ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাদের ॥ নোয়াখালীর ধর্ষণে জড়িতরা পার পাবে না

সংসদে ঐক্যফ্রন্টের ৭ সদস্যের বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

সংসদে ঐক্যফ্রন্টের ৭ সদস্যের বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ীর সংখ্যা কম হলেও সংসদে তাদের ‘বড় ভূমিকা’ রাখার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সংসদে ৭ জনও একটি বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাদের কণ্ঠস্বর দুর্বল নাও হতে পারে। সংখ্যায় কম হলেও, মাইক তো সবার জন্য সমান। কথা তো এক সময় একজনই বলে। কণ্ঠস্বর চড়াও হতে পারে, তবে কর্কশ না হলেই হলো। বুধবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের তিন দিন পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের। এসময় তিনি বলেন, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কেউ পার পাবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়ার কথা জানান ওবায়দুল কাদের। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী ২৯৮ সংসদ সদস্যের শপথ অনুষ্ঠান আজ বৃহস্পতিবার হওয়ার কথা আছে। তবে ভোট প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সদস্যদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই জন শেষ পর্যন্ত শপথ নিতেও পারেন বলে বুধবার রাতে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে নির্বাচিত দুই সদস্যের মনোভাবও ইতিবাচক বলে জানা গেছে । বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতদের শপথ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে কাদের বলেন, তাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। তাদের জনগণ নির্বাচিত করেছে, তারা শপথ নেবেন এবং জনগণের রায়কে সম্মান করবেন, এটাই আশা করি। ভোটে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিএনপির আইনের আশ্রয় এবং আন্দোলনের হুমকি নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, লিগ্যাল ব্যাটেল ফেইস করব, নন ভায়োলেন্ট মুভমেন্ট রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব, ভায়োলেন্ট মুভমেন্ট মোকাবেলা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সময়ই বলে দেবে কী করতে হবে। নতুন মন্ত্রিসভা কবেনাগাদ হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার, এটা একেবারেই তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এই জবাবটা আমি দিতে চাচ্ছি না। মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য আকার নিয়ে প্রশ্নেও তিনি বলেন, আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। বাড়তেও পারে। প্রথমে একেবারে বাড়বে, এটাও বলা যাচ্ছে না। এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। কাদের কাদের নিয়ে সরকার হচ্ছে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদের বলেন, এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ১০ জানুয়ারির আগেই হবে। জাতীয় পার্টি সরকারে থাকছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সিদ্ধান্ত জানার বিষয় আছে। বিরোধী দল কে হচ্ছে- প্রশ্ন করলে কাদের বলেন, অপজিশন তো আছেই। অপজিশন গতবারও তো ছিল, তারাও তো আছেন। এবারের ঐক্যফ্রন্টের ৭ জন আছেন। দুই-তিন দিনের মধ্যে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। নতুন সরকারে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করে কাদের বলেন, ইশতেহারের যে ঘোষণা জাতির সামনে করা হয়েছে তা বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। ডেলিভারির বিষয়টা চ্যালেঞ্জ, বিশাল বিজয়ের সঙ্গে বিশাল চ্যালেঞ্জ জড়িয়ে থাকে। নোয়াখালীতে বিএনপির ‘দুর্গে’ জয়ের বিষয়ে কাদের বলেন, দুর্গ বলে রাজনীতিতে কিছু নেই, দুর্গ ভেঙ্গে যেতে পারে জনসমর্থনে যখন চিড় ধরে। রাজনীতি জোয়ার ভাটা আছে। সব সময় জোয়ার থাকে না, সেটা নির্ভর করবে আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ওপর। আমরা কি জোয়ারে থাকব, না ভাটাতে থাকব। বাংলাদেশ ও ভারতের সোনালি সময় চলছে- শ্রিংলা ॥ সাংবাদিকদের ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, আওয়ামী লীগের ল্যান্ডমার্ক বিজয়ে ভারত খুব খুশি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমানে সোনালি সময় চলছে। তিনি বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন অনেক ভাল। ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্যে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে এখনো ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। এই সম্পর্ক জোরদারের জন্য গবর্নমেন্ট টু গবর্নমেন্ট, পার্টি টু পার্টি এবং পিপল টু পিপল আলোচনা ও সংলাপ অব্যাহত থাকবে। ভারতের হাইকমিশনার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল সাফল্যের পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন, অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য এ বিজয়কে কাজে লাগাবে বলে আমি আশা করছি। এ ছাড়া ভারত বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় নানা সমস্যার সমাধান এরই মধ্যে হয়েছে বলেও জানান ভারতীয় হাইকমিশনার। নোয়াখালীর ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা পার পাবে না ॥ নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীতে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের কেউ ছাড় পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে। অপরাধী যে-ই হোক শাস্তি তাকে পেতেই হবে। গত রবিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মধ্যবাগ্যা গ্রামের এক নারীকে (৪০) তার বাড়িতে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে বাকবিত-ার জেরে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনার সঙ্গে দলীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় তার স্বামী থানায় যে মামলা দায়ের করেছেন, তাতে নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে অন্যতম সন্দেহভাজন সোহেলসহ তিনজনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা তার বসতঘর ভাংচুর করে, ঘরে ঢুকে বাদীকে পিটিয়ে আহত করে এবং সন্তানসহ তাকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। কাদের বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত হোক কেউ পার পাবে না, আমি এ ব্যাপারে নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব আমি জানি। বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারাও সিরিয়াসলি বিষয়টি দেখছেন এবং প্রশাসনও তৎপর। এদিকে এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দুটি তদন্ত দল বুধবার নোয়াখালীতে গেছে। মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দলের প্রধান আল-মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ওই নারী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। মেডিক্যাল প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। ‘ভিকটিমকে’ আইনী সহযোগিতা দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
×