ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অভিমত

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২ জানুয়ারি ২০১৯

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোন ধরনের হরতাল-অবরোধ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে নতুন সরকার গঠনে দেশের বাইরে সুনাম বাড়ায় বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও চলমান মেগা প্রকল্পে গতি সঞ্চার হলে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও তাদের মত। দেশের জনগণ উন্নয়নের পক্ষে রায় দেয়ায় নতুন সরকার আরও বেশি উন্নয়নমুখী হবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসার উন্নয়নে প্রথমেই ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন সূচক ‘ডুয়িং বিজনেস’ এ উন্নতি ঘটাতে হবে। কমাতে হবে ব্যাংক ঋণে সুদের হার। নিশ্চিত করতে হবে জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতির লাগাম টেনে নামিয়ে আনতে হবে সহনীয় মাত্রায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন কয়েক ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন অভিমত আর প্রত্যাশার কথা জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, নতুন সরকারের হাত ধরে আমাদের যেসব অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণ হবে। এসডিজির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বর্তমানে যে পরিবেশ, তা প্রকৃতপক্ষে আরও ব্যবসাবান্ধব হয়ে উঠবে। প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ সরকার গত ১০ বছরে যেভাবে কাজ করেছে, যেভাবে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দৃশ্যমান উন্নয়নের একটি নজির রাখতে পেরেছে, আমরা আশা করব এটা আগামীতে আরও বেশি হবে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং বিশেষ করে ব্যবসাকে এগিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবসার যে অনুকূল পরিবেশ আছে, সেটাতে আরও গতি আনতে হবে। ব্যবসা শুরুর পরিবেশ সূচকের উন্নয়নে জোর দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসা উন্নয়ন সূচক ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে এখনও কিন্তু আমরা ১৭৬তম স্থানে আছি, সে জায়গা থেকে উঠে আসার রাজনৈতিক সদিচ্ছা আরও বাড়াতে হবে। সূচকটির উন্নয়নে প্রধামন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে। কিন্তু তারপরের স্তরের অনেকের মধ্যে এটি নিয়ে তেমনভাবে কাজ করতে দেখা যায় না। সূচকটির উন্নয়নে সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তাদের ক্ষেত্রে কোন হয়রানি থাকবে না, দুর্নীতির মাত্রা এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে, এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে একজনের ফাইল পড়ে না থাকে। উনার টেবিলে কেন পড়ে আছে, তার জবাবদিহিতা তাকে করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখানে ওয়ান স্টপ সার্ভিসকে প্রাধান্য দিতে হবে, যাতে একটা মানুষ ব্যবসা শুরু করতে গেলে সার্বিক সহযোগিতা পায়। আমরা চাই দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। আমাদের দেশের ৯৯ ভাগ ব্যবসায়ী ভাল। ১ শতাংশের জন্য দরজা বন্ধ করে রাখা যাবে না, এটা খোলা রাখতে হবে। এবং দুর্নীতি সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে হবে। নতুন সরকারের হাত ধরে ব্যবসার আরও উন্নয়ন হবে মন্তব্য করে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাতলুব আহমেদ বলেন, দেশের উন্নয়নে নতুন সরকারে পূর্বের ধারবাহিকতাই থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। দেশে উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, যেসব বিষয় আছে, সেসব বিষয়ের ধারাবাহিকতা চাই আমরা। অতীতের মতোই ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদের হার আরও কমাতে হবে। দ্রুতই ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হোক সেটা আমরা দেখতে চাই। এটি যতই দ্রুত করা যাবে ততই ভাল। শিল্প পার্কগুলোর বাস্তবায়ন আমরা দ্রুত দেখতে চাই। গ্রামগঞ্জের অবকাঠামোর উন্নয়ন হবে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের ন্যায় দেশে একটা ইলেকশন হলো ব্যবসায়ীদের কোন ধরনের ক্ষতি ছাড়া। মানে একটা দিনের জন্য আমাদের হরতাল-অবরোধ বা কোন কিছু ফেস করতে হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্যে কোন ধরনের আঘাত আসেনি সে রকম একটি নির্বাচন বাংলাদেশে হয়েছে। সারা পৃথিবীর কাছে আমাদের ইমেজ অনেক বাড়বে। যার কারণে বিদেশী বিনোয়গকারীরা ভবিষ্যতে আমাদের দেশে আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। দেশের বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে। আর এসব বাড়লেই একটি দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যত বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হবে।
×