ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেপরোয়া বাস কেড়ে নিল দুই গার্মেন্টস শ্রমিকের প্রাণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২ জানুয়ারি ২০১৯

বেপরোয়া বাস কেড়ে নিল দুই গার্মেন্টস শ্রমিকের প্রাণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইংরেজী নতুন বছরের শুরুতেই বেপরোয়ার গতির বাস চাপায় দুই নারী গার্মেন্টস শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ঘাতক বাসসহ চালককে আটক করেছে। শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, হাতিরঝিল, রামপুরাসহ আশপাশের এলাকায় শত শত গার্মেন্ট শ্রমিক রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের কারণে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। মানুষের দুর্ভোগ ছিল চরমে। বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি বাস ভাংচুর করেছে। নির্বাচনের পর পরই এমন ঘটনার সুযোগ নিয়ে পরাজিত শক্তিরা যাতে কোন ধরনের নাশকতার ঘটনা না ঘটাতে পারে, এজন্য পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে মালিবাগ রেলগেট থেকে আবুল হোটেলের মাঝামাঝি জায়গায় ওভারব্রিজের কাছে ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস সদরঘাট থেকে গাজীপুর যাচ্ছিল। ওই সময় দুই গার্মেন্টস কর্মী নাহিদ পারভীন পলি (২০) ও মিম (১৭) রাস্তা পার হচ্ছিল। বেপরোয়া গতির বাসটি দুই গার্মেন্টস শ্রমিককে চাপা দেয়। বিকট শব্দের সঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিকদের চিৎকার ভেসে আসে। মুহূর্তেই আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মিমের মৃত্যু হয়। পুরো রাস্তা রক্তে লাল হয়ে যায়। পলিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। লাশ দুটি হাসপাতালটির মর্গে পাঠানো হয়। মিমের মা জরিনা বেগম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিহত পলির বাড়ি নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলায়। মিমের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়। তারা মগবাজারের পূর্ব নয়াটোলার একটি বাড়ির এক রুম ভাড়া নিয়ে থাকতেন। গার্মেন্টস শ্রমিকরা জানান, তারা রামপুরা এলাকার এমএইচ গার্মেন্টসের শ্রমিক ছিলেন। গার্মেন্টসটির কোয়ালিটি বিভাগে কাজ করতেন। কর্মস্থল থেকে দুপুরের খাবার খেতে বাসার যাওয়ার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে। রামপুরা থানার ওসি এনামুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার পর পরই আশপাশের সব গার্মেন্টস থেকে শত শত শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় জনতা ও পথচারী। মুহূর্তেই মধ্যেই পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় অবস্থান নিলে পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থায় নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা সহকর্মীর মৃত্যুর ক্ষোভে কয়েকটি বাস ভাংচুর করেন। ততক্ষণে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে যায়। ঘাতক বাসটিকে চালকসহ আটকের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এ অবস্থা চলছিল। নির্বাচনের পর পরই এমন ঘটনার সুযোগ নিয়ে যাতে কোন গোষ্ঠী চোরাগুপ্তা হামলা বা নাশকতা চালাতে না পারে এজন্য এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এমন ঘটনার পর মালিবাগ থেকে রামপুরাগামী যানবাহনকে ডাইভারশন দিয়ে মগবাজার থেকে হাতিরঝিলের ভেতর দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে পুলিশ। হাতিরঝিল থানার ওসি আবু মোহাম্মদ ফজলুল করিম জনকণ্ঠকে জানান, নির্বাচনের পর পরই এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার আড়ালে কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে এজন্য এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের হচ্ছে। লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
×