ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যালেন্ডারে দাগ কাটা দিন, ডায়েরিতে দুঃখ সুখের স্মৃতি

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

ক্যালেন্ডারে দাগ কাটা দিন, ডায়েরিতে দুঃখ সুখের স্মৃতি

মোরসালিন মিজান ॥ যারা ভাল আছেন তাদের কথা আলাদা। কিন্তু অন্য অনেকের কাছেই জীবন পুরনো। একঘেঁয়ে। চাওয়া পাওয়ার হিসাব মেলে না। এর পরও নতুন বছর এলে একটা প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত বছরটি যাদের দু’ হাত ভরে দিয়েছে তারা নতুন ক্যালেন্ডারে চোখ রাখছেন। আগামী দিনগুলোতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করছেন। আরও কী চাই, কত দিনের মধ্যে চাই তার অঙ্ক কষছেন। আর এ অঙ্ক কষার কাজে সহায়তা করছে ক্যালেন্ডার। যারা বহু চেয়ে সামান্যও পাননি, বাদ যাচ্ছেন না তারাও। পুরনো ব্যর্থতা অপ্রাপ্তি ভুলে আবারও ক্যালেন্ডারে দাগ কাটছেন। চলছে স্বপ্ন বুনা। দেয়ালে ক্যালেন্ডার। টেবিল কিংবা বালিশের পাশে ডায়েরি। ডায়েরির পাতায় প্রতিদিনের দুঃখ সুখ। যত্নে লিখে রাখা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ২০১৯ সাল। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই পুরানা পল্টনের ডায়েরি ক্যালেন্ডারের দোকানগুলো জমজমাট। এ যুগের ছেলে মেয়েরা ঠিক বলবে, ডায়েরি ক্যালেন্ডারের যুগ ফুরিয়েছে। ক্যালেন্ডারের জন্য ডায়েরির জন্য কিছু এখন থেমে থাকে না। থেমে যে থাকে না, বলাই বাহুল্য। তবে পুরনো আবেগ ভালবাসার আলাদা মূল্য আছে। কয়েক পাতার ক্যালেন্ডার মামুলি ডায়েরি এখনও ধরে রেখেছে আবেদন। হাতে পেলে ছেলে বুড়ো সকলেরই ভাল লাগে। কী যে ভাললাগে! দেয়ার আনন্দটাও কম নয়। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে ডায়েরি ক্যালেন্ডার। প্রীতি উপহার তো বটেই। প্রয়োজনটাও কম বড় নয়। তাই কর্মব্যস্ত মানুষের চোখের সামনে, সেটি দেয়ালে হোক কিংবা টেবিলের উপর, অন্তত একটি ক্যালেন্ডার আছে। আর ডায়েরি নিয়ে তো কাড়াকাড়ি অবস্থা! যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখতে চান সবাই। চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে অনেক আগে ভাগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রস্তুতি। ছাপাখানাগুলো ব্যস্ত সময় পার করেছে। আর এখন ঢাকার ঝকঝকে তকতকে শোরুম ভর্তি ক্যালেন্ডার ডায়েরি। ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও বিপুল সম্ভার চোখে পড়ছে। ক্যালেন্ডার ডায়েরির জন্য পল্টন ফকিরাপুল নিউমার্কেট এলাকা বেশ বিখ্যাত। এসব এলাকায় নামীদামী একাধিক প্রতিষ্ঠানের শোরুম। বুধবার পল্টনে অবস্থিত আজাদ প্রোডাক্টসের একটি শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, নতুন বছরের নানা সামগ্রী। অন্য সময় গ্রিটিংস কার্ড দিয়ে সাজানো থাকে। নানা ডিজাইনের বিয়ের কার্ড রাখা হয়। ভিউকার্ড পোস্টার পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি শুধু। দেয়ালের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত ক্যালেন্ডার টানানো। মাঝখানে টেবিলের উপর স্তূপ করে রাখা হয়েছে ডায়েরি। ক্যালেন্ডারগুলো বড় জায়গাজুড়ে দৃশ্যমান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট ও স্থাপনার ছবি দিয়ে পাতাগুলো সাজানো হয়েছে। ফুল বাগান, সবুজ উদ্যান, প্রাসাদোপম বাড়ি পাহাড়- ঝরনা ও বড় সেতুর ছবি চোখে পড়ে। প্রতিষ্ঠানের জিএম মোস্তফা কামাল জানান, সব মিলিয়ে ২০ থেকে ৩০ প্রকারের ক্যালেন্ডার করেছেন তারা। ডায়েরি করেছেন ১২ থেকে ১৫ প্রকারের। পাশেই আইডিয়াল প্রোডাক্টস। শোরুমটি নতুন বছরের ডায়েরি ও ক্যালেন্ডারে ঠাসা। ডায়েরিগুলো দারুণ আকর্ষণ করে। একটি অন্যটির চেয়ে সুন্দর। কিছু ডায়েরিকে আলাদা করেছে রেক্সিনের কভার। ভেতরের পাতাগুলোও মচমচে। ৩৬৫ দিন ব্যবহার করার জন্য সমান সংখ্যক ৩৬৫টি পৃষ্ঠা রাখা হয়েছে। কোন কোন ডায়েরিতে ইংরেজী মাসের পাশাপাশি আছে বাংলা মাসের হিসাব। সুন্দর মিলিয়ে নেয়া যায়। একটি ডায়েরির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে ছোট্ট ক্যালকুলেটরও। ব্রাঞ্চটির ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সাল শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই নতুন বছরের ডায়েরি বিক্রি করছেন তারা। বিভিন্ন অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আগেই অর্ডার করা হয়েছিল। এখনও অর্ডার পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তার মানে চাহিদা ফুরোয়নি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাহিদা ফুরোয়নি। শৌখিন মানুষেরা অনেক দূর দূরান্ত থেকে এসে ডায়েরি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। পল্টনে রাস্তার ধারে ফুটপাথেও বিক্রি হচ্ছে ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি। এখানে দাম একটু কম। বিক্রিও ভাল। কায়দা করে ঝুলিয়ে রাখা ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে দেখা যায়, চমৎকার সব ছবিতে বাংলার নদী নৌকার চির চেনা রূপ ফুটে ওঠেছে। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের ছবি ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে বিশেষ দক্ষতায়। সিলেটের চা বাগান, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, ট্যাকের ঘাট, টাঙ্গুয়ার হাওড় দেখে মন ভরে যায়। নজর কাড়ে পার্বত্য এলাকার সবুজ। গিফটশপগুলোতে আবার প্রাশ্চাত্য রুচির ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি। নিউ মার্কেটে অবস্থিত আর্চিস গ্যালারি ঘুরে তো মন ভরে যায়। এখানে ডায়েরি ক্যালেন্ডারের দাম একটু বেশি হলেও ভারি সুন্দর। সার্চ ইঞ্জিন গুগোল থেকে আকর্ষণীয় ছবি নিয়ে ক্যালেন্ডারে ব্যবহার করা হয়েছে। ডায়েরিগুলো হাতে নিলে না কিনে থাকা যায় না। হাতিরপুলে আছে হলমার্কের শোরুম। এখানেও দারুণ সব ডায়েরি। আছে নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ডও। ইশতিয়াক নামের তরুণ এক ক্রেতা বলছিলেন, সুন্দর একটি ডায়েরি বা ক্যালেন্ডার পেলে মানুষ এত খুশি হয় যে, টাকা দিয়ে সেটি সম্ভব নয়। তাই ডায়েরি কিনতে এসেছি। স্মার্টফোন ইন্টারনেটের যুগে এসবের প্রয়োজন কী? জানতে চাইলে আরেক ক্রেতা রীতা বলছিলেন, বাস্তবে পছন্দ করে একটি ডায়েরি বা ক্যালেন্ডার কেনা এবং প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার আলাদা আনন্দ। পাওয়ারও আনন্দ আছে। এটা এসএমএস করে বা ইনবক্স করে সম্ভব নয়। এই আবেগ বেঁচে থাকুক। সবার জন্য সুন্দর হোক ২০১৯।
×