ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুব এ রহমান

সোনালি অতীত!

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

সোনালি অতীত!

ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। মধ্যখানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে টানা প্রায় পনেরো দিন বন্ধ। ভাবলাম এই ফাঁকে বাড়ি থেকে ঘুরে এলে মন্দ হয় না। কথা মতো ট্রেনের টিকিট কেটে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশে। ডিসেম্বর মাস। স্কুল-কলেজ লেভেলে সবার ছুটি। তার ওপর আবার জাতীয় নির্বাচন। বাচ্চাদের স্কুল না থাকায় আত্মীয়স্বজন অনেকেই ফ্রি। বাড়িতে যাওয়া উপলক্ষে আপু-ভাইয়া, মামা-মামিসহ অনেকেই বেড়াতে এলেন। গ্রামে এখন নতুন ধানে গোলা ভরার মৌসুম। মাঠে মাঠে ধানের ম ম গন্ধ। তাই সবার আসা উপলক্ষে আম্মু আয়োজন করলেন ‘চোঙা পিঠা’ করার। ‘চোঙা পিঠা’ সিলেটের আঞ্চলিক একটা পিঠা। বিরোন চাল বাঁশের ভেতরে ঢুকিয়ে পোড়ার মাধ্যমে করা হয়। এ পিঠা সিলেট অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। খেতেও দারুণ! এরকম শীতের মৌসুমে যখন নতুন ধান ঘরে আসে তখন নতুন বিরোন চাল দিয়ে এই পিঠা করা হয়। সবাই আসা উপলক্ষে আম্মু করলেন এই বিশেষ ‘চোঙা পিঠা’। গ্রামে যাওয়ার পর তখন মধ্যরাত। খেয়াল করলাম কোথা থেকে ভেসে আসছে বাঁশের বাঁশির মিষ্টি ও নিখুঁত সুর। চমকে গেলাম! এত রাতে এত্তো মিষ্টি সুরে কে বাঁশি বাজায়। বুঝার চেষ্টা করলাম কোন দিক থেকে সুরটা আসছে। বুঝলাম ক্ষেতের মাঠের দিক থেকে আসছে। পরদিন বিকেলে ধান ক্ষেতের মাঠের দিকে গেলাম। আহা! কী মনলোভা দৃশ্য। সোনালি ধানে দুলছে জমিন। প্রায় পুরো মাঠের ক্ষেত পেকে আছে। কোথাও ধান কাটা হয়ে গেছে আবার কোথাও বাকি। মাঠের কোনে কোনে ছোট্ট ছোট্ট ঘর। যেগুলো সিলেটি ভাষায় বলে ‘উরা’। ধান কেটে আনার পর একত্র করে কৃষকেরা মাঠেই জায়গা পরিষ্কার করে রাখে। সেখানে মাড়াই করা কিংবা শুকানোর পর এনে গোলায় তোলা হয়। ফলে কৃষকরা ধান দেখভাল করার জন্য ‘উরাতেই’ রাত যাপন করেন। কথা বললাম কয়েকজনের সঙ্গে গতরাত শোনা বাঁশির সুর নিয়ে। উনারা জানালেন প্রতি রাতে সবাই একত্রিত হয়ে আড্ডা দেন। কেউ গান করেন, কেউ পুঁথি পাঠ করেন আবার কেউবা কখনও মধুর আবার কখনও করুণ সুরে বাঁশি বাজান। গ্রামের এসব দৃশ্য দেখে ও শুনে চোখে ভাসলো বিভিন্ন বই বা লেখনিতে পড়া আগেকার দিনের চিত্র। তখনকার দিনে শীত মৌসুম এলে চতুর্দিকে পড়তো পিঠা-পুলির ধুম। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় আয়োজন হতো জারি, বাউল, গান, নৃত্য কিংবা সার্কাসের মতো আনন্দময়ী অনুষ্ঠান। যা বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। এখন আর এসব আচার-অনুষ্ঠান কোথাও চোখেই পড়ে না মোটে। বর্তমান এই যান্ত্রিক শহুরে জীবনে হারিয়ে গেছে সব স্বকীয়তা। যা একটু সামান্য আছে তাও হারাতে বসেছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়। গ্রাম থেকেও উঠে যাচ্ছে এসব প্রথা বা রীতি- রেওয়াজ। এমন করে চললে এক সময় গ্রামীণ জীবন থেকে হারিয়ে যাবে এসব গ্রামীণ মধুর আর আনন্দময় সংস্কৃতি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×