ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘরোয়া ফুটবলের নতুন শক্তি বসুন্ধরা কিংস

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২ জানুয়ারি ২০১৯

ঘরোয়া ফুটবলের নতুন শক্তি বসুন্ধরা কিংস

বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন পরাশক্তির আবির্ভাব হয়েছে। এ তালিকায় ভালমতোই নিজেদের যুক্ত করেছে বসুন্ধরা কিংস। গত ২৬ ডিসেম্বরে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে সবাইকে ছাড়িয়ে নবাগত গেছে দলটি। বাংলাদেশের ফুটবল-উন্মাদনা কতটা বেশি তা ভালভাবে টের পাওয়া যায় ফুটবল বিশ্বকাপের সময়। ফুটবলের সেই মহামঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা আছে, এমন কোন ফুটবলার বাংলাদেশী ক্লাবের হয়ে খেলবেন স্বাভাবিকভাবেই সেটা অনেক বড় ব্যাপার। তেমনটাই ঘটেছে সদ্য বিদায়ী বছরে। দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সংস্কৃতিকে ভেঙে কোস্টারিকার স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেসকে দলে ভিড়িয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের নবাগত ক্লাব ‘বসুন্ধরা কিংস’। বাংলাদেশের মাঠও মাতিয়ে চলেছেন বিশ্বকাপের এ তারকা। কেবল খেলোয়াড় নয়, ইউরোপ থেকে হেভিওয়েট কোচিং স্টাফদের এনেও দেশের ফুটবল-পাড়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে বসুন্ধরা। স্পেনের অস্কার ব্রুজন দায়িত্ব নিয়েছেন হেডকোচের। এর আগে মালদ্বীপের নিউ রেডিয়েন্টে থেকে দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা। তার আগে ভারতে কাজ করেছেন বলে উপমহাদেশের ফুটবলটা ব্রুজনের নখদর্পণে। তার সহকারী কোচ হিসেবে আছেন দু’জন। একজন ট্রেইনার। গোলকিপিং কোচসহ মোট ছয়জনের কোচিং টিম কাজ করবে টিম বসুন্ধরা কিংসের জন্য। তবে স্প্যানিশ হেডকোচ ব্রুজনের লবিংয়ে বেশকিছু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে ক্লাবটি। রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা স্ট্রাইকার কলিন্দ্রেস এসেছে তার সুবাদেই। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আবাসিক ক্যাম্প করেছে ক্লাবটি। সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে ৬০ জন খেলোয়াড়ের থাকার বন্দোবস্ত সেখানে। বসুন্ধরা আবাসিকের ভেতরেই ক্লাবের নিজস্ব মাঠ। নতুন মৌসুম শুরুর বেশ আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে অনুশীলন। কিংসদের মূল ভেন্যু অবশ্য নীলফামারীতে। সাফ ফুটবল শুরুর আগে নীলফামারীর যে স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল, সেটাই মূলত বসুন্ধরা কিংসের হোমগ্রাউন্ড। আর সে কারণে নীলফামারীতেই স্থায়ী ঘাঁটি গাড়তে হচ্ছে বসুন্ধরা কিংসকে। রাজধানীর সুযোগ-সুবিধা নেই কিন্তু ভেন্যু হিসেবে মিলছে আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম। নীলফামারী সরকারী কলেজের উল্টোদিকেই সেটার অবস্থান। ২১ হাজার দর্শক-ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই মাঠের আয়তন প্রায় ১৬ হাজার বর্গফুট। বসুন্ধরা কিংসের হোমগ্রাউন্ড হলেও মাঠের মালিকানা এবং দেখভালের দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। ফুটবলের পাশাপাশি তাই টুকটাক ক্রিকেটেরও অনুশীলন করে থাকে স্থানীয় দলগুলো। ০নীলফামারী ইপিজেডের ভেতরে করা হয়েছে ক্লাবের আবাসিক ক্যাম্প। সেখানে একই সঙ্গে থাকতে পারেন ৭০ থেকে ৮০ জন খেলোয়াড়। ২০১৩ সালে গঠিত হলেও শুরুতে কার্যক্রমের দিক দিয়ে বেশ পিছিয়ে ছিল ক্লাবটা। ২০১৬ সালে পাইওনিয়ার লীগ জয় করে তারা। এরপর কিছু শর্ত পূরণ করে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে। সেটা জিতেই বসুন্ধরা কিংস ২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। নাম শুনেই বোঝা যায় ক্লাবের পেছনে অর্থায়ন করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। স্থানীয় ক্লাবের বদলে বড় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ফুটবল ক্লাব শক্তিশালী হয়ে উঠলে গ্যালারিতে দর্শক টানা কঠিন হবে অনেক ক্রীড়া সংগঠক এমন ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু ক্লাবকে ঠিকঠাকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান স্থানীয় ক্লাবগুলোতে নেই। সে কারণে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত ফুটবল ক্লাবগুলোই হয়ে উঠছে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের জায়ান্ট। প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ভালই চমক দেখিয়েছিল সাইফ স্পোর্টিং। বসুন্ধরা কিংসের মতো এতটা না হলেও বড় বিনিয়োগ করেছিল তারা দল গঠনে। কিন্তু লিগ ট্রফি শেষ পর্যন্ত জেতা হয়নি। চার নম্বরে থেকে মৌসুম শেষ করে তারা। তবে শর্ত পূরণ করতে পারায় খেলতে পেরেছিল এএফসি কাপে। বসুন্ধরা কিংসও হাঁটছে সেই পথেই। তবে আরও বড় আয়োজন করে নিজেদের প্রমাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে ক্লাবটি। এ তো গেল মূল দলের কথা। ফুটবলের পাইপলাইন মজবুত করতেও বেশ সচেষ্ট বসুন্ধরা কিংস। ক’দিন আগেই তারা শেষ করেছে অনূর্ধ-১৭ ফুটবলার বাছাই প্রক্রিয়া। সারাদেশ থেকে ট্রায়ালের মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে সেরা ফুটবলারদের। পাঁচ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় দেড় হাজার ফুটবলারকে। তাদের মধ্যে আবার ট্রায়ালের মাধ্যমে পাওয়া সেরাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বসুন্ধরা কিংস অনূর্ধ-১৭ দল। গত ২৩ নবেম্বর ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ঢাকা আবাহনীর কাছে হেরে প্রথম শিরোপা জেতার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল দলটি। ২৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে এবার আর শিরোপাজয় থেকে বঞ্চিত হতে হয়নি নবাগত বসুন্ধরা কিংসকে। অবশেষে সুপ্রসন্ন হয় তাদের শিরোপাভাগ্য। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের দশম আসরের ফাইনালে ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা ২-১ গোলে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে এই আসরের নতুন দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়। ম্যাচের প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল ১-১। খেলা দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত হাজার দুয়েক দর্শকের অধিকাংশই ছিল বসুন্ধরার। তাদের পরনে ছিল বসুন্ধরার জার্সি। তবে পিঠে লেখা ছিল ‘চ্যাম্পিয়ন’ শব্দটি। বসুন্ধরা চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে তাদের এই বিশেষ জার্সি পরে আসাটা বৃথা যায়নি। খেলা শেষ হতেই সেই বিশেষ জার্সি পড়ে মাঠে ঢুকে পড়েন বসুন্ধরার তিন বিদেশী নারী সমর্থক। তাদের দেখা যায় বসুন্ধরার তিন বিদেশী খেলোয়াড় ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস, বখতিয়ার ও মার্কোসকে জড়িয়ে ধরতে, অভিনন্দন জানাতে এবং তাদের সেই বিশেষ জার্সিটি উপহার দিতে। জানা যায়, ওই তিন বিদেশী নারী সমর্থক ছিলেন এই তিন ফুটবলারের গার্লফ্রেন্ড। রেফারি সুজিত ব্যানার্জি চন্দন খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচকে ছুটে গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন দলটির পাঁচ-ছয় কোচিং স্টাফ। কিছুক্ষণ পর দলের খেলোয়াড়রা এসে অস্কারকে চ্যাংদোলা করে শূন্যে ছুঁড়ে মারলেন কয়েকবার।
×