ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ শীতজুড়ে নানা উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ শীতজুড়ে নানা উৎসব

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রত্যেক ঋতুই এই বাংলার পরিবেশকে নতুনভাবে সাজিয়ে দিয়ে যায়। ঋতুর সংখ্যাগত পরিক্রমায় শীতের স্থান পঞ্চমে। শীতের সঙ্গে উৎসবের গভীর একটা যোগসূত্র রয়েছে। গ্রাম বাংলা এমনকি নগরেও উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে শীত। এই উৎসব একেবারেই লৌকিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এই উৎসবের সঙ্গে এ দেশের মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। শীতকালটা বিশেষ বিশেষ অনুষঙ্গ নিয়ে হাজির হয় বছর বছর। তাই এ কালটা আমাদের জন্য বিশেষ হয়ে উঠে। উৎসবের এক মহা আমেজ নিয়ে আসে এই শীত। গ্রাম কিংবা শহর সর্বত্রই এর আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। সংস্কৃতি চর্চার এক মহা উৎসব শুরু হয়ে যায় এই ঋতুতেই। গ্রামের মাঠজুড়ে পাকা আমন ধান কৃষকেরা ঘরে তুলে এই সময়টাতেই। আর এই নতুন ধানের পিঠা আমাদের শীতের আয়োজনকে আরও সমৃদ্ধ করে। গ্রামে গ্রামে নানা রকমের পিঠার আয়োজন করা হয় এই ঋতুতেই। শীতের পিঠার মধ্যে আমরা পেয়ে থাকি ভাপাপিঠা, দুধচিতই, দুধপুলি, মালপোয়া, তেলপিঠা, নকশিপিঠা, পাকা কলারপিঠাসহ নানা রকমের পিঠা। এসব আমাদের গ্রামে তৈরি করা হয়ে থাকে। পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায় গ্রামে-গঞ্জে। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে-সঙ্গেই বাংলার ঘরে ঘরে এসব পিঠা তৈরির উৎসব শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন স্বাদের এসব পিঠাপুলি ভোজন রসিকদের রসনা তৃপ্তিতে আবহমানকাল ধরেই তৈরি হয়ে আসছে। গ্রামে এখনও ঘরে ঘরে শীতের সমস্ত পিঠার আয়োজন করা হলেও শহরে যান্ত্রিকতার ভিড়ে শীতের পিঠা হারিয়েই গেছে বলা যায়। অনেকে আবার শীতের এসব ঐতিহ্যবাহী পিঠার প্রস্তুত প্রণালীর জন্য তৈরি করতে পারে না। কিন্তু গ্রামে প্রতিটি বাড়িতেই কৃষাণিরা শীতের পিঠাপুলি তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। শীতের সময় গ্রামের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে খেজুরের রস। ভোরে তাজা খেজুরের রসের স্বাদ অমৃত যা গ্রাম বাংলায়ই পাওয়া যায়। আর এই খেজুরের রস দিয়েই তৈরি করা হয়ে থাকে শীতের পিঠাপুলি। আর খেজুরের রসের পিঠাপুলিতে ভিন্ন রকম স্বাদের আস্বাদন পাওয়া যায়। এছাড়া এই রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে। শীতকাল বাংলার মানুষের কাছে সংস্কৃতি চর্চার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু। এ সময়টাতে শহুরে পরিবেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মঞ্চস্থ হয় বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত, নাটক, কবিতা আবৃত্তির প্রতিযোগিতা, চারুকলাসহ বর্ণিল নানা উৎসব। মন ও হৃদয় উৎফুল্ল­চিত্তে নেচে উঠে সাংস্কৃতিক এসব আয়োজনে। এছাড়া গ্রাম-বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির যত আয়োজন আছে সবই আয়োজিত হয় এই শীতের রাতেই। যেমন- কবিগান, জারিপালা, মুর্শিদিগান, মাঘীপূর্ণিমা, পুতুল নাচ মাইজভা-ারি গান ইত্যাদি। শীতের রাতে নানারকম নাট্যগীতের আয়োজন করা হয় গ্রাম-বাংলায়। বিভিন্ন ধরনের মেলা, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কিত্তনসহ বিভিন্ন ধরনের আচার পালন করা হয় এই ঋতুতেই। অতএব, আমাদের বাঙালী জীবনে একটুকুন স্বস্তির বার্তা বয়ে আসে এই ঋতু। শীত এলেই বাঙালীর ষোলোআনাই পূর্ণতা পায় আমাদের বিভিন্ন ধরনের বাঙালী সাংস্কৃতির মাধ্যমেই। বাঙালীর শীতের উৎসব হোক চিরজীবী। টাঙ্গাইল থেকে
×