ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম দিনে নতুন বই

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

প্রথম দিনে নতুন বই

বিদায়ী বছরের সর্বশেষ মাস ডিসেম্বর ছিল নির্বাচনী উৎসব আর বিজয়ের এক মহিমান্বিত কাল। বিজয় দিবসের এই মাসটিতে আনন্দ আর আড়ম্বরে সারা দেশ মুখরিত হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসটি ছিল নির্বাচনী হাওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এমনকি দায়িত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরাও দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতায় অনেকটাই ব্যস্ত সময় কাটান। আর তাই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় কোন কর্মপরিকল্পনা স্থবির হয়ে ছিল না। সেভাবেই নতুন বছরে প্রথম দিনেই ২৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য তৈরি করা বই তাদের হাতে পৌঁছানোর সমস্ত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বই উৎসবের এই অভাবনীয় মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকে অসংখ্য খুদে এবং কিশোর শিক্ষার্থী। নতুন বই হাতে নেয়ার আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে সারা দেশের সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের পবিত্র আঙিনাও। শিশু-কিশোরের কলকাকলিতে উৎসবের মাত্রা যে পর্যায়ে যায় সে আনন্দ সত্যিই অতুলনীয়। সরকারের বৃহত্তর হরেক কর্মপরিকল্পনার সময়ক্ষেপণ যতই দৃশ্যমান হোক না কেন, নতুন বই হাতে দেয়ার এই দিনটির সাধারণত ব্যত্যয় করা হয় না। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের এই মহতী আয়োজনের উদ্বোধন করেন ১ জানুয়ারি। মোট পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, কারিগরি শিক্ষাস্তর, ভোকেশনাল পর্যায়সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বই ছাপা এবং বিতরণ করা হয়। পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ এবং মান হিসেবেও বইয়ের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক বলে মনে করেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা। বই প্রকাশে দেশী-বিদেশী দুই প্রতিষ্ঠানই সক্রিয় ছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে উপানুষ্ঠানিক বেশিরভাগ বইয়ের কাজ করেছে বিদেশী সংস্থা। কারণ তারা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে, সীমিত সময়ে ভাল মানের বই সরবরাহ করতে পারদর্শী। তবে দেশী প্রতিষ্ঠানও বই সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে কোনভাবেই পিছপা হয় না। এ ছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রকাশ মূল্য একটু বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে তারা। তার পরেও বইয়ের প্রকাশনা সংস্থাগুলো নিজেদের অর্পিত দায়িত্ব ভালভাবেই পালন করে যাচ্ছেন। প্রতি বছর এই নতুন বই বিতরণ উৎসব ছাত্রছাত্রীদের এক আনন্দঘন প্রাপ্তি। যার আশায় তারা শেষ হওয়া বছরের ক্রান্তিলগ্ন থেকেই অপেক্ষা করতে থাকে। সেই প্রতীক্ষার এক সময় সমাপ্তি ঘটে। ছোট ছোট শিশু-কিশোর তাদের প্রত্যাশার প্রাপ্তি নতুন বই হাতে পেয়ে যায়। আনন্দ আর উৎসবে মেতে ওঠে আগত বছরকে স্বাগত জানায়। প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়ে যায় কিভাবে যথার্থ জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সারা বছর নিজেদের তৈরি করবে। এভাবে সময়ের ক্ষুদে প্রজন্ম নব উদ্দীপনায় ভবিষ্যত পরিকল্পনাকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়। নতুন বছরে হাতে পাওয়া বই উৎসবের মধ্য দিয়ে নবযাত্রা শুরু হোক প্রাণচঞ্চল শৈশব-কৈশোর আর উদ্দীপ্ত তারুণ্যের নতুন গন্তব্যে।
×