ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় আর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সর্বত্রই

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২ জানুয়ারি ২০১৯

নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় আর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সর্বত্রই

ওয়াজেদ হীরা ॥ বেলা এগারোটা। রাজধানীর কাওরান বাজার শাখার ইউসিবি ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেল কর্মীরা নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি আলোচনা করছেন সম্প্রতি শেষ হওয়া জাতীয় নির্বাচন নিয়েও। আওয়ামী লীগের বিপুল আসনে জয়লাভ একই সঙ্গে বিএনপির এমন ভরাডুবির নানা কারণ নিয়েও আলোচনা করছেন কেউ কেউ। ব্যাংকে গ্রাহকদের চাপও কম। তাই সময় পেলে এক সহকর্মী অন্য সহকর্মীর চেয়ারের কাছে এসেও আলোচনা করছেন। কে কোথায় ভোট দিয়েছেন সে আলোচনাও ছিল তুঙ্গে। ব্যাংক-বীমাসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আলোচনার মুখ্য বিষয় এখন সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফাঁকা রাজধানীতে মানুষের সমাগম বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনার অন্যতম নির্বাচন নিয়ে হচ্ছে নানা রকম মন্তব্য ও আলোচনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সোমবার রাত থেকেই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। আর সেই সঙ্গে ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর ব্যস্ততা ফিরে পেতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা। প্রধান সড়কগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে মানুষ ও যানবাহনের চাপ। নির্বাচনের পরদিন অফিস খোলা থাকলেও অনেকেই রাজধানীর বাইরে ছিলেন। তবে নতুন বছরের প্রথম দিন অনেকেই ছিল উপস্থিত। ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি সহকর্মীদের সঙ্গে মন খুলে নির্বাচন এবং ভোট প্রদান নিয়ে আলোচনা করেন। শুধু ব্যাংক নয় সরকারী-বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিএসসিতে বসে আড্ডা দিতে দিতে কথা বলেন স্বপ্নীল ও তার বন্ধুরা। নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। জানতে চাইলে রিয়াদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ২০১৪ সঙ্গে ভোট দিতে পারি নাই। তবে ইউপি নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম। এবার শঙ্কা ছিল কি হয়। তবুও এলাকায় যেহেতু ছিলাম সাহস করে কেন্দ্রে গিয়েছি ভোটও দিয়েছি। জাতীয় নির্বাচনের প্রথম ভোট আনন্দটাই অন্যরকম ছিল। পাশে থাকা বন্ধু ইমরান ভোট দিতে পারেননি বলে আফসোস করছিলেন। এছাড়াও একই জায়গায় একাধিক স্থানে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরপরই ভোট নিয়ে নানারকম আলোচনা শোনা যায়। তাবাসুম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন সরকার গঠন হলে উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় দেশ আরও পাল্টে যাবে। রাজধানীর একাধিক জায়গায় দেখা গেছে, মানুষের মধ্যে একটা কৌতূহল এখনও কাজ করছে নতুন সরকার নিয়ে। শেখ হাসিনা সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় কে থাকবেন কে বাদ পড়ছেন তা নিয়েও আলোচনার চলছে অলিতে গলিতে ও চায়ের দোকানে। এদিকে গত রবিবার অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগের দুই দিন শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক সরকারী ছুটি। সোমবার ছিল ব্যাংক হলিডে। এসব ছুটি ও ভোট দিতে অধিকাংশ মানুষ রাজধানী ছেড়ে বাড়ির পানে ছোটেন। আবার নির্বাচন শেষে সবাই ফিরছেন কর্মস্থলে। ফলে চেনাজানা বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে মনের কথাগুলো বলে নিচ্ছেন। যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে নিজ নিজ এলাকার নির্বাচনের নানামুখী সমীকরণ। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল যখন আবারও সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তাতে কে কোন দায়িত্ব পাবে সে সব বিষয়ও থাকছে আলোচনার একটা অংশজুড়েও। তবে বন্ধের পর নতুন বছরের প্রথম দিন মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) সকাল থেকে চিরচেনা স্বাভাবিক কর্মব্যস্ত রূপে ফিরতে শুরু করে ঢাকা। জীবিকা ও কর্মের খাতিরে যারা রাজধানীতে থাকেন তাদের বেশিরভাগই সোমবার রাতে রাজধানীতে ফেরেন। আর যারা বাকি ছিলেন তাদের মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীতে ফিরতে দেখা যায়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় জয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের চা খেতে খেতে নানা রকম মন্তব্য শোনা যায়। তবে অধিকাংশ আলোচনায় স্থান পায় কে হবেন আগামীর অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বলেন, অনেকের নামই শোনা যাচ্ছে। বর্তমান অর্থমন্ত্রীও ভাল। আরও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করতে চান। দেখা যাক শেখ হাসিনা কোন চমক দেখান। এদিকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে সম্ভাব্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ড. আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, বর্তমান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানও রয়েছেন আলোচনায়। রাজধানীর একাধিক পয়েন্টে বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার আলোচনাও শোনা যায়। নির্বাচনী দায়িত্ব কে কোন এলাকায় পালন করেছেন সে সবের পাশাপাশি অন্য বছরগুলোর চেয়ে নির্বাচনে সহিংসতা কম হয়েছে কেন তা নিয়েও বেশ আলোচনা করেন কোন কোন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করে ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, দেখুন আমরা চাকরি করলেও আমরাও মানুষ কোন দলের প্রতি ভাল লাগা থাকতে পারে।
×