ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রায়শ্চিত্ত শেষে বিপিএল দিয়ে ফেরার আশায় আশরাফুল

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

প্রায়শ্চিত্ত শেষে বিপিএল দিয়ে ফেরার আশায় আশরাফুল

মিথুন আশরাফ ॥ যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত হয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল, সেই বিপিএলেই এবার ফিরছেন। ঘরোয়া লীগে আগেই খেলেছেন। তবে দেশের ঘরোয়া লীগের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লীগ বিপিএলে নিষেধাজ্ঞার কারণে ফিরতে পারেননি। এবার ফেরায় যেন পূর্ণতা মিলছে আশরাফুলের। প্রায়শ্চিত্ত শেষে এ ফেরায় জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্নও দেখছেন তিনি। বিপিএল শুরু হবে ৫ জানুয়ারি, শনিবার। প্রথমদিন প্রথম ম্যাচেই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খেলবে চিটাগং ভাইকিংস। চিটাগং দলেই আছেন আশরাফুল। পাঁচ বছর পর আবার বিপিএলে খেলবেন আশরাফুল। লীগের ষষ্ঠ আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটে চিটাগং শেষ মুহূর্তে আশরাফুলকে দলে ভেড়ায়। এবারের ড্রাফটে বি ক্যাটাগরিতে থাকা আশরাফুলের ভিত্তিমূল্য ১৮ লাখ টাকাতে চিটাগং দলে নেয়। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বিপিএলে ফিক্সিংয়ে জড়ান। স্বীকারও করে নেন। শুরুতে আট বছর নিষিদ্ধ হন। আপীলের পর সেই সাজা কমে দাঁড়ায় পাঁচ বছর। ২০১৬ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরলেও বন্ধ ছিল জাতীয় দল ও বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টের দরজা। অবশেষে গেল ১৩ আগস্ট সেই দরজাও খুলেছে। নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি শেষে আশরাফুল জানান, তার লক্ষ্য ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা। অবশ্য নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে প্রথম মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি আশরাফুল। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে নিজের সর্বশেষ মৌসুমে দুর্দান্ত খেলেছেন। হাঁকিয়েছেন পাঁটি সেঞ্চুরি। পাশাপাশি লিস্ট এ ক্রিকেটে বেশ ধারাবাহিক ছিলেন। গেল দুই মৌসুমে ২৩টি ৫০ ওভারের ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ৪৭.৬৩। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেই ধারাবাহিকতা ছিল না সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের। মঙ্গলবার থেকে বিপিএলে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোর অনুশীলন শুরু হয়েছে। চিটাগংয়ের অনুশীলন হয় বুধবার। আশরাফুলও অনুশীলন করেন। পাঁচ বছর পর আবার বিপিএলে ফেরা নিয়ে আশরাফুল জানান, ‘আসলে খুবই ভাল লাগছে। গত দুই বছর প্রথম শ্রেণী এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে খেলতে পেরেছিলাম। কিন্তু এই খেলাগুলো আসলে সম্প্রচার হয় না। এই বিপিএলটি একটি আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট। এখানে খেলতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। চিটাগং ভাইকিংসের মালিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে বাছাই করার জন্য। আর যেহেতু আমি খেলাটি জানি এবং আমার অভিজ্ঞতা আছে সুতরাং চেষ্টা করব সুযোগ পেলে ভাল খেলার।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘অবশ্যই চ্যালেঞ্জের হবে। যেটি বললাম যে এটি একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, এখানে ভাল খেললে কাউন্ট হয়। আমার যেহেতু অভিজ্ঞতা আছে, আমি ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি এবং প্রথম দুই আসর বিপিএলে খেলেছিলাম। সেখানে চ্যাম্পিয়ন দলের অংশ ছিলাম এবং ভাল খেলেছিলাম। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে এবারও ভাল খেলার চেষ্টা করব। দলটিও যেন ফলাফল পায় আমার পারফর্মেন্সের মাধ্যমে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।’ বিপিএল থেকে আশরাফুলের গায়ে কলঙ্ক লেগেছে। এই বিপিএল দিয়েই নিজেকে আবার ফিরে পেতে চান তিনি। বলেছেন, ‘আমি যে অন্যায় করেছিলাম তার শাস্তি আমি পেয়েছি এবং সেটার কারণে কিন্তু আমি পাঁচ বছর নয় মাস বাইরে ছিলাম এই ফরমেট থেকে। যেহেতু আমি অন্যায় স্বীকার করে প্রায়শ্চিত্ত পেয়েছি এবং গত দুটি বছর আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি। মোটামুটি ভাল ক্রিকেট খেলেছি, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ বলেন, বিসিএলের এই মৌসুমটি ভাল হয়েছে। সুতরাং আমি চেষ্টা করব কারণ আমার যারা ভক্ত আছেন তারা সকলেই অপেক্ষায় আছেন যেন আমি আবার ফিরে আসতে পারি কিনা। তাদের জন্য হলেও চেষ্টা করব এই বিপিএলে ভাল খেলতে। তাহলেই আমার মনে হয় প্রশ্নগুলো যে আমি পারব কিনা, এটাও একটা মনে করি যে আমাদের ক্রিকেটের জন্য ফিরে আসতে পারি, এটা একটি উদাহরণ তৈরি হবে যে দীর্ঘ সময় বাইরে থেকেও আবার পারফর্মেন্স দিয়ে ফিরে আসাটা এটাও একটা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি। এই ফরমেটটি ভিন্ন। এখানে আসলে সম্প্রচার হয়, ফোকাস হয়, পারফর্মেন্সটি কাউন্ট হয়। সবগুলো পারফর্মেন্সই গণ্য করা হয়, তবে এটি একটু আলাদাভাবে হয়। একটি ক্রিকেটারের যে স্বপ্ন থাকে বাংলাদেশ দলে খেলাটা সেটার জন্য আসলে এটি অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। আমি আসলে এরজন্যই অপেক্ষা করছিলাম গত পাঁচটি বছর।’ আশরাফুলের কাছে পুনর্জন্মের মতো বিশেষ অনুভূতিও হচ্ছে, ‘আমি যখন জাতীয় লীগে খেলেছি তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আসার পর তখনই আমার আলাদা একটি অনুভূতি হয়েছে। যাদের সঙ্গে খেলতাম তিন বছর পর আবারও তাদের সঙ্গে জাতীয় লীগে খেলেছি। কিন্তু এই ফরমেটটিতে খেলা হয়নি পাঁচ বছর। অবশ্যই অন্যরকম একটি অনুভূতি হচ্ছে। আমি প্রত্যেকটি মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছি। এই ধরনের ফরমেট এবং পরিস্থিতিতে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আগেও ছিল। এমন না যে আমার আজকে নতুন হচ্ছে। এই কারণে নরমালভাবেই চিন্তা-ভাবনা করছি।’ বিপিএলে ফেরার মাধ্যমে কি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া পরিপূর্ণতা পেল? আশরাফুল জানান, ‘হ্যাঁ এটি সত্যি কথা যে বাংলাদেশ দলের জার্সিটি আবার পরতে চাই, সেটার জন্য সব থেকে বড় প্ল্যাটফর্ম এটি, আমি আগে থেকেই জানি এটি এবং সবাই জানে। আমি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছি। কিন্তু কেউ খেলা দেখেনি, শুধু স্কোরগুলো দেখেছে। এই প্ল্যাটফর্মটি আমি জানি যে যদি আমি ভাল খেলি, জানি যে খেলার স্টাইল অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আমি যখন খেলা শুরু করেছিলাম তখন কিন্তু এখন যে স্টাইলটি চলছে সেভাবে খেলতাম। এই কারণে আমার একটি জায়গা দরকার ছিল, যেখানে আমি মনে করি যে সুযোগ পেলে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারব। সেই প্ল্যাটফর্মটি আমার দরকার ছিল, পাঁচ বছর পর আমি পেয়েছি। যদি আমি সুযোগ পাই তাহলে আমার পারফর্মেন্স দিয়ে চেষ্টা করা ভাল করার।’ বিপিএল দিয়ে বিশ্বকাপে খেলার দাবি তুলে রাখতে চান আশরাফুল, ‘যেহেতু আমি একজন ব্যাটসম্যান, সুতরাং আমি যদি ফিট থাকতে পারি বিশ্বাস করি আরও চার পাঁচ বছর খেলতে পারব ইনশাল্লাহ। আপনি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখেন তাহলে দেখবেন অনেকেই আছেন এমন। সেটা নির্ভর করবে ফিটনেসের ওপরে। গত দুই বছর থেকে আমি নিজেকে অনেক ফিট মনে করছি সবকিছুর দিক দিয়েই। ফিটনেস এবং পারফর্মেন্স ঠিক থাকলে যত লম্বা সময় খেলা যায়। আর বাংলাদেশ দলে তো অবশ্যই খেলতে চাই। কারণ তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছি বাংলাদেশের হয়ে ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে হয়তো তখন সুযোগ পেতে পারতাম। সামনে যেহেতু ২০১৯ বিশ্বকাপ রয়েছে, যদিও আমি সেটি নিয়ে চিন্তা করছি না। তারপরও আমি মনে করি যে আমি ভাল পারফর্মেন্স করতে পারলে আমার অভিজ্ঞতাগুলো কাউন্ট করতে পারে।’
×