ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব্যসাচী দাশ

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০১৯

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০১৯

উৎসব, সব সময় আনন্দের হয়। বিশেষ করে বিনোদন বা শিল্প সংস্কৃতির মূলধারা চলচ্চিত্র বিষয়ক উৎসব- সে তো আরও গভীর আনন্দের। মনুষ্য সমাজ, সভ্যতা বা বিশ্বায়নের মতো বিস্তার বিষয়গুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চলমান ফ্রেমে বন্দী করে, শ্রেণী ভেদে মানুষের মধ্যে শান্ত কিংবা চঞ্চল অনুভূতি জাগরণে চলচ্চিত্র অদ্বিতীয়। চলচ্চিত্রের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িয়ে থাকে সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ। যে সংস্কৃতিতে তা নির্মিত হয় তাকেই প্রতিনিধিত্ব করে চলচ্চিত্র। কাজেই চলচ্চিত্রকে শিল্পের মহীরূহ বললেই চলে। বিশ্ব চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তুলনামূলক নবীন। আমাদের এই শিল্প সবসময় নিজস্ব চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে অনবরত চেষ্টা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে একাধিক শিল্প প্রেমিকও আমরা পেয়েছি এই মাধ্যমে। সময় পেরিয়ে আমাদের এখন বিশ্বদরবারে জানান দেয়ার পালা। যদিও এই চেষ্টার বয়স একেবারেই কম নয়। তারপরও ইতিবাচক পদক্ষেপ চলছে। এই ধারাবাহিকতায় গত ছাব্বিশ বছর যাবত আমরা আয়োজন করে আসছি ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’। ইতোমধ্যে বিশ্ব চলচ্চিত্র এবং এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এক করার ক্ষেত্রে এই উৎসব পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস। সময়টাকে নতুন বছরের প্রভাত বলা যেতে পারে। আর এই প্রভাতে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের ১৭তম ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ ২০১৯। আয়োজক ‘রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি’। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে আসছে ১০ জানুয়ারি শুরু হবে এই আন্তর্জাতিক উৎসব। চলবে ২০ তারিখ পর্যন্ত। রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি ১৯৯২ সাল থেকে এ উৎসবের আয়োজন করে আসছে। ৬০ দেশের দুই শ’ চলচ্চিত্র থাকছে এবারের আসরে। দশ জানুয়ারি জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই বর্ণিল উৎসব। এরপর পাবলিক লাইব্রেরির অডিটোরিয়াম, জাতীয় শিল্পকলার চিত্রশালা এবং যমুনা ব্লকবাস্টারে প্রদর্শিত হবে উৎসবের সিনেমা। পরিবেশিত হবে সকাল সন্ধ্যা। সকালের শোতে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী তাদের আইডি কার্ড প্রদর্শন করে ফ্রি সিনেমা দেখতে পাবে। বিকেলের শোতে নাম মাত্র টাকায় দর্শনার্থীরা দেখতে পাবে দেশী-বিদেশী চলচ্চিত্র। ইতোমধ্যে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ওয়েবসাইটে মোট ১২ জন বিচারকের নাম ও তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি প্রকাশ করা হয়েছে। উৎসবের ১৭তম আসরে বিচারক হিসেবে বিদেশী চলচ্চিত্রকারদের সঙ্গে থাকছেন বাংলাদেশের নির্মাতা ও প্রযোজক রুবাইয়াত হোসেন ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। উৎসবে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারক হিসেবে থাকবেন ইলিয়াস কাঞ্চন এবং উইমেন্স ফিল্ম বিভাগের জুরি বোর্ডে থাকবেন রুবাইয়াত হোসেন। এবারের উৎসবে মোট ৬০ দেশের দুই শতাধিক চলচ্চিত্র অংশগ্রহণ করবে। ছবিগুলো আটটি বিভাগে প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে প্রতিযোগিতা বিভাগ রয়েছে রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেনস ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ও উইমেন্স ফিল্ম সেকশন। তবে অন্য বারেরমতো এবার থাকছে না। চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মশালা। যদিও আমাদের বর্তমান চলচ্চিত্রের শিল্পমান এবং দর্শক নিয়ে কিছু নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে তার পরও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমারা মনেপ্রাণে শিল্পপ্রেমী জাতি। যে কারণে সবকিছু উতরে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র উৎসব বছর বছর সফলভাবে আয়োজন করে আসছি। বিশেষ করে দেশের উঠতি নির্মাতা অভিনয় শিল্পী কিংবা সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের জন্য এই উৎসব বিশেষ গুরুত্বে। কারণ, দেশ ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নির্মাণে এই মেলবন্ধনের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং নিজস্ব শিল্পের দীর্ঘায়ুর জন্য ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ অবশ্যই আমাদের জন্য মঙ্গলের। সব মিলে আসছে দশ জানুয়ারি সিনেমাপ্রেমীদের জন্য নান্দনিক একটি উৎসব অপেক্ষা করছে এমনটাই প্রত্যাশা।
×