ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উজানের জোয়ারে ভাসছে তিস্তা, ১৫ জানুয়ারি সেচ কার্যক্রম শুরু

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

উজানের জোয়ারে ভাসছে তিস্তা, ১৫ জানুয়ারি সেচ কার্যক্রম শুরু

তাহমিন হক ববী, তিস্তার ডালিয়া থেকে ॥ দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে সেচ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি সেচ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। তিন জেলা নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরে ২৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে। এ জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে উজানের জোয়ারে ভাসছে তিস্তা। বুধবার বিকেল পর্যন্ত পানি প্রবাহ ছিল পাঁচ হাজার কিউসেক, প্রবাহ অব্যাহত থাকলে এবার বোরো মৌসুমে কৃষকদের সেচ নিয়ে আর ভাবতে হবে না। তিস্তাপাড়ের চরখড়িবাড়ির মাঝি হামিদুল্লাহ খান (৪৮) বলেন, তিস্তায় উজানের পানির জোয়ার বাইড়া গেছে। স্থানীয় ভাষায় তিনি বলেন, তিস্তার পানি নিয়ে কাহো কাহো হা-কাউ চিৎকার পারে। তিস্তার পানি, পানির মতো আইতাছে। আবার কখনও পানির মতো চলি যায়ছে। আরে পানি তো নদীত আসিবে। এই দ্যাখেন নদীত এখন যে জোয়ার আইছে এই জোয়ারে ¯্রােত যায়ছে। রীতমত নৌকা চলছে। জাল দিয়ে তিস্তায় এখন প্রচুর বৈরালী মাছ পাওয়া যায়ছে। তিস্তা নদী হলো উত্তরের জীবনরেখা। তিস্তা তার জলদুগ্ধে উত্তরের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও পরোক্ষে। উত্তরের জনপদে তিস্তা অববাহিকার মানুষ তাই তিস্তার কাছে ঋণী। সেচ নির্ভর বোরো আবাদে তিস্তার পানির ব্যাপক চাহিদা। অন্যদিকে উজানের পানি প্রবাহের ওপর উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য সেচের ওপর নির্ভরশীল। বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তায় উজানের জোয়ার বইছে। নদী অববাহিকার জেলে ও মাঝিরা বলছে নদীতে ভালই পানি আসছে। শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি নদীজুড়ে, চলছে স্রোতধারা। চলছে নৌকা, জেলেরা মাছ ধরছে। গত এক পক্ষকাল হতে নদীতে পানির গড় হিসাব ছিল দেড় হাজার কিউসেক, যা বুধবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার কিউসেকে। তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উজানের পানি প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে সেচ প্রদান। এরপরেও রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে (বোরো মৌসুমে) সেচ দেয়ার একটি টার্গেট রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জনকণ্ঠ প্রতিবেদককে জানান, চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ থেকে আগামী ১৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক সেচ প্রদান শুরু করা হবে। সেচ দেয়ার কমান্ড এলাকা তৈরি রয়েছে ৭৯ হাজার হেক্টর। উজানের পানি প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করবে আমরা কত এলাকায় সেচ দিতে পারব। তিনি জানান, এরপরেও চলতি মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকায় ৮ হাজার হেক্টর ও নীলফামারী জেলা সদরে ৭ হাজার হেক্টর, কিশোরীগঞ্জে ৫ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুরে ২ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর ও দিনাজপুর জেলার খানসামা চিরিরবন্দরে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর। তিনি আরও জানান, বর্তমানে নদীতে উজানের পানির যে জোয়ার রয়েছে এটা অব্যাহত থাকলে আমরা ৫০ হাজার হেক্টর জমি পর্যন্ত সেচ দিতে সক্ষম হব। পানির জোয়ার আরও বাড়লে কমান্ড এলাকার ৭৯ হাজার হেক্টর জমি সেচ পেয়ে যেতে পারে। সম্ভাবনা জাগিয়েও বারবার থেমে যাচ্ছে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি। আশা জাগানিয়া তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি ॥ তিস্তা অববাহিকার মানুষ আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এবার হয়ত তিস্তার পানি চুক্তি হতে পারে। তিস্তাপাড়ের মানুষ অনেক কথাই মনে রাখেন। তারা বলছেন ২০১৫ সালে ভারতের পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, আমার ওপর আস্থা রাখুন তিস্তার পানির হিস্যা পাবে বাংলাদেশ। তাই তিস্তাপাড়ের মানুষ আশার আলো দেখছেন এবার। তারা মনে করছেন শেখ হাসিনা সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করছে। নতুন করে আগামী ৫ বছরের মধ্যে তিস্তার পানির হিস্যা আদায় করবে বাংলাদেশ। তিস্তায় যখন পূর্ণমাত্রায় পানি আসত তখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করলে যে ব্যয় হয়, সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে সেই ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের ১ ভাগ। বৃহত্তর রংপুরের মঙ্গা দূরীকরণে তিস্তা সেচ প্রকল্প অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। উত্তরের জীবনের জন্য তিস্তার পানির কোন বিকল্প নেই।
×