ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রাশেদুল হক

ক্রিকেটে পাঁচ তারকার বিদায়

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২ জানুয়ারি ২০১৯

ক্রিকেটে পাঁচ তারকার বিদায়

প্রকৃতির নিয়মে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে কাটা পড়ল আরও একটি বছর। বিদায়ী ২০১৮ সালে অন্য অঙ্গনের মতো ক্রিকেটেও ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। বছরজুড়ে বিরাট কোহলি, কাগিসো রাবাদা, রশীদ খানরা যেমন আলো ছড়িয়েছেন, তেমনি ক্যারিয়ার শেষ করেছেন একাধিক তারকা। তার মধ্যে এবি ডি ভিলিয়ার্স, এ্যালিস্টার কুক, রঙ্গনা হেরাথের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে। ব্যাট বল তুলে রাখা উজ্জ্বল ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো, ভারতের গৌতম গাম্ভীরও। গাম্ভীর যদিও অনেক দিন ধরে দলের বাইরে ছিলেন। আর ক্যারিয়ারজুড়ে একাধিকবার অবসরের ঘোষণা দিয়েও ফিরে এসে আলোচনার খোরাক জোগানো আফ্রিদি ‘বিদায়’ বলেছেন ফ্রেন্ডশিপ টি২০র মধ্য দিয়ে। এবি ডি ভিলিয়ার্স ॥ ক্রিকেটে তিনিই প্রথম ৩৬০ ডিগ্রী স্টাইলের ব্যাটিংয়ের প্রবর্তন করেন অভাবনীয় সব শট খেলার মাধ্যমে। ওয়ানডেতে অতি আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সুবাদে গড়েছেন একাধিক বিশ্ব রেকর্ড। দ্রুততম ফিফটি, দ্রুততম সেঞ্চুরি এবং দ্রুততম দেড় শ’ রানের ইনিংস খেলার মালিক হয়ে নিজেকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে এক ভিডিও বার্তায় হঠাৎই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে তিনি সবাইকে স্তব্ধ করে দেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা। তার অবসরে ক্রিকেট বিশ্ব হয়ে পড়ে বিস্মিত। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের এক বছর আগে কেন তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নিয়ে চলতে থাকে বিস্তর আলোচনা। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে প্রচলিত কোটা ব্যবস্থার প্রতি বিরক্ত হয়ে, নাকি তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতেই আগেভাগে তিনি অবসর নিয়েছেন, তা এখনো খোলাসা হয়নি। তিনি বিদায় নেয়ার সময় শুধু জানিয়েছিলেন, ‘এখন আমার থামার সময় হয়েছে। সত্যি বলছি, আমি ভীষণ ক্লান্ত। যদিও তিনি এখনও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে চলেছেন। ১১৪ টেস্টে ৫০ এর উপরে গড়ে ৮ হাজার ৭৬৫ রান করেন এবি। এছাড়া, তিনি ২২৮ ওয়ানডেতে সাড়ে ৫৩ গড়ে ৯ হাজার ৫৭৭ এবং ৭৮টি ম্যাচে করেছেন ১ হাজার ৬৭২ রান। বল হাতে মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রী ম্যান নিয়েছেন ২টি এবং ওয়ানডেতে তার ঝুলিতে রয়েছে ৭টি উইকেট। শহীদ আফ্রিদি : বারবার অবসর নিয়ে আবার তা ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে এসে অনেকের কাছেই হাসির পাত্র হয়েছেন পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। যদিও শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে এসে শেষ হয় তার অবসর নাটক। সেটি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্ব একাদশের হয়ে টি২০ ম্যাচে। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মাঠে নেমে ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসির হুসেইনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আফ্রিদিকে সরাসরি প্রশ্নই করে বসেন, এটা কি আসলেই আপনার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ! দীর্ঘ ২০ বছরের ক্যারিয়ারে তিন ফরমেট মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ৪৭৬টি ছক্কা মেরেছেন আফ্রিদি, যে রেকর্ড এখনো রয়েছে। তবে এই রেকর্ডে তার সঙ্গে ভাগ বসানো ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল আর মাত্র ১টি ছক্কা মারলেই আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে যাবেন। ২৭টি টেস্ট, ২৯৮টি ওয়ানডে এবং ৯৯টি টি২০ ম্যাচ খেলা আফ্রিদি ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেন। আফ্রিদি টেস্টে ১ হাজার ৭১৬, ওয়ানডেতে ৮ হাজার ৬৪ এবং টি-২০ তে ১ হাজার ৪১৬ রান করেন। বল হাতে তিনি টেস্টে নিয়েছেন ৪৮টি, ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৩৯৫টি উইকেট লাভ করেন। টি২০ তে ৯৮টি উইকেট নিয়ে এখনও তিনি এই ফরমেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার হয়ে আছেন। রঙ্গনা হেরাথ : অস্ট্রেলিয়ার কিংবদনিমশ লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের সমসাময়িক হওয়ার কারণে যেমন স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল দারুণ প্রতিভাবান হওয়ার পরেও ক্যারিয়ারে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি, ঠিক তেমনই কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনের কারণে নিজেকে স্বরূপে মেলে ধরতে পারেননি রঙ্গনা হেরাথ। যদিও মুরালি পরবর্তী যুগে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে ওঠেন হেরাথ। অবসর নেয়ার আগে তিনিই ছিলেন গত শতাব্দীতে অভিষিক্ত হওয়া সর্বশেষ ক্রিকেটার। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও ১৯ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে হেরাথকে ৯৩টি টেস্ট, ৭১টি ওয়ানডে এবং ১৭টি টি২০ ম্যাচ খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। হেরাথের টেস্ট উইকেটের সংখ্যা ৪৩৩টি, ওয়ানডেতে ৭৪টি এবং টি২০ তে ১৮টি। ব্যাট হাতে যদিও তার পারফর্মেন্স তেমন উজ্জ্বল ছিল না। টেস্টে তার উইলো থেকে এসেছে ১ হাজার ৬৯৯ রান। ওয়ানডে ও টি২০তে যথাক্রমে তিনি করেছেন ১৪০ ও ৮ রান। এ্যালিস্টার কুক : ‘ক্রিকেট আসলে ভদ্রলোকের খেলা’- বর্তমান যুগে এসে কথাটির আদর্শ বিজ্ঞাপন হয়ে ছিলেন এ্যাস্টিনার কুক। টেস্ট ইতিহাসে তিনি সপ্তম সর্বাধিক ১৬১টি ম্যাচ খেলে শেষ ইনিংসে সেঞ্চুরি করে নিজের বিদায়কে রাঙিয়ে রাখেন। এছাড়াও ৯২টি ওয়ানডের পাশাপাশি ৪টি টি২০ ম্যাচও খেলেছেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারে কুক করেছেন পঞ্চম সর্বাধিক ১২ হাজার ৪৭২ রান। ইংল্যান্ডের হয়ে যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। এছাড়া ওয়ানডেতে করেছেন ৩ হাজার ২০৪ রান, টি২০ তে ৬১। ব্যাটসম্যান হিসেবে গোটা ক্যারিয়ারে কুকের ঝুলিতে রয়েছে একটি টেস্ট উইকেটও। ডোয়াইন ব্রাভো : ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো এ বছর দীর্ঘ ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি ডাকেন। ৪০টি টেস্ট, ১৬৪টি ওয়ানডে এবং ৬৬টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলা ডোয়াইন ব্রাভো আপাতত ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে খেলা চালিয়ে গেলেও ক্যারিবীয়দের জার্সি গায়ে তাকে আর কখনোই দেখা যাবে না। ২০১৬ সালে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ব্রাভো দুই বছর পর নিজের অবসরের ঘোষণা দেন গত ২০১৮ সালে। টেস্টে তিনি ২ হাজার ২০০ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ৮৬টি উইকেট। ওয়ানডেতে ২ হাজার ৯৬৮ রানের সঙ্গে নিজের পালকে যোগ করেছেন ১৯৯ উইকেট। টি২০ তে ১ হাজার ১৪২ রান করার পাশাপাশি নিয়েছেন ৫২টি উইকেট।
×