ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাইবার ক্রাইম রোধে এটা জরুরী হয়ে পড়েছে’

নতুন বছরে ই-পুলিশ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 নতুন বছরে ই-পুলিশ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে সরকার

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ‘ই পুলিশ’ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে সরকার নতুন বছরে। পুলিশ বাহিনী বদলে ফেলার এই উদ্যোগ নিয়েছে নতুন সরকার। পুলিশের আধুনিকায়নে উন্নত-আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মেলাতে ই পুলিশ সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ই-সেবা সংক্রান্ত এ্যাপ্লিকেশনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হোস্টিং করা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশের সঙ্গে তাল মেলাতেই ই পুলিশ সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকলে মানুষ ভাল থাকে। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ে, অর্থনৈতিভাবে দেশ এগিয়ে যায়। এ জন্য নতুন বছরে নতুন সরকার পুলিশ বাহিনী আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, পুলিশ বাহিনীতে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ই পুলিশ সিস্টেম চালুর প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আগামী জুন থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ই-সেবা সংক্রান্ত এ্যাপ্লিকেশনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হোস্টিং করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ডাটা স্টোরেজের জন্যও তা ব্যবহার করা যাবে। এতে ডাটা স্টোরেজে অধিকতর দক্ষতা অর্জন এবং তা নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সাইবার ক্রাইম। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, ক্রাইম প্যাটার্ন এ্যানালাইসিস ও সিসিটিভি নজরদারি প্রভৃতি ই-পুলিশিং সেবা দেয়া এবং সেবাগুলোর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করে মন্ত্রণালয়। বিষয়টি পুলিশের আইসিটি মাস্টার প্ল্যান ’২০-এর বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানায়, অপরাধ এবং অপরাধবিষয়ক তথ্যসহ অন্যান্য পুলিশী তথ্য এবং আইটি এ্যাপ্লিকেশনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য হোস্টিং সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বাংলাদেশ পুলিশের আইসিটি কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৫-২০ বাস্তবায়নের অপরিহার্য অংশ ‘কার্যকর আইসিটি অবকাঠামো’ নিশ্চিতকরণ, আইসিটি বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তথ্য ও এ্যাপ্লিকেশন নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কেন্দ্রীয় এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, বিভিন্ন পুলিশী এ্যাপ্লিকেশনে সাইবার হামলা বা হুমকি রোধ ও হ্রাস, বিভিন্ন ধরনের আইসিটি অবকাঠামো ও এ্যাপ্লিকেশন যেমন- ইআরপি, সিএমডিএস এবং ডায়াল-১০০ ইত্যাদির অধিকতর কার্যকারিতা এবং সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চাহিদামাফিক আইটি উদ্যোগের জন্য ডিজিটাল কম্পিউটিং এবং স্টোরেজ সুবিধা দিতেই ই-পুলিশ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। যাতে পুলিশ বাহিনী আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কারও থেকে পিছিয়ে না থাকে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একটি ক্রমবর্ধমান মোবাইল, অনলাইন ও সাইবার পরিবেশে ঢুকেছে। ক্রমবর্ধমান অপরাধের তথ্য নিরাপদ পরিচালনা ও সংরক্ষণ করা পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যমান ডাটা সেন্টারে জরুরী পুলিশী সেবা দেয়ার জন্য পুলিশ য়েবসাইটসহ ৩৬ এ্যাপ্লিকেশন চালু আছে। এতে কোন অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা সিস্টেম নেই। সিঙ্গেল ডিস্ট্রিবিউশন পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেম থাকায় অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকলে অনলাইন পুলিশী কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। বর্তমানে ডাটা সেন্টার শুধুমাত্র সাধারণ স্টোরেজ সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সাইবার এ্যাটাক প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের কাজে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান ডাটা সেন্টারের ধারণক্ষমতা ও ডাটা নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্যই ই পুলিশ সিস্টেমের এই উদ্যোগ। অতিরিক্তি আইজিপি মোঃ মোখলেসুর রহমান বলেন, সরকার পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাহিনী হিসেবে দেখতে চায়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই পুলিশের পেছনে ব্যয় করাটাকে ইনভেস্ট মনে করেন। ফলে পুলিশ বাহিনীর ইত্যাকার সমস্যা সমাধানে তিনি গত ১০ বছর ধরে একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। ফলে পুলিশ আজ একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের ফলে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছে- এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকলে দেশের মানুষ ভাল থাকে। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ে। দেশ অর্থনৈতিভাবেও এগিয়ে যায়। সিআইডি পুলিশের ডিআইজি লুৎফর রহমান ম-ল বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রোধ ও মনিটরিংয়ে পুলিশ সদর দফতরে এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে যুক্ত করা হয়েছে সাইবার ইউনিট। সাইবার ইউনিট সদস্যরা ডিজিটাল ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা (সিআইডি) ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়ে হয়ে দাঁড়িয়ে। সিআইডি পুলিশের একের পর এক অভিযানে প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে গেছে। সিআইডির পুলিশ সুপার (এসএস-অর্গানাইজড ক্রাইম) মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের মাস্টারমাইন্ডসহ কমপক্ষে ২০ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। ফলে তাদের নেটওয়ার্কে ধস নেমেছে। তারা আর আগের মতো প্রশ্নফাঁস করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, এমন কোন পরীক্ষা নেই যে প্রশ্নফাঁস হতো না। গুটিকয়েক জালিয়াত জাতিকে মেধাশূন্য করে দিচ্ছিল। ভবিষ্যতে আর কেউ এমন দুঃসাহস দেখানোর সাহস পাবে না। যারা এখনও ধরা পড়েনি তাদের বিরুদ্ধে সিআইডি পুলিশের অভিযান চলমান আছে। ডিএমপির ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান বলেন, পুলিশ বাহিনীর প্রযুক্তিগত লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অপরাধের ধরন বদলেছে। আন্ডার ওয়ার্ল্ডে নেই আগের সেই টপটেরর যুগ। দুর্ধর্ষ অপরাধীদের সদর্প পদচারণা নেই। তবে আধিপত্য বিস্তারে আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি কমেছে। কিন্তু বাড়ছে ডিজিটাল ক্রাইম। ফলে পাল্লা দিয়ে বদলে ফেলা হচ্ছে পুলিশ বাহিনীকেও। পুলিশ বাহিনী এখন অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বাহিনী। ডিজিটাল ক্রাইম যেমন বাড়ছে- সাইবার ক্রাইম সেন্টার গঠনের উদ্যোগ নেয়ার পাশপাশি ই-পুলিশ সিস্টেম চালু হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীতে ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে অনলাইন ভিত্তিক সেবামূলক কার্যক্রম। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ৯৯৯ এ কল দিয়ে যেকোন তথ্য ও আইনী সহায়তা নিতে পারছে দেশের মানুষ।
×