ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ভারতের তিন নাট্যোৎসবে নীলাখ্যানের প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২ জানুয়ারি ২০১৯

ভারতের তিন নাট্যোৎসবে নীলাখ্যানের প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের দর্শকসমাদৃত নাটক নীলাখ্যান। মানব প্রেমের অমর উপাখ্যানটি ঢাকার নাট্যরসিকদের মাঝে ছড়িয়েছে ভাল লাগার অনুভব। পেয়েছে জনপ্রিয়তা। এবার প্রযোজনাটি দেশের সীমানা পেরিয়ে মঞ্চস্থ হবে ভারতের তিনটি নাট্যোৎসবে। মহাকালের কর্ণধার মীর জাহিদ হাসান জনকণ্ঠকে জানান, ভারতের ত্রিপুরায় লারনার্স এডুকেশন সোসাইটি, নাট্যভূমি ও শুভম নাট্যচক্রের তিনটি নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হবে নীলাখ্যান। তিনি বলেন, ড. ইউসুফ হাসান অর্কের চমৎকার নির্দেশনার বৈচিত্র্যময় কোরিওগ্রাফি নাটকটির দর্শককে আকৃষ্ট করেছে। এ কারণে মঞ্চে আসার দেড় বছরের মধ্যে নাটকটির ৪২টি প্রদর্শনী হয়েছে। ভারতের তিনটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেটি ছুঁয়েট পঁয়তাল্লিশতম মঞ্চায়নে। আশা করছি, আগামী তিন মাসের মধ্যে নীলাখ্যানের পঞ্চাশতম মঞ্চায়ন হবে। তেসরা জানুয়ারি থেকে লারনার্স এডুকেশন সোসাইটি আয়োজিত চারদিন ব্যাপী পঞ্চম নাট্যমঞ্চ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে ত্রিপুরার বিবেকানন্দ সার্ধ শতবার্ষিকী ভবন মঞ্চে নীলাখ্যান নাটকের প্রথম প্রদর্শনী হবে। ৪ জানুয়ারি আগরতলার রবীন্দ্র ভবন মঞ্চে নাট্যভূমি আয়োজিত তিনদিনের ১৩তম নাট্যোৎসবে হবে দ্বিতীয় মঞ্চায়ন। ৫ জানুয়ারি শুভম নাট্যচক্রের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ত্রিপুরার খোয়াই জেলার নতুন টাউন হল মঞ্চে ৩ দিনব্যাপী নাট্যতরঙ্গ উৎসবে প্রযোজনাটি তৃতীয় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। দলপ্রধান মীর জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ২৫ সদস্যের নাট্যদলটি আজ বুধবার সকালে ত্রিপুরার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে। দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ে প্রযোজনা ‘নীলাখ্যান’। নাটকটি রচনা করেছেন আনন জামান। নির্দেশনা দিয়েছেন ড. ইউসুফ হাসান অর্ক। প্রযোজনাটির অভিনয় শিল্পীরা হলেনÑ কোনাল আলী সাথী, শাহিনুর প্রিতী, সুরেলা নাজিম, সুমাইয়া তাইয়ুম নিশা, নূর আক্তার মায়া, পিয়াসী জাহান, খলিলুর রহমান স¤্রাট, তন্ময় ঘোষ, মনিরুল আলম কাজল, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, তারেকেশ্বর তারোক, আহাদ জাহাঙ্গীর, রাসেল আহমেদ, সবুজ হোসেন, ইকবাল চৌধুরী, আরিফুল স্বপ্নিল, মোঃ শাহনেওয়াজ ও মীর জাহিদ হাসান। নির্দেশনার পাশাপাশি মঞ্চ পরিকল্পনা, সুর, সঙ্গীত ও আবহসঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন ড. ইউসুফ হাসান অর্ক। আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠান্ডু রায়হান। কাহিনীটির প্রেক্ষাপট বেদে বহর হলেও কবি নজরুলের অন্ত¯্রােতে এমন একটি সার্বজনীন বীজ ভাসিয়ে দিয়েছেন যা স্পষ্টতই গোটা মানবকূলের সর্বকালকে ছুঁয়ে যায়। অনতিক্রম্যদূর্মর আকাক্সক্ষা আর বিরাট প্রকৃতির তুলনায় মানুষের অসহায়ত্ব তাই কবিকে এমন প্রেমাখ্যান লিখতে কলম ধরায়। কবি আর নাট্যকার তাদের মন্ময়তায়-তন্ময়তায় যে জগৎ রচনা করেন তার থেকেও ভিন্ন কোন ভাষা অনুসন্ধান করতে হলে বাংলা নাট্যের সঙ্গীতের ঐতিহ্যের দ্বারস্থ হতেই হয়। কেননা সেখানেই অনেক কথা না বলেও বলা হয়ে যায়। ‘নীলাখ্যান’ প্রযোজনাতেও সেই প্রয়াস রয়েছে। শব্দ-সুরের শক্তিতে প্রেম আর মানুষের অসহায়ত্বের মনকথা বলবার জন্যই অভিনেতা-চরিত্রেরা অনেকটা গীতলভাবে তাদের প্রকাশ করে। নাটকের কাহিনীতে বেদে সর্দার জহরের বিষ জয় সাধনায় মনসা কর্তৃক কাম নিষিদ্ধ বলে তার ভাষে-আভাসে প্রত্যাখ্যাত ভালবাসার মানুষ বিন্তী রানী আত্মহত্যা করে আড়ালি বিলে রাশি রাশি শাদা শাপলার বনে। বেদে বহরে বেড়ে উঠা সাপে কাটা মান্দাস ভাসা বালিকা চন্দনের চুলের আড়ে বিন্তীর সুরভী পায় জহর। নারী নিষিদ্ধ বলে এ বালিকা বেড়ে উঠছিল বালকের বেশে। এক সময় যাকে সন্তান জ্ঞান করেছিল ঋতুমতি হওয়ার পর তার প্রতি প্রবল রতি অনুভব করে জহর। বেদে দলে তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিচিত্রমুখী সঙ্কট। চন্দনের যুবা সাজে তাকে প্রেম নিবেদন করে মৌটুসী আর চন্দন ঠোঁটে মালতী ফুলের লাল ডলে ঝুমরোর সামনে দাঁড়ায়। বেদিয়াদের উৎসবে চন্দনের নারীত্ব উন্মোচন হলে দলের অতিপ্রাকৃত বৃদ্ধ ঘণ্টাবুড়ো বেদে দল ও জহরকে তিনটি অনিবার্য ভবিতব্যের ঘোষণা দেয়- ‘ভবিতব্যের তিনরূপ কহি- যে ভাতের পাতিল নেয়ার জন্য জলে ডুবেছে বিন্তী- তা অন্যরে দিতে চেয়ে পতিত হবি তুই। অথবা তোর আচরে বিন্তীর অনুগামী হবে চন্দনে। আর যদি না হয় তা- তবে আছে তৃতীয়জন- তার হবে মৃত্যু। মৃত্যু অনিবার্য- তবে তা কার হবে- তোর কার্যকরণ হবে থির।’ এভাবেই রুদ্ধশ্বাস গল্পের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় কাহিনী।
×