ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচিত প্রার্থী রনির ভরাডুবির নেপথ্যে-

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২ জানুয়ারি ২০১৯

আলোচিত প্রার্থী রনির ভরাডুবির নেপথ্যে-

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ নিজ দলের নেতাদের সমর্থন আদায় ও কর্মীদের সংগঠিত করতে ব্যর্থতা, নিজেকে বাসভবনে এবং ফেসবুকে সীমাবদ্ধ রাখা, মাঠে-ময়দানে প্রচারে না নামা, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দিতে না পারা, একের পর এক বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে ফেলাসহ আরও কিছু কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় ভরাডুবি ঘটেছে বহুল আলোচিত প্রার্থী গোলাম মাওলা রনির। পটুয়াখালী-৩ আসনে গোলাম মাওলা রনির পরাজয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে এমন আরও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। গোলাম মাওলা রনি পটুয়াখালী-৩ আসনে নবম সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে দলের মনোনয়ন লাভ করেন। যা এলাকার পাশাপাশি গোটা দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে তার শোচনীয় ব্যর্থতা এখন আবার এলাকার আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের মুখে মুখে ফিরছে তার পরাজয়ের কারণসমূহ। গোলাম মাওলা রনি এবার নির্বাচনে হেরেছেন আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থী এসএম শাহজাদার কাছে। নৌকার প্রার্থী এসএম শাহজাদা ২ লাখ ১৭ হাজার ২৬১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রাপ্ত ভোটের দিক দিয়ে রনির ধানের শীষের অবস্থান তৃতীয়। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৪৫৯ ভোট। অথচ হাতপাখার প্রার্থী মোঃ কামাল হোসেন ৯ হাজার ৯ ভোট পেয়ে রনির ওপরে আছেন। অর্থাৎ ভোটের দিক থেকে রনির জামানত পর্যন্ত বাজেয়াফত হয়েছে। কিন্তু ভোটের মাঠে বিএনপির ধানের শীষ কিংবা গোলাম মাওলা রনির এ দুরবস্থা কেন? এর নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। যার প্রথমেই রয়েছে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের তীব্র ক্ষোভ। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুনসহ ৭ জন ডাকসাইটে নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তাদের বঞ্চিত করে গোলাম মাওলা রনিকে মনোনয়ন দেয়া হয়। যে কারণে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে একমাত্র মামা শ্বশুর বিএনপি নেতা শাহজাহান খান ও মামাত শ্যালক শিপলু খান অর্থাৎ বাবা-ছেলে ছাড়া অন্য কারও সমর্থন আদায়ে গোলাম মাওলা রনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ মাঠের কর্মীরা ছিল মনোনয়ন বঞ্চিতদের পক্ষে। এক্ষেত্রে শাহজাহান খান-শিপলু খানও কর্মীদের পক্ষে নিতে পারেন নি। বরং মাঠের নেতাকর্মীরা গোলাম মাওলা রনিকে এক ধরনের বয়কট করেছে বলা যায়। দলের অভ্যন্তরে রনির মনোনয়নে এতটাই ক্ষোভের সৃষ্টি হয় যে, গত ১৫ ডিসেম্বর তার স্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি নিজ দলের কর্মীরা ভাংচুর করে। গোলাম মাওলা রনির ফাঁস হওয়া একাধিক টেলিফোন সংলাপেও এর প্রমাণ মেলে। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের বিষয়টি এতটাই ওপেনসিক্রেট ছিল যে, তফসিল ঘোষণার পরেও রনি দীর্ঘদিন এলাকায় আসেন নি। এমনকি মনোনয়নপত্র দাখিল করতেও নিজ নির্বাচনী এলাকায় আসেন নি। প্রতীক বরাদ্দের পর ১২ ডিসেম্বর তিনি প্রথম নিজের এলাকায় আসেন এবং উলানিয়া বন্দরের নিজ বাসভবনে ওঠেন। এরপর থেকে আর ভোটের মাঠে নামেন নি। অংশ নেন নি প্রচারে। এমনকি এলাকার কোথাও তার পোস্টার, ব্যানার, লিফলেটও দেখা যায় নি। নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত হয়নি কোন কমিটি। নবম সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার পরে গোলাম মাওলা রনির শ্যালক বিএনপি নেতা মকবুল খানের নেতৃত্বে গঠিত ভাইয়া বাহিনীর হাতে নিজ দল ও বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী লাঞ্ছিত-মারধরের শিকার হন। যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই। তার বিরুদ্ধে বিএনপির কর্মীরাই বিক্ষোভ প্রদর্শন পর্যন্ত করে। গলাচিপা শহরে ঝাড়ু মিছিল হয়। গত পাঁচ বছরে এলাকার মানুষের সঙ্গে তার কোনই যোগাযোগ ছিল না। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদেরও চিনতেন না। যে কারণে ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারেন নি। তার নির্বাচনী কর্মকা- কেবল নিজের বাসভবন আর ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই তিনি নিজের ফেসবুকে একের পর এক আপডেট দিয়ে কেবল বিতর্ক তোলার চেষ্টা করেন। নির্বাচনী মাঠে অনুপস্থিত থেকেও ফেসবুকে দেয়া এক ভিডিওবার্তায় দেড় লাখ ভোট পেয়ে বিজয়ী হওয়ার ঘোষণা দিয়েও তিনি বিতর্ক তোলেন। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া এবং ধানের শীষকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েও তিনি ভিডিওবার্তা দেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। ভোটাররা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এমন আরও বেশ কিছু কারণে শোচনীয় পরাজয় হলেও গোলাম মাওলা রনি তা মানতে নারাজ।
×