ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি যুগের অবসান

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ জানুয়ারি ২০১৯

নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি যুগের অবসান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস মোকাবেলাকে ঠিক রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক সংলাপে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আগামীকাল ৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) শপথ গ্রহণ করবেন। তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ এর নির্বাচনে মুসলিম লীগের যুগের যেভাবে অবসান ঘটিয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেভাবে ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সামরিক শাসন মদদপুষ্ট সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক বাহক বিএনপি-জামায়াত যুগের অবসানে সূচনা ঘটাল বা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির বিদায় ঘণ্টা বাজাল। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল ৩ জানুয়ারি সংসদ সদ্যরা শপথ নেবেন। এর আগে আজ বুধবার গেজেট জারি হবে। সুতরাং মহজোটের সরকার গঠন হতে যাচ্ছে, এটা অবধারিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নতুন সরকার পাব। গত রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রাপ্ত ফলে দেখা গেছে, ২৮৮ আসনে (আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, জাসদ ২, বিকল্পধারা ২, তরিকত ফেডারেশন ১, জেপি ১) বেসরকারীভাবে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি জোট অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি (বিএনপি ৫, গণফোরাম ২) আসন। স্বতন্ত্রসহ অন্যরা জয় পেয়েছেন ৩টি আসনে। নতুন সরকারের আকার কেমন হবে এবং নতুন মন্ত্রিসভায় কতজন নতুন মুখ আসতে পারে- জানতে চাইলে জাসদ একাংশের সভাপতি ইনু বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, এই ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে যোগ্য ও কার্যকরী লোক দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবিধানিক ও আইনগত নিয়ম রক্ষা করেই শপথ নেবেন সংসদ সদস্যরা এবং মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভা কবে গঠন করা হবে- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সময়টা আমি বলতে পারব না। সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ার পরই মন্ত্রিসভায় যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। সুতরাং এটা প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কবে কখন ও কাদেরকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। নতুন সরকারে কারা বিরোধী দল হবে- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পার্টি যেহেতু দলগতভাবে আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে। শেখ হাসিনা যদি আমন্ত্রণ জানান আর তারা গ্রহণ করে তবে তারা মন্ত্রিসভায় যাবে, আর গ্রহণ না করলে জোটের অন্যান্য শরিকদের দিয়ে সরকার গঠন হবে। নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জের হচ্ছে, সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়নটা রক্ষা করে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া জঙ্গী সন্ত্রাস দমন করে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেই শান্তি বজায় রেখে সাম্প্রদায়িকতা এবং সামরিক শাসনের যে জঞ্জাল এখনও রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন তা আমি পরিষ্কার করে বলছি- দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন এবং সুশাসনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সবদিক থেকে এই নির্বাচনে গণমাধ্যম নির্বিঘেœ কাজ করতে পেরেছে। সেই দিক থেকে আমি সন্তুষ্ট। শেখ হাসিনা মহাকর্মষজ্ঞই মহাজোট সরকারে অভাবনীয় বিজয় এনে দিয়েছে। বিএনপি প্রার্থীদের আয়েশী মনোভাব ও মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্যই তাদের ভরাডুবির কারণ হলেও আরও কারণ রয়েছে। জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, ধ্বংসের অপরাজনীতি অনুসরণ করার ফলেও তাদের এই ভরাডুবি হয়েছে। এই নির্বাচনটা সবচেয়ে কম সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচন, এই নির্বাচনটা সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনটা সবচেয়ে বেশি উৎসবমুখর নির্বাচন। বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় হয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এজেন্টরা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগের দরখাস্ত দিয়ে চলে যেতে পারতেন। আমার জানা মতে বিএনপির এজেন্টরা কোন লিখিত অভিযোগপত্র দেননি। এই অভিযোগটা প্রত্যাখ্যান করছি। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এজেন্ট দিতে পারেননি। হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ আমরা দেখেছি, সেখানে মুসলিম লীগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা পক্ষ ত্যাগ করে এবং জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিলে নৌকার বিজয় ও বিপ্লব এনে দেয়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে যেভাবে মুসলিম লীগের যুগের যেভাবে অবসান ঘটিয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেভাবে ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সামরিক শাসন মদদপুষ্ট সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারকবাহক বিএনপি-জামায়াত যুগের অবসানে সূচনা ঘটাল বা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির বিদায় ঘণ্টা বাজাল। বিএনপি-জামায়াত যখনই পরাজিত হয় তারা নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৯৬ সালে ও ২০০৮ সালেও তারা এই দাবি করেছে। এটা তাদের রাজনৈতিক বদ অভ্যাস। এই বদ অভ্যাসের সূত্র ধরে তারা আগামীতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করবে। দেশবাসীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাসদ সভাপতি বলেন, বিএনপি পুনর্নির্বাচনের দাবির মাধ্য দিয়ে একটা ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করল, যা অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিএনপি রাজনৈতিক বদ অভ্যাস পরিহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরত আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাসানুল হক ইনু। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য নতুন ওয়েজবোর্ড হবে ॥ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা টেলিভিশন সাংবাদিকদের জন্য নতুন ওয়েজবোর্ড হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। নতুন বছরে নতুন ওয়েজবোর্ডে টেলিভিশনের সাংবাদিকের জন্য কোন সুখবর আছে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যে ওয়েজবোর্ড গঠন করেছিলাম তাদের যে রিপোর্ট এসেছে যেটা মন্ত্রিসভায় গেছে। মন্ত্রীদের নিয়ে যে উপকমিটি হয়েছে ভোটের আগে সেই কমিটির একটি সভা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় সেই সাব-কমিটি কাজ করবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, রিপোর্টে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য ওয়েজবোর্ড দিতে হবে বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আছে। সুতরাং ওটা দেয়ার জন্য প্রাথমিক প্রশাসনিক কাজটা সম্পন্ন হলে নতুন সরকার এবং তথ্য মন্ত্রণালয় এটা সম্পন্ন করবে। সুতরাং নতুন বছরে আমি আশা করছি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের জন্য নতুন ওয়েজবোর্ড হবে। পাশাপাশি সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম মজুরি বোর্ড যে সুপারিশ করেছে তা পর্যালোচনায় গত ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রীকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দেয় মন্ত্রিসভা। ওই কমিটিতে শিল্পমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত উপ-কমিটির একটি সভাও হয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীদের নিয়ে উপ-কমিটি গঠনের খবর জানানোর সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছিলেন, আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নবম বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এজন্য মন্ত্রিসভা কমিটিকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। এই কমিটি (মন্ত্রিসভা কমিটি) যেটা চূড়ান্ত করবে সেটাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। যে সুপারিশ এসেছে উনারা তা পর্যালোচনা করবেন। পাঁচ শ্রেণীতে ১৫টি বেতনক্রম নির্ধারণে সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল সেদিন বলেন, প্রথম তিন গ্রেডে ৮০ শতাংশ এবং শেষের তিন গ্রেডে ৮৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নবম ওয়েজবোর্ড সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে সুপারিশ দিলেও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের কর্মীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে কোন সুপারিশ সেখানে ছিল না। ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের মূল বেতন ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে অষ্টম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার, যা ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হয়। আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ নিজামুল হককে প্রধান করে গত ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করে সরকার। নবম ওয়েজবোর্ডকে নতুন বেতন কাঠামোর বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ দিতে ছয় মাস অর্থাৎ গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময় দেয়া হলেও পরে বোর্ডের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা গত ১ মার্চ থেকে কার্যকর ধরা হয়।
×