ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪, ২৭ চৈত্র ১৪৩০

৭ বছরেও হয়নি শিববাড়িয়া চ্যানেল খনন

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

৭ বছরেও হয়নি শিববাড়িয়া চ্যানেল খনন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২ জানুয়ারি ॥ কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর সাগরবক্ষে মাছ শিকাররত জেলেদের দুর্যোগকালীন আশ্রয়ের লক্ষ্যে আন্ধার মানিক মোহনা থেকে সাগরের কাউয়ার চর মোহনা পর্যন্ত শিববাড়িয়া চ্যানেল খনন কাজ সাত বছরেও শুরু হয়নি। ফলে দুর্যোগকালীন চরম ঝুঁকিতে সাগরে মাছ শিকার করছে হাজার হাজার জেলে। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ভরাট হওয়া চ্যানেলটিতে পুনরায় নাব্যতা সৃষ্টি, মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দরের জেলেদের লোডিং-আনলোডিং এর সুবিধাসহ চ্যানেলটির দুই পাড়ে বেড়িবাঁধের ভেতরে স্লুইসের সংযোগ খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে সরকারীভাবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। চ্যানেলটি খনন করা হলে দুর্যোগকালীন জেলেদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া কুয়াকাটায় আসা পর্যটক দর্শনার্থী নৌযানে এ চ্যানেল ব্যবহার করে পর্যটনপল্লী গঙ্গামতি যাওয়ার সুযোগ পাবে। সরকারীভাবে এই উদ্যোগ নেয়া হয়, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে। এ সংক্রান্ত একটি পিপি তখন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। চ্যানেলটি পুনর্খননের সম্ভাব্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ কাজটি শুরু হয়নি। বঙ্গোপসাগর মোহনার আন্ধার মানিক পয়েন্ট থেকে কাউয়ারচর আশাখালী পয়েন্ট পর্যন্ত শিববাড়িয়া চ্যানেলটি অবস্থিত। দীর্ঘ এ চ্যানেলটির দুই দিক দিয়ে জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া আসা করছে। কিন্তু চ্যানেলটির প্রবেশদ্বার আন্ধার মানিক এবং আশাখালী পয়েন্টের ৯০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে জোয়ারের সময় জেলেরা নিরাপদে চলাচল করতে পারলেও ভাটার সময় পারছে না। উত্তাল সাগরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকালে দ্রুত নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য জেলেদের এ চ্যানেল ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। কিন্তু দীর্ঘ চ্যানেলটি পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। ট্রলারসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চ্যানেলটির দুই পাড়ে লতাচাপলী, মহিপুর, ডালবুগঞ্জ, ধুলাসার ইউনিয়ন অবস্থিত। দুইদিকে রয়েছে বেড়িবাঁধ। অন্তত ১০টি স্লুইস রয়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য। এসব স্লুইসের সংযোগ খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। আর এসব কারণে কৃষিকাজে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব শুরু হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। এসব সমস্যা দূর করতে বহুমুখী সুবিধার লক্ষ্যে এই চ্যানেলটি খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। যদিও বর্তমানে লতাচাপলী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধটি পুনরাকৃতিকরণের কাজ চলছে। চলছে স্লুইসগুলো নতুন করে নির্মাণ। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় চ্যানেলটি খননের বাস্তবতা নিরূপনের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের সূত্রমতে, চ্যানেলটির তলদেশ তিন মিটার থেকে কোথাও কোথাও আট মিটার পর্যন্ত গভীর খনন করার পরিকল্পনা ছিল। এছাড়া প্রস্থ ৩০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মিটার পর্যন্ত খনন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। শিববাড়িয়া চ্যানেলটি খনন করলে জেলেদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে বলে জানালেন, উপকূলীয় মাঝি সমিতির সভাপতি মোঃ নুরু মিয়া। এছাড়া বরফ, মাছসহ বিভিন্ন মালামাল ওঠানামা করাতে জেলেদের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে জানান, মৎস্য আড়ত মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দাস। এছাড়া কৃষিকাজের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক। তাদের জলাবদ্ধতা দূর হবে। স্লুইসগুলো দিয়ে অভ্যন্তরের খালে পানি ওঠানামা করাতে সমস্যা হবে না। তাই জেলে, মৎস ব্যবসায়ী, কৃষকসহ সকল শ্রেণীর মানুষের দাবি দ্রুত এই চ্যানেলটির খনন কাজ শুরু করা হোক। কিন্তু আজ অবধি এ প্রকল্পটির কাজ শুরু না হওয়ায় দুর্যোগকালীন নিরপদ আশ্রয় নিতে না পারায় ট্রলার ডুবিতে জেলেদের প্রাণহানির শঙ্কা আরও বাড়ল। উল্লেখ্য ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে সাগরবক্ষে হঠাৎ ঝড় সৃষ্টি হলে নিরাপদ আশ্রয় নিতে না পারায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এই এলাকার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিব জানান, এ চ্যানেলটি খনন করে নৌরুটে পর্যটকের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া এটি খনন করে জেলেদের দুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এমপি মহিব আরও বলেন, কুয়াকাটার মাস্টারপ্ল্যান ফলো করে ফিসল্যান্ডিং সেন্টার করতেও এ চ্যানেলটি খনন করা জরুরী প্রয়োজন। চ্যানেলটি খনন করলে আশাখালী পয়েন্টে পর্যটকের নৌরুটের জন্য নৌ-বিহারের গুরুত্ব বহুগুণে বাড়বে।
×