ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

নির্বাচন ঘিরে, বাপরে বাপ, কত যে কান্ড! উত্তাপ। উৎকণ্ঠা। সংশয়-সন্দেহ। মনোনয়ন। মনোনয়ন বাণিজ্য। দলীয় কার্যালয় ভাংচুর। প্রতিপক্ষের সঙ্গে ঠোকাঠুকি। ৩০ তারিখের পর দেখে নেব। দেখিয়ে দেব। হুমকি ধমকি। গর্জন। প্রেসকনফারেন্স। আমার ভাই তোমার ভাই। ফুলের মতো পবিত্র। ভোট চাই। দোয়া চাই। পোস্টার। পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না। ঘটনার ঘনঘটা। এবং অতঃপর গত রবিবার অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। বিএনপি ও তাদের ঐক্যফ্রন্ট মাত্র সাতটি আসন পেয়েছে। সারাদেশের মতো ঢাকায়ও চলছে ফলাফল বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের চিরতরে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি অগ্নিসন্ত্রাসকে ‘না’ বলে দিয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে জনগণ। আবার বিরোধী পক্ষের লোকেরা চরম হতাশ। নির্বাচনে ভরাডুবির পর কারচুপির অভিযোগ করছেন তারা। এ অবস্থার মধ্যে বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের বিজয়ীরা। বিপুল বিজয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। কারা মন্ত্রী হবেন? নতুন কে কে? পুরনোদের মধ্য থেকে কারা থাকবেন? বাদ যাবেন কারা? কৌতূহলের শেষ নেই। কানাঘুষাও অনেক। যে যার মতো মন্ত্রী বানাচ্ছেন। বাদ দিচ্ছেন। তবে প্রকৃতটা জানা যাবে আগামী সোমবার। এদিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের কথা রয়েছে। এদিকে, নির্বাচন শেষ হলেও প্রার্থীদের টানানো পোস্টার এখনও অপসারণ করা হয়নি। প্রধান প্রধান সড়কের কিছু পোস্টার সরানো হয়েছে বটে। গলির ভেতরে লাগানো পোস্টার আগের মতোই আছে। বৃহস্পতিবার মনিপুরীপাড়ার একটি গলিতে ঢুকে দেখা গেল, পোস্টার টানানো রশি নুইয়ে নিচে নেমে এসেছে। হাঁটার সময় পথচারীদের মাথায় লাগছে। বাতাসে এলোমেলো ঝুলতে থাকা পোস্টার খসে পড়ছে মাঝে মাঝেই। এভাবে নোংরা হচ্ছে রাস্তা। ম্যানহোলের মুখে পড়ছে। মগবাজার, ইস্কাটনসহ কয়েকটি এলাকার ফ্লাইওভার এবং ফুটওভারব্রিজে পোস্টার লাগানো হয়েছিল। সেগুলো রোদে পুড়ে শিশিরে ভিজে বিচ্ছিরি চেহারা পেয়েছে! পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, মিরপুরের দেয়ালজুড়ে পোস্টার। এমনকি লাইটপোস্ট বিদ্যুতের খুঁটিতে পোস্টার সাঁটা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দল ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে এগুলো অপসারণের কোন উদ্যোগ নেই। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পোস্টার অপসারণের কাজ শুরু করছে। দক্ষিণ সিটির ৫৭টি এলাকায় একযোগে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে চলছে পোস্টার ও নির্বাচনী প্রচারে সামগ্রী অপসারণের কাজ। দক্ষিণে বুধবার মেয়র সাঈদ খোকন আনুষ্ঠানিকভাবে পোস্টার অপসারণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। পুরান ঢাকার সুরিটোলা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে লাগানো কয়েকটি পোস্টার অপসারণ করেন তিনি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সব পোস্টার অপসারণ সম্ভব হবে বলে আশা তার। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পোস্টার অপসারণে বিশেষ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে বাঁশ ও কাঠের বিভিন্ন কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল। এগুলোও অপসারণ করা হয়নি। আদাবর এলাকার বাসিন্দা জনৈক আমিনুল ইসলাম অবশ্য অন্য কথা বললেন। তার মতে, বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানুষের কোন রুচি নেই। নিজের ঘর সকাল-বিকেল পরিষ্কার করেন। বাইরে এসে ভুলে যান সব। নিজের শহর নিজেই নোংরা করে। একটুও খারাপ লাগে না। তিনি বলছিলেন, এ অবস্থায় নির্বাচনী পোস্টার অপসারণ হোক বা না হোক তাতে কিছু যাবে আসবে না। ঢাকার মানুষের রুচি উন্নত হওয়া জরুরী। সবার সচেতন ও সম্মিলিত প্রয়াসেই কেবল পরিচ্ছন্ন সুন্দর নগরী সম্ভব। অবশ্য সচেতনতা সৃষ্টির কিছু উদ্যোগ মাঝে-মধ্যে চোখে পড়ছে। এই যেমন বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী বাস স্ট্যান্ডে ‘আমরা যদি শুরু করি, বদলে যাবে ঢাকার ছবি’ শীর্ষক কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচী থেকে আগামীর শহর কেমন হওয়া চাই তার ছবি আঁকেন আয়োজকরা। তাদের স্লোগানে বলা হয়Ñ ‘আমার শহর আমার দেশ, গড়বো মোরা বাংলাদেশ’। এই স্লোগান সামনে রেখে এলাকার সড়কের পাশের বিভিন্ন দেয়ালে বাসযোগ্য ঢাকার বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করা হয়। কার্যক্রমে অংশ নিয়ে পরিচ্ছন্ন নগরী ও দেশ গড়ার জন্য নাগরিকদের মানসিকতার পরিবর্তনের আহ্বান জানান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশ গেলে রাস্তায় ময়লা ফেলি না। কিন্তু দেশে আসলে কেন সেই অভ্যাস চালু রাখতে পারি না? আসলে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। রাস্তায় ময়লা না ফেলার প্রতিজ্ঞা করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, আমাদের নিজস্ব আঙিনা পরিষ্কারের দায়িত্ব আমাদের। ঠিক তেমনি এই শহর পরিচ্ছন্ন রাখাও আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের বাসস্থানের মতো এই শহরকে ভালবাসব। এজন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আইএম বাংলাদেশ। মানে, আমি-ই বাংলাদেশ। এমন চিন্তা থেকে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। একই আহ্বান জানান এফবিসিসিআই’র সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজ, টেলিভিশন অভিনেত্রী সুইটিসহ অনেকেই। সকলেই বসবাসযোগ্য ঢাকা গড়তে নগরবাসীর সহযোগিতা চান।
×