধ্যে ২১ জন শপথ নেন। আসেননি এরশাদ। সকালে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় বিকেল তিনটায় শপথ নেবেন বারবার মত পাল্টানো নেতা হিসেবে পরিচিত এরশাদ। বিকেলে আবারও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি আজ শপথ নিচ্ছেন না। আগামী তিন থেকে চারদিনের মধ্যে এরশাদ শপথ নিতে পারেন। অথচ বৃহস্পতিবার দিনভর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের নিজ বাসাতেই ছিলেন তিনি। সাক্ষাত দিয়েছেন শুভাকাক্সক্ষীদের। কিন্তু শপথ নিতে সংসদে আসেননি তিনি। মহাজোটের আসন বণ্টন ইস্যুতে দূরত্ব তৈরির পর এখনও মান ভাঙ্গেনি শিশুর মতো আচরণ করা ৮৮ বছর বয়সী এরশাদের। কে হবেন সংসদ নেতা ॥ দশম জাতীয় সংসদে ৩৪ আসন নিয়ে বিজয়ী হয়েছিল এরশাদের দল। সংরক্ষিত মিলিয়ে ৪০ আসন নিয়ে জাপা বিরোধী দল গঠন করে। প্রধান বিরোধী দলের নেতা নির্বাচন করা হয়েছিল এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে। এবারের নির্বাচনে আসন বণ্টন ইস্যুতে দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ ও জাপার মধ্যে দেন দরবার চলে। শেষ পর্যন্ত ২৯টি আসন পায় জাপা। এর মধ্যে ২২টিতে দলের নেতারা নির্বাচিত হয়। এর মধ্যে এক মাসের বেশি সময় এরশাদকে রহস্যজনক কারণে সবকিছু থেকে আলাদা রাখা হয়। নির্বাচন ও দলের সংসদ সদস্যদের শপথ শেষে এখন আলোচনা একটাই জাপায় সংসদীয় দলের নেতা কে হচ্ছেন। এরপর বিরোধী দলের নেতার বিষয়টিতো রয়েছেই। তাছাড়া এরশাদের অনুপস্থিতিতে ভাই জিএম কাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন জাপা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে তিন দিন আগে এরকম চিঠি দেয়ায় নির্বাচন পরবর্তী দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সংকট আরও বেড়েছে বলছেন নেতাদের অনেকেই। রওশন এরশাদই থাকবেন নাকি জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে নতুন মুখ দেখা যাবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি দলটির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। তাছাড়া দশম সংসদের মতো এবারও দলটিকে বিরোধী দলের ভূমিকায় দেখা যাবে কি না, সে সিদ্ধান্তেও পৌঁছাতে পারেননি তারা। বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। বৈঠকটি কার্যত কোন প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সংসদ কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন জাতীয় পার্টির সাংসদরা। বৈঠক শেষে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দলটির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে দলের অবস্থান ও দলনেতা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে জি এম কাদের বলেন, আজকেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনে পার্টিতে একটা মিটিং আছে, সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। কবে সেই বৈঠক হবে, সে প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। গত বুধবার বনানীতে এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর দলের পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসে দলের অবস্থান নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক গতিপথ জানতে চেয়ে সাংবাদিকরা বৃহস্পতিবার ছেঁকে ধরেন রাঙ্গাকে। রাঙ্গা বলেন, সরকার ও বিরোধী দল কোথাও থাকতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে আমাদের দলের সংসদ সদস্যদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে আমরা মহাজোটের সঙ্গেই থাকব। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান দশম সংসদের এই প্রতিমন্ত্রী। গত রবিবার অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে বিজয়ী হয়েছে, জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২টি আসন। রাঙ্গা বলেন, দেশের মানুষ ২৮৮টি আসনে মহাজোটকে জয়ী করেছে। তার মানে ধরে নিতে হবে, মানুষ বড় ধরনের বিরোধী দল চায় না। মহাজোট সরকারের উন্নয়নে তারা সন্তুষ্ট। সে কারণেই তারা মহাজোটকে এতগুলো আসনে জয়ী করেছে। মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে। সেখানে জাপা সরকারী দলে নাকি বিরোধী দলে থাকবে এমন আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এরপর জানানো হয়েছিল বুধবার দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম ও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। বৈঠকে অধিকাংশ নেতা সরকার ও বিরোধী দলে থাকার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তারপর জানানো হয় বৃহস্পতিবার সংসদীয় দলের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। হয়নি। জানা গেছে, মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, মহাসচিব পরিবর্তন, কম আসনে নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা, জোর করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো এসব ইস্যুতে বেজায় বেজার জাপা চেয়ারম্যান। তাই ইচ্ছা করেই দূরে থাকছেন তিনি। এজন্য কোন কিছুতেই সুরাহা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। শপথ নেননি এরশাদ বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের দিনে জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির ২২ সদস্যের মধ্যে ছিলেন নাম কেবল এরশাদ। অসুস্থ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিকেলে স্পীকারের কক্ষে শপথ নেবেন বলে সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছিল। তবে বিকেলেও এরশাদ শপথ নিচ্ছেন না বলে তার ছোট ভাই ও পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিন চার দিনের মধ্যে তার শপথ নেয়ার কথা রয়েছে। তা না হলে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই শপথ নেবেন পার্টির চেয়ারম্যান। এরশাদ নির্বাচনের আগে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছেন। এর আগে ছিলেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। রংপুরের যে আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, সেখানে ভোট দিতেও যাননি তিনি। নির্বাচনী প্রচারেও নিজের এলাকায় যাননি এরশাদ।
×