ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের বৈঠক ॥ আজ সিদ্ধান্ত

জাপার অধিকাংশ নেতা সরকার ও বিরোধী দলে থাকার পক্ষে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

জাপার অধিকাংশ নেতা সরকার ও বিরোধী দলে থাকার পক্ষে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় সিংহভাগ নেতাই সরকার ও বিরোধী দলে থাকার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তারা গতবারের ফর্মুলা অনুযায়ী বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারের অংশীদারিত্বে শরিক থাকতে চান। বুধবার জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় অংশ নিয়ে বেশিরভাগ নেতা এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে সবকিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার সংসদীয় দলের বৈঠকে জাপা সরকারে নাকি বিরোধী দলে থাকবে, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে। যদিও মঙ্গলবার জাপার নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদে জাপা বিরোধী দলে নাকি সরকারী দলে থাকবে সে ব্যাপারে বুধবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে। জাপার চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দুপুরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা চলে। সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, আজ বৃহস্পতিবার এমপিদের শপথ গ্রহণের পর আমাদের পার্লামেন্টারি পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সরকারে থাকব নাকি বিরোধী দলে থাকব। বুধবারের বৈঠকে নবনির্বাচিত ১৪ এমপিসহ ৩৬ জন উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, সাবেক দুই মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্য। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। বনানী কার্যালয়ে যখন দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক চলছিল তখন বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় ছিলেন এরশাদ। কিন্তু তিনি বৈঠকে যোগ দেননি। তবে আজ বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি শপথ নেবেন বলে জানা গেছে। নিজ এলাকা রংপুরের আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বিশেষ দূত। যদিও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একবারের জন্যও তিনি এলাকায় যাননি। ভোটও দেননি তিনি। এরশাদের অবর্তমানে জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তার ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে এরশাদের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যত কাউন্সিলে জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান করার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এরশাদ। বৈঠকে সালমা ইসলাম বলেন, বিগত ১০ বছরে পার্টির জন্য আমি অনেক শ্রম দিয়েছি, কিন্তু দল আমার জন্য অবস্থান নিলে আমি এমপি হতাম। আমি অন্যদলের প্রতীক থেকে যেন নির্বাচন করি সে অফার ছিল। আমি যাইনি। আমি মনে করি, আমাদের সত্যিকারের বিরোধী হওয়া উচিত। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, শেখ হাসিনা আর এরশাদ নেতৃত্বে মহাজোট হয়েছে। মহাজোটের কারণেই আমরা এমপি। শেখ হাসিনা এখন রাজনীতি করেন ট্রাম্প ও মোদির সঙ্গে। ড. কামাল, ফখরুল, রব, মান্নাদের নিয়ে রাজনীতি করার সময় তার নেই। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমরা সরকারে না থাকলে এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না। আজম খান বলেন, মহাজোট যেহেতু সরকারই সৃষ্টি করেছে তাই মহাজোটের মাধ্যমে সরকারে থাকাই বাঞ্ছনীয়। শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, কয়েক বছরে পার্টির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছি, কিন্তু মহাজোটের মনোনয়ন পাইনি। এ পার্টি করব কিনা এরশাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমি মনে করি, আমাদের গতবারের মতো সরকারের সঙ্গে থাকা উচিত। তা না হলে আমরা টিকে থাকতে পারব না। এটিইউ তাজ রহমান বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক হতে হবে। হয় সরাসরি সরকারে থাকব অথবা বিরোধী দলে। বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব নেয়া ঠিক হবে না। কারণ, বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব নিলে জনগণ আমাদের ভিন্নভাবে নেবে। তার এ বক্তব্য সমর্থন করে এ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ কয়েক প্রেসিডিয়াম সদস্য। এছাড়া মুজিবুল হক চুন্নু, আদেলুর রহমান, পনির উদ্দিন আহমেদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য গতবারের মতো বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারে থাকার পক্ষে বক্তব্য দেন। গোলাম কিবরিয়া টিপু নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করার দাবি জানান। সভায় কাজী ফিরোজ রশিদ উপস্থিত থাকলেও কোন বক্তব্য দেননি। এদিকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়ে সংসদীয় দলের সভায় অংশ নেবেন। দেশ ও মহাজোটের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে পার্টির সংসদীয় দলের সভায় সিদ্ধান্ত হবে সংসদে জাতীয় পার্টির কি ভূমিকা। তিনি বলেন, এর পর আলাপ-আলোচনা হবে মহাজোটের সঙ্গে। কারণ, আমরা মহাজোটে ছিলাম, মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্বাচন করেছি। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য এবং কথা ছিল অভিন্ন, তাই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জিএম কাদের বলেন, সভায় জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক কর্মকা- পর্যালোচনা করেছেন। বনানী অফিসে প্রেসিডিয়াম ও পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের জিএম কাদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা দেশে শান্তি ও সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। এজন্য জাপার পক্ষ থেকে যা করণীয় তা করা হবে। বিরোধী দল হয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব। এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিরোধী দল সরকারী দলকে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এর আগে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। দলকে আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, পার্টির সংসদীয় দলের সদস্যরাই মহাজোটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সংসদে দলের ভূমিকা নির্ধারণ করবেন। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন মহাসচিব মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা। যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, গোলাম কিবরিয়া টিপু, আবুল কাশেম, মুজিবুল হক চুন্নু, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, ফখরুল ইমাম, সালমা ইসলাম, মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, হাবিবুর রহমান, এসএম ফয়সল চিশতী, আজম খান, এটিইউ তাজ রহমান, আতিকুর রহমান আতিক, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লে. জে. (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান-শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, পনির উদ্দিন আহমেদ, আহসান আদেলুর রহমান, রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৪ আসনে বিজয়ী হয়েছিল জাতীয় পার্টি। এর পর সংরক্ষিত মিলিয়ে ৪০ আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল গঠন করে জাপা। এবারের নির্বাচনে মহাজোট থেকে ২৯ আসন পেলেও ২২ আসনে জাপার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। যদিও জাপা নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগ প্রকৃত অর্থে তাদের ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিল। এই হিসেবে চার আসনে তাদের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।
×