ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের শীষ সমর্থকদের গ্রেফতারের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

ধানের শীষ সমর্থকদের গ্রেফতারের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনে ভরাডুবির পর ২ দিন নীরব থেকে আবার নানান অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে সরকার, পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিদিন অভিযোগ করতে থাকেন। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন তিনি ৫ বার সংবাদ সম্মেলন করেন। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অভিযোগ করেন, সারাদেশে ধানের শীষের সমর্থকদের ওপর এখনও নির্যাতন চলছে। তিনি বলেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গায়েবি ভোটে বিজয়ী হয়েছে। রিজভী বলেন, ২৯ ডিসেম্বর রাত ছিল কালরাত আর ৩০ ডিসেম্বর দিন ছিল অন্ধকার দিন। ২৯ ডিসেম্বর রাতে মানবশূন্য কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির নির্বোধ উল্লাসে মেতে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নের ওপর ধেয়ে এলো মহাদুর্যোগ। ভোটের দিন বিশ্ববাসী মহাশঙ্কা নিয়ে দেখল বিজিবি, র‌্যাব পুলিশের দেশের জনগণের আত্মমর্যাদাবোধে অসম্মানের দৃশ্যটি। তারা দেখল ভোটাধিকার বঞ্চনার শেষ দৃশ্যটি। রাতের আঁধারে কেন্দ্রে কেন্দ্রে অকটেন ও ডিজেল পোড়া ধোঁয়া। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানো। এই সংবাদ নির্বাচনের আগের রাত এগারোটায় আমি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে জানিয়েছিলাম। রিজভী বলেন, ভোট জালিয়াতি করতে পানির মতো টাকা খরচ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে। তারাই এক তরফা নির্বাচনের মুখ্য উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। তাই দেশে আর গণতন্ত্রের গৌরবোজ্জল যুগ সৃষ্টি হলো না। আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটে জেতেনি, জিতেছে গায়েবি ভোটে। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে নতুন সরকার গঠন হবে তা হবে ‘গবর্নমেন্ট অব দ্য বিজিবি বাই দ্য র‌্যাব এবং ফর দ্য পুলিশ’। রিজভী বলেন, মহাডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ক্রমান্বয়ে উপহাস করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা এখন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের চাপাবাজি ও গলাবাজির জোরে ভোট নিয়ে মহা জালিয়াতির ঘটনা আড়াল করতে চাচ্ছে। কিন্তু দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে কিছুই এড়িয়ে যায়নি। রিজভী বলেন, নির্বাচনের নামে নিষ্ঠুর রসিকতা করে এখন জনপদের পর জনপদে ধানের শীষের পক্ষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর চলছে পৈশাচিক বর্বরতা। আমি অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ এবং প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী মতের মানুষের ওপর সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আক্রমণ করে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে নিরীহ মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট ও বাজার। সেগুলোয় অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া, এলাকাছাড়া ও গ্রেফতার করার রীতিমতো হিড়িক শুরু হয়েছে। নানা হয়রানিসহ শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। আক্রমণে অনেকে নিহত হয়েছেন। নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষি খামার ও সহায় সম্পদের ওপর বেপরোয়া হানা দেয়া হচ্ছে অবিরাম। রিজভী বলেন, সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ও শ্বাসরোধী ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে এক সিএনজি চালকের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে শ্লীলতাহানি করা। ১০ থেকে ১২ জনের একদল কর্মী নোয়াখালীর সুবর্ণচরের মধ্যব্যাগারে ৪ সন্তানের মা সিএনজি চালকের স্ত্রীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বলে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে মহিলাটি সবার সামনে ধানের শীষে সিল দেয়। এরপর রাত দশটার দিকে সন্ত্রাসীরা পুলিশ পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূটির হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাতভর নির্যাতন করে ঘরের পাশে ফেলে যায়। সে এখন নোয়াখালীর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ অতীতে কখনও ক্ষমতায় আসেনি মন্তব্য করে বিএনপির মুখপাত্র রিজভী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জনগণের ভোটে কখনও আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়নি।
×