ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে দেশে নববর্ষ উদযাপন

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২ জানুয়ারি ২০১৯

দেশে দেশে নববর্ষ উদযাপন

আতশবাজির ঝলকানি, আলোর খেলা আর নানা রঙে, নানা সাজে আনন্দোৎসবের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে ২০১৮ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। সময়ের ব্যবধানের কারণে বিশ্বের একেক দেশে নববর্ষ শুরুর মুহূর্তটি একেক সময়ে উদযাপন করছে মানুষ। এদিক থেকে সামোয়া দ্বীপ, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আছে বর্ষবরণ করে নেয়ার প্রথম সারিতে। বিবিসি ও এএফপি। বিশ্বে সবার প্রথমেই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে সামোয়া দ্বীপ। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড স্বাগত জানিয়েছে ২০১৯ সালকে। আতশবাজির শব্দ আর ঝলকানির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের মানুষ। সেখানে এখন চলছে বর্ষবরণের উৎসব। নতুন বছর পদার্পণের মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ায় সিডনির আকাশও আলোকিত হয়েছে আতশবাজির ঝলকানিতে। অন্যান্য দেশেও এমন আতশবাজি আর আলোক উৎসবের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করছে মানুষ। নতুন বছর মানে নতুন উৎসাহ, নতুন স্বপ্ন। সেই নতুনের উদ্দীপনা নিয়েই মানুষ মেতে উঠেছে আকাশে আতশবাজির খেলায়। বর্ষবরণের সময় সময় হংকংয়ের ভিক্টোরিয়া বন্দর ও হংকং কনভেনশন ও এক্সিবিশন সেন্টারে বর্ণিল আতশবাজির প্রদর্শনী। গোটা বিশ্বে নববর্ষ উদযাপনের প্রায় ১২ ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের ছোট কিছু দ্বীপ বরণ করবে নতুন বছরকে। যুক্তরাজ্যে একজন ছুরিকাহত ॥ ম্যানচেস্টারের ভিক্টোরিয়া রেলস্টেশনে বর্ষবরণের রাতে এক ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন আহত হয়েছেন। সোমবার রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হওয়া ওই হামলায় বয়স ৫০ এর ঘরে থাকা এক পুরুষ ও এক নারী ছুরিকাহত হন। হামলাকারী ব্যক্তি ব্রিটিশ এক ট্রান্সপোর্ট পুলিশ কর্মকর্তার কাঁধেও ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আহত তিনজনের অবস্থা ‘গুরুতর’ হলেও তাদের কারও অবস্থাই প্রাণ-সংশয়ী নয় বলে বিবিসি জানিয়েছে। ছুরি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটকও করেছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ঘটনাটির তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যদিও ছুরি হামলার ঘটনাটির সঙ্গে উগ্র জঙ্গীবাদের কোন যোগ আছে কিনা তা জানাননি তারা। বয়স ত্রিশের ঘরে থাকা আহত পুলিশ কর্মকর্তাকে মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিবিসির প্রযোজক স্যাম ক্ল্যাক ঘটনার সময় ম্যানচেস্টারের ওই রেলস্টেশনেই ছিলেন। তিনি স্টেশনে ট্রাম প্ল্যাটফরমে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাহত হতে দেখেন। হামলাকারী পরে ১২ ইঞ্চির মতো ‘লম্বা কিচেন ছুরি’ নিয়ে যে পথ দিয়ে হেঁটে যায় তার খুব কাছেই ছিলেন স্যাম। ‘সে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল, পুলিশ তার দিকে যাচ্ছিল। এটা ছিল আতঙ্কের, তীব্র আতঙ্কের,’ বলেন বিবিসির এ কর্মী। ৬-৭ জন পুলিশ পরে পিপার স্প্রে ও তাসের (যা দিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য কাউকে অসাড় বানিয়ে রাখা যায়) ব্যবহার করে হামলাকারীকে আটক করে। হামলায় এক নারীর মুখে ও পেটে এবং পুরুষটির পেটে আঘাত লেগেছে। পুলিশের সহকারী প্রধান কনস্টেবল রব পটস বলেন, ‘আজকের রাতের ঘটনা স্বভাবতই সাধারণ মানুষজনকে উদ্বিগ্ন করলেও ঘটনাটির সমাপ্তি ঘটেছে বলে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই। এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এখনকার তথ্য অনুযায়ী আর বিস্তৃত হামলার শঙ্কা নেই বলেও ধারণা করা হচ্ছে’। টোকিওতে হামলায় আহত ৯ ॥ জাপানের রাজধানী টোকিওর একটি জনপ্রিয় সড়কে বর্ষবরণ উদযাপন করতে আসা মানুষের ওপর এক ব্যক্তি দ্রুতগতিতে গাড়ি তুলে দেয়ায় নয়জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মঙ্গলবার পুলিশ ও সংবাদমাধ্যম এ কথা জানায়। মানুষকে হত্যা করার উদ্দেশ নিয়ে ২১ বছর বয়সী কাজুহিরো কুসাকাবি মধ্যরাতের মাত্র ১০ মিনিট আগে টোকিওর ফ্যাশন ডিস্ট্রিক হারাজুকুর তাকাশিতা স্ট্রীটে জনতার ভিড়ের মধ্যে একটি গাড়ি তুলে দেয়। জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্র এনএইচকে পরিবেশিত খবরে বলা হয়, কুসাকাবি পুলিশকে বলেছে সে মানুষ হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে এ গাড়ি হামলা চালিয়েছে। এ বিসয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি। ওই পুলিশ মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, হামলার সময় এক কলেজছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। তার অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, হত্যা প্রচেষ্টা চালানোর অভিযোগে কুসাকাবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুসাকাবি ওই সড়কে তার গাড়ি দিয়ে মোট নয় জনকে আঘাত করে। পুরো রাস্তায় বর্ষবরণকারীদের ভিড় থাকায় তখন পথটিতে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। পরিবারের ৬ জনকে মেরে আত্মহত্যা ॥ থাইল্যান্ডে বর্ষবরণের এক অনুষ্ঠানে শ্বশুরবাড়িতে অবহেলিত বোধ করা এক ব্যক্তি নিজের দুসন্তানসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেছে। তারপর ওই বন্দুকের গুলিতে তিনি নিজেও আত্মহত্যা করেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে পুলিশ। মধ্যরাতের পর মঙ্গলবার বছরের প্রথম দিন শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যেই এ হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে। সোমবার সুচিপ সোরনসাং নতুন বছর উদযাপন করতে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ চুম্ফোনে তার শ্বশুরবাড়িতে যান। ফাতো জেলার একটি বিউটি পার্লারে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি চলার সময় সুচীপ ‘প্রচুর’ মদ্যপান করেন, এরই এক পর্যায়ে নিজের পিস্তল বের করে গুলি শুরু করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফাতোর পুলিশ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল লারপ কামপাপান জানিয়েছেন, নিহতরা সবাই সুচিপের পরিবারের সদস্য, এদের মধ্যে তার নয় বছর বয়সী ছেলে ও ছয় বছর বয়সী মেয়েও রয়েছে। ‘তাদের মাথায় অথবা শরীরে গুলি করা হয়। শ্বশুরবাড়িতে স্বাগত না জানানোয় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তিনি,’ বলেন কামপাপান। এরপর নিজের পিস্তলের গুলিতেই আত্মহত্যা করেন সুচিপ। নিহত বাকি চার জনের মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ, তাদের বয়স ৪৭ থেকে ৭১ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
×