ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে এ্যাডব্রেকস এ্যাপস, অর্থ উপার্জনের সুযোগ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২ জানুয়ারি ২০১৯

ফেসবুকে এ্যাডব্রেকস এ্যাপস, অর্থ উপার্জনের সুযোগ

ফিরোজ মান্না ॥ ফেসবুক রোজগারের সুযোগ করে দিয়েছে। নয়টি ভাষায় বিশ্বের ৩২টি দেশে এই সুবিধা চালু করেছে তারা। সম্প্রতি বাংলাদেশী ও বাংলাভাষীদের জন্য ‘এ্যাডব্রেকস’ নামের একটি এ্যাপস চালু করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এই এ্যাপসের মাধ্যমে ফেসবুকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এ্যাডব্রেকস হলো বিজ্ঞাপন বিরতি। ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা নিজস্ব ভিডিওর মধ্যে বিজ্ঞাপন প্রচার করাটাই হচ্ছে এ্যাডব্রেকস। বাংলাদেশের ব্যবহারকারী ও সৃজনশীল নির্মাতারাও এখন চাইলেই ফেসবুক পেজে ভিডিও আপলোড করে কিংবা আগেই আপলোডকৃত ভিডিওর মধ্যে বিজ্ঞাপন-বিরতির সুযোগ গ্রহণ করে আয় করতে পারবেন। ভিডিওতে বাংলা ও ইংরেজী উভয় ভাষাতেই এ সুবিধা মিলছে। এ্যাডব্রেকস সুবিধার মাধ্যমে ফেসবুকে দেয়া দীর্ঘ সময়ের ভিডিওগুলোর মাধ্যমে পেজের ফলোয়ারও বাড়াতে পারবেন সৃজনশীল ফেসবুক ব্যবহারকারী। সূত্র জানিয়েছে, বিজ্ঞাপন পেতে ব্যবহারকারীকে কোন কষ্টই করতে হবে না। ফেসবুক থেকেই এই বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। ব্যবহারকারীকে কেবল ফেসবুকে ‘মনিটাইজেশন’ নীতিমালার অধীনে আসতে হবে। নীতিমালার অধীনে যেসব বিজ্ঞাপনদাতা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়, সেসব বিজ্ঞাপন ব্যবহারকারী বা নির্মাতাদের ফেসবুক পেজের ভিডিওর মধ্যে প্রচার করবে ফেসবুক। বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রদত্ত অর্থ থেকেই এই মূল্য পরিশোধ করা হবে।এ্যাডব্রেকস চালু করতে প্রথমেই ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইলের অধীনে একটি স্বতন্ত্র পেজ থাকতে হবে। যদি কোন ফ্যান পেজ না থাকে তবে প্রথমেই একটি ফ্যান পেজ তৈরি করতে হবে। এটি যে কোন ধরনের পেজ হতে পারে। নিজে ও অন্যরা আগ্রহী এমন যে কোন পেজ তৈরি করতে পারেন। ফেসবুক পেজের একেবারে ওপরের হোম ট্যাবের পাশেই থাকা ক্রিয়েট ট্যাবে ক্লিক করে সহজেই একটি পেজ তৈরি করা যায়। এরপর এই পেজেই সৃজনশীল ভিডিও আপলোড করতে হবে। আর পেজ খুলে ভিডিও আপলোড করার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু আয় করা যাবে না। এজন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীর বয়স কম পক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এমন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই পাশের দেশ ভারতে ফেসবুক থেকে তরুণরা আয় করা শুরু করেছে। বাংলাদেশেও এ হাওয়া লেগেছে। বাংলাদেশে ‘এ্যাডব্রেকস’ সুবিধা চালু করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। এখন দক্ষ যোগ্য তরুণ তরুণীরা এই এ্যাডব্রেকস থেকে সহজেই উপার্জন করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এ্যাডব্রেকস দিয়ে তরুণ-তরুণীরা বড় অঙ্কের টাকা আয় করছেন। দেশে এই প্রথম ফেসবুক আপলোড করা ভিডিওতে বাংলা ও ইংরেজী উভয়ই ভাষার সুবিধা দিয়েছে। এখন যোগ্য প্রকাশক ও নির্মাতারা এ্যাডব্রেকস সুবিধার মাধ্যমে ফেসবুকে দেয়া ভিডিওগুলো থেকে আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়-ফেসবুক পেজের ফলোয়ারও বাড়াতে পারবেন। ফেসবুকের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এই সুবিধা চালুর উদ্যোগ হিসেবে ফেসবুক বাংলাদেশেও এই সেবা সম্প্রসারিত করল। ফেসবুক জানে, বিভিন্ন দেশের প্রকাশক ও নির্মাতারা সব সময় তাদের ফলোয়ারদের সঙ্গে থাকতে ভাল ভাল ভিডিও তৈরি করে। আর এসব ভিডিও আপলোড করেন। এ সব প্রকাশক ও নির্মাতাদের সহায়তা দিতে সুযোগ তৈরি করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বিশ্বের যেসব দেশ ও ভাষায় এই সুবিধা পাওয়া যায় তার তালিকাও প্রকাশ করেছে তারা। এ্যাডব্রেকস এ যোগ দিতে প্রকাশক ও নির্মাতারা ভিজিট করতে পারেন এই ঠিকানায় সব/লড়রহধফনৎবধশং, ঈৎবধঃড়ৎ ঝঃঁফরড় ভন। অথবা তাদের পেজের ভিডিও ইনসাইট অপশনে। যেখানে যাদের দক্ষতা শর্তের সঙ্গে মিলবে না, তারা ফেসবুক ফলোয়ার, ভিডিও ভিউয়ার এবং মনিটাইজেশন ইলিজিবিলিটি স্ট্যান্ডার্ডস্ কমপ্লায়েন্সের ওপর একটি গ্রাফি প্রেজেন্টেশন দেখতে পাবেন। যেখানে প্রতিটি পেজের যোগ্যতা অর্জনের অগ্রগতি ট্র্যাক করা যাবে। মনিটাইজেশন ইলিজিবিলিটি স্ট্যান্ডার্ডস্ কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রকাশক ও ক্রিয়েটর স্টুডিওতে একটি নতুন ভিজ্যুয়ালাইজেশন দেখা যাবে। যা নির্দেশ করবে পলিসি ভঙ্গ করা হয়েছে কি না। পলিসি ভঙ্গ করা হলে ফেসবুক থেকে আয় ও তাদের যোগ্যতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও সেখানে তারা নিয়ম ভঙ্গের তালিকা দেখতে পারবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওই তালিকা থেকে সরাসরি আপীল করা যাবে। যখনই প্রকাশক ও নির্মাতারা এ্যাডব্রেকস’র জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন সেই মুহূর্তেই তাদের আপলোড করা ভিডিওতে এ্যাড চালু করতে পারবেন। এছাড়াও যোগ্য হওয়ার পর ফেসবুক পেজগুলো একসঙ্গে একাধিক ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমে তাদের পেজের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে পারবেন ও সেখান থেকে আয় করতে পারবেন। এ্যাডব্রেকস যোগ্যতা অর্জন ও ব্যবস্থাপনা ও ন্যায্য অর্থ উপার্জন নির্ভর করবে কনটেন্টের ওপর। দর্শকরা এ ধরনের ভিডিও দেখার জন্য বার বার ওই পেজে ফিরে যাবেন। যেখানে ফেসবুকের ইলিজিবিলিটি স্ট্যান্ডার্ডস্ শুধু প্রকাশক ও নির্মাতাদের এ্যাডব্রেকের মাধ্যমে আয় নিশ্চিত করতে প্রাথমিক গাইড লাইন দিতে পারে। তবে ভাল কাজটি তাদের নিজেদেরই তৈরি করতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ওয়ার্কপয়েন্ট এন্টারটেইনমেন্ট ফেসবুক পেজে থাইল্যান্ড গট ট্যালেন্ট নামে একজন জাদুকরের পারফর্মেন্সের ওপর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে ৩০ লাখ (৩ মিলিয়ন) ফেসবুক ব্যবহারকারী সেটা দেখেন। যাদের মধ্যে ৫১ শতাংশ দর্শক এক মিনিটের বেশি সময় ধরে ওই ভিডিওটি দেখেন। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশ মানুষ এ্যাডব্রেকসর পরেও সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখেন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দীর্ঘ কনটেন্ট তৈরি করা বিষয়ে প্যাস্কুয়েলে স্কিয়ারাপ্পা নামের একজন তার ফেসবুক পেজে নিউজার্সিতে রান্নাঘরে ধারণ করা প্রিয় ইতালিয়ান রেসিপি তৈরির ওপর ভিডিও পোস্ট করেন। ১০ মিনিটের বেশি সময়ের এই ভিডিওর প্রাসঙ্গিক কনটেন্টের ওপর দর্শক বা ফলোয়ারদের মনোযোগ ধরে রাখতে বা দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে তার ভিডিওগুলো আদর্শ ধরা হয়েছে। বিশ্বস্ত দর্শক তৈরি করার বিষয়ে বলা হয়েছে, অল ডেফ’ র মজার ভিডিওটি ভাল কনটেন্টের প্রতি দর্শকদের আগ্রহের বিষয়ে একটি চমৎকার উদাহরণ। প্রায় ৭০ শতাংশ দর্শক এই ভিডিওটি তাদের ওয়াচলিস্ট ও সার্চ অপশনে যুক্ত করেছে। যে দর্শক নতুন নতুন ভিডিওর প্রতি আগ্রহী হন, সে অর্থ উপার্জনে বেশি সহায়ক। নিজের কমিউনিটিকে যুক্ত করার বিষয়ে বলা হয়, জয় শেঠি তার নিজের কমিউনিটির মানুষের জীবন গড়তে গভীর অর্থপূর্ণ ও জ্ঞানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করেন। তিনি তা এ্যাডব্রেকস পোস্ট করেন। এটি বিপুলসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যায়। সাধারণ প্রোগ্রামগুলোর বিজ্ঞাপন বিরতির পর ৭০ শতাংশ দর্শক ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখেছেন। এ্যাডব্রেকসর পরেও ভিডিওটি দেখার জন্য এই ভিডিওর গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি ৮০ শতাংশ দর্শককে অনুপ্রাণিত করেছে। বিপুল সংখ্যক মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার জন্য উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিল এই ভিডিওটি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে আয় খুবই সাধারণ, সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন। এটা ব্যবহার করা খুবই সহজ ও ব্যবহারের একটি স্পষ্ট প্রক্রিয়া আছে। একটি অর্থপূর্ণ কমিউনিটি গড়ে তোলা জীবনে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্যপূর্ণ ও অর্জিত অর্জনের মধ্যে একটি। বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। যা আমাদের জন্য আশীর্বাদ ও এটা করতে পেরে আমি খুবই কৃতজ্ঞ। এটা মানুষের জীবনযাত্রার রূপান্তর এবং বিশ্বব্যাপী ব্যতিক্রম কিছু করার মানসিকতার ফল। আমি ফেসবুকের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়ে খুবই খুশি, যে প্ল্যাটফর্ম আমার কথা লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে শেয়ার করতে সাহায্য করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভন.সব/লড়রহধফনৎবধশং ও ফেসবুকের ঈৎবধঃড়ৎং খধঁহপযঢ়ধফ ঢ়ৎড়মৎধস এই পেজ ভিজিট করতে হবে।
×