ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিগুলোর করুণ আর্তি

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২ জানুয়ারি ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিগুলোর করুণ আর্তি

যন্ত্রণা আর উৎকণ্ঠায় ভরা শতাধিক ব্যক্তিগত চিঠি পড়লাম। চিঠিগুলোর সবই শেখ হাসিনাকে লেখা। যখন তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, যখন তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রী। আপনজন তিনি, তাঁর নেতা-কর্মী কিংবা যে কোন সাধারণ জনতার কাছে। তাই তো তাঁকে লেখা সব চিঠি। সাধারণভাবে ‘পত্র’ বা ‘চিঠি’কে একজনের থেকে অপরের কাছে প্রেরিত কেবল লিখিত সংবাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু অনেক আগেই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পত্রের ধরন পাল্টে গেছে। ঐতিহাসিকভাবে দুই ব্যক্তির মাঝে কাগজে লিখিত পত্রের আদান-প্রদান বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন। বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতিতে ‘পোস্টেড লেটার’ তার গুরুত্ব হারিয়েছে। ফ্যাক্স এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-মেইলে বার্তা প্রেরণ এর অন্যতম কারণ। তবুও এ শতাব্দিতে অনেকের ব্যক্তিগত পত্রকে সৃজনশীল কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হস্তাক্ষরের জায়গা যদিও দখল করেছে ই-মেইল তবু মানুষ পত্র লিখতে পছন্দ করেন। ব্যক্তিক-অনুভূতিমাখা পত্রে থাকে হৃদয়ের গভীর উপলব্ধি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আনন্দ-আকুলতা, হতাশার কথা। হৃদয়ের উষ্ণতা মাখানো সে সবের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে পত্র লেখকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার অগাধ অনুভূতি। কম্পিউটার ও ই-মেইলের যুগেও হাতের লেখা পত্রকে মানুষকে ধন্যবাদ কিংবা সান্ত¡না জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায় ভাবা হয়। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে- এড়ড়ফ ষবঃঃবৎ ৎিরঃরহম ভববষং সঁপয ষরশব মড়ড়ফ পড়হাবৎংধঃরড়হ, ধহফ রঃ যধং ঃযব ংধসব ঢ়ড়বিৎ ঃড় হড়ঁৎরংয ধ ৎবষধঃরড়হংযরঢ়. হাতের লেখা পত্রে যেহেতু সংশোধনের অবকাশ দেখা যায় না, সে জন্য ব্যক্তির চিন্তার ছাপ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ পায়। মূলত পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া নয় বরং শক্তিশালী সম্পর্কের বুনিয়াদ হলো চিঠি। ব্যক্তির আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন-কল্পনা আত্মপ্রকাশ করে চিঠি বা পত্রের মধ্য দিয়ে। খুব বেশি ব্যক্তিগত পত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর অতি নিকটত্বতা। পত্র লেখা এক ধরনের আবিষ্কার, জীবনের অনেক গোপন প্রান্তের কথা উচ্চারিত হয় এতে। অবশ্য শেখ হাসিনার কাছে লেখা পত্রগুলোতে জীবনের গোপন প্রান্তের কথা নয়, আছে অবারিত ঝরতে থাকা অশ্রুকণা; আছে অসহায়ত্ব নিবারণের প্রার্থনা। বিরূপ কিংবা নির্মম পরিস্থিতির জন্য কারো অভিযোগ নেই তাঁর বিরুদ্ধে কিন্তু আছে একটু সহানুভূতি যাচনা; আছে কাছের মানুষ হিসেবে সত্য কথা অনিবারিতভাবে বলার ধৃষ্টতা। ॥ দুই ॥ চিঠির সবগুলোতেই বর্ণিত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের দ্বারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন আর ধর্ষণের ইতিহাস। পত্র লেখকদের মধ্যে কেউ আছেন নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা, পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্রনেতা, ধর্ষিতার পিতা কিংবা মাতা, স্বামীহারা স্ত্রী; আছে এতিম সন্তানরাও। থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সমীরণ বিশ্বাসকে কেবল রাজনৈতিক আদর্শগত পার্থক্যের কারণে ১৯৯২ সালের ২০ জুলাই প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করে বিএনপি সন্ত্রাসীরা। তাঁর স্ত্রীর পত্রে এই ঘটনার অনুপুঙ্খ বর্ণনা আছে। ১৯৯৩ সালের ৯ মার্চ কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট প্রাঙ্গণে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের দ্বারা হামলার শিকার হন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য শেখ মোঃ হাসান মেহেদী। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার নি¤œাঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় তাঁর মতো আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। প্রত্যেকের পরিবারে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। কোন কোন নেতা-কর্মীকে শিশু সন্তানসহ বাঁচার সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিংবা অনিশ্চিত ভবিষ্যত নেমে এসেছে শিশুর জীবনে। সন্ত্রাসীরা শুধু নেতা বা কর্মীকেই হত্যা করেনি, হত্যা করেছে একটি পরিবারের স্বপ্ন, একাধিক শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যত। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজনীতির মঞ্চে বিরোধী দলের কণ্ঠকে রুদ্ধ করে দিতে সব সময়ই তৎপর ছিল বিগত চারদলীয় জোট সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্মমভাবে হত্যার পরও ওই সরকারের হস্তক্ষেপে আজও কোন অগ্রগতি হয়নি অনেক হত্যার মামলার। তেমনই হত্যার বিচার না পাওয়া অসহায় একটি পরিবার পাবনার ভাঙ্গুর উপজেলার খানমচির ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের পরিবার। শত্রুতা বশত তাকেসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আর দুই কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করে চারদলীয় জোট সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের মে মাসে এই ট্রিপল মার্ডারকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ মিছিলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল পাবনার দুটি থানা চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়ার অধিবাসীরা। ওই হত্যা ও পরবর্তী নানা ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ আছমা খাতুন তাঁর পত্রে। হিংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য অস্ত্র হিসেবে ‘ধর্ষণে’র মতো হীন কাজকেও বেছে নেয় এদেশের তথাকথিত বিএনপি-জামায়াত নামক দল। ঠিক তেমনই হতভাগ্যদের একজন লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা শ্রী রাখাল চন্দ্র মজুমদার। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই ২০০১ সালের ১ অক্টোবর তাঁকে বাড়িতে না পেয়ে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক দুই মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে না পেরে কাপুরুষরা তাঁর ২১ বছর বয়সী বিবাহিত বড় মেয়ে ও নবম শ্রেণী পড়–য়া ছোট মেয়ের ওপর চালায় পাশবিকতা। মেয়ে দুটিকে ধর্ষণ করে বাড়ি থেকে এক মাইল দূরে ফেলে রেখে যায় বিএনপির সন্ত্রাসীরা। দুর্বৃত্তদের সেই ঘৃণ্য কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে এই হতভাগ্য পিতার যন্ত্রণা লাইনের পর লাইনে ব্যক্ত হয়েছে। কেবল রাখাল চন্দ্র মজুমদারের পরিবারই নয়, তৎকালীন সারাদেশে অরাজকতার ঢল নামিয়েছিল বিএনপি জোট সরকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে মনে রাখা দরকার, এই সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে দেশ কখনই নিরাপদ নয়। শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত তিন খ-ে প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন’ (২০০৫) গ্রন্থে ২০০১ সালের নির্বাচন-উত্তর বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রায় তিন হাজার সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ধরন সম্পর্কে লেখা হয়েছে- ‘হত্যার চেয়ে শারীরিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, গৃহে অগ্নিসংযোগ, বলপূর্বক চাঁদা আদায় ও ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটেছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে ছয় বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষিতাকে আরও লাঞ্ছিত করার জন্য ধর্ষকরা তাদের বিবস্ত্র করে প্রকাশ্য জনপদে ঘুরিয়ে চরম পাশবিকতার পরিচয় দিয়েছে।’ (পৃ ১৭) তিনি উল্লেখ করেছেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কারণ মূলত সাম্প্রদায়িক, যার সঙ্গে সম্পর্কিত বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজকে মনোলিথিক ইসলামভিত্তিক সমাজে পরিণত করার মৌলবাদী প্রয়াস। (পৃঃ ১৮) কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন। বিএনপি-জামায়াতের নারী ধর্ষণের মানসিকতা থেকে আমরা শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠির বিষয়বস্তুতে প্রবেশ করলে ২০০১ সালের নির্বাচন-উত্তর সহিংসতার জগতের চেহারা দেখতে পাব স্পষ্টভাবে। নির্বাচনের পূর্বে হিন্দু জনগোষ্ঠীকে শাসিয়ে আসা এবং নির্বাচনে জয়ী হয়ে একটি পর একটি এলাকায় ধর্ষণ, হত্যা ও লুটের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা। সেই ঘটনাগুলোর বীভৎসতা তুলে ধরার জন্য যতটা সম্ভব সবিস্তারে বর্ণনা দিয়েছেন পত্র লেখকরা। বর্ণনার পর বর্ণনায় সন্ত্রাসীদের অপকর্মের চিত্র এঁকেছেন। তখন তাদের অন্যায় কাজের সহযোগী হিসেবে পেয়েছিল পুলিশ প্রশাসনকে। ফলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ‘শান্তির ঠা-া আগুন’ বইয়ে দেয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভেতর। দেশকে তাদের দীর্ঘ দৃঢ় উদ্যত শিশ্নের ছায়ার নিচে স্থাপন করে। একবার খুনের চেয়ে সংখ্যালঘু ও তাদের রাজনৈতিক ঐকমত্যের জনগোষ্ঠীকে চিরকালের জন্য খুন করতে চেয়েছিল সন্ত্রাসীরা। বিশেষত সংখ্যালঘু হিন্দুরা যাতে দেশে না থাকে, আর থাকলেও যেন না থাকে। দশজন গু-া দশ বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করার জন্য সম্মিলিত হলে পিতামাতার অনুরোধে তারা একে একে বালিকাকে গণধর্ষণ করে। এই বীভৎস ঘটনা ২০০১-এর নির্বাচন-উত্তর বাগেরহাটের হিন্দু পরিবারের এক শিশুর ক্ষেত্রে ঘটেছিল। চিঠিগুলো বলে দিচ্ছে বাস্তব ইতিহাসকে আমরা যেন ভুলে না যাই। এ জন্য পত্র লেখকরা মর্মন্তুদভাবে এনেছেন একটি পরিবারের মা, দুটি মেয়ে এবং এক নববধূকে একইসঙ্গে ধর্ষণের ঘটনা। চিঠি পড়ে জানতে পেরেছি, বিএনপির ক্যাডার বাহিনী ২০০৪-এর ২৪ মার্চ ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সমর্থক মোঃ নুরুল ইসলামের দুই বোনকে ধর্ষণসহ মা ও বাড়ির বৌকে ভয়ঙ্করভাবে পিটিয়ে আহত করে। এসব ঘটনার আঘাত সহ্য করতে না পেরে অনেক পরিবারের সকলে মিলে আত্মহত্যাও করেছিল সে সময়। ॥ তিন ॥ পত্রগুলোতে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের প্রতি ঘৃণা উচ্চারিত হয়েছে বারংবার। কারণ তারা অসহায়দের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে, লুট করে নিয়ে গেছে মালামাল ও টাকা-পয়সা; কুপিয়ে হত্যা করেছে, পিটিয়ে মেরেছে। খুন হওয়া পরিবারের জীবিত সদস্যরা এখন জীবন্মৃত। নিপীড়ন ও নির্যাতনের আগে তাদের পরিবার ও শিশুদের নিয়ে জীবনের পুরোটা যে আনন্দের বন্যা ছিল তার কথাও লিখেছেন কেউ কেউ। কিন্তু কেবল আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী হওয়ার জন্য সব সুখ, সব পরিশ্রম, সংসারের ভবিষ্যতের স্বপ্ন সবই শেষ হয়ে গেছে আজ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে স্বামীকে হারিয়ে সহায় সম্পদহীন হয়ে একাধিক নারী চিঠিতে ঝরিয়েছেন যন্ত্রণার কারুণ্য। কেউ কেউ আবার অত্যাচার ও উপদ্রবকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। রাজনীতির প্রতিহিংসায় জ্বলে, পুড়ে যাওয়া জীবনকে আর্তনাদে সচকিত করে তুলেছেন এভাবেই- ‘আমাদের তিন মেয়ের কী হবে?’ এই আর্তনাদ সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ২০০২ সালের ২৫ মে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদারের সহধর্মিণী জায়দা বেগমের। একটি মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্ব কতগুলো মানুষকে জীবনের চরম সঙ্কটে ফেলে দিতে পারে তার সাক্ষ্য হলো এসব পত্রের প্রতিপাদ্য। রাজনৈতিক জীবনের বাইরেও মানুষের যে ব্যক্তি জীবন রয়েছে হত্যাকারীরা বারবার তা ভুলে যায়। বিএনপি-জামায়াতের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা এমন অজস্র ‘জায়দা বেগম’কে করেছে বিধবা, অনেক সন্তান হারিয়েছে তাদের পিতা, অনেক বোন হারিয়েছে তাদের ভাই। এই ঘৃণ্য অপরাধের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জাতি স্বস্তি পাবে না। আবার কোন বাবা মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা পত্র লিখে জানিয়েছেন। এই মর্মান্তিক খবর শোনার পর আমাদের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে? পিতার যন্ত্রণা ও কান্নার ধ্বনি কেমন হয়? নির্যাতিতাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করানো হয়েছিল তখন। সন্ত্রাসীদের অত্যাচারের ঘটনা কেবল ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ কিংবা ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল এমন নয়। ২০০৯-২০১৭ সালেও বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। গুলি করে কিংবা কুপিয়ে হত্যার অনেক দৃষ্টান্ত এ সময়ও আছে। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলে ছাত্র শিবিরের ক্যাডার দলের হামলায় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ আহত হন। পত্রগুলোর ভেতর সে তথ্যও আছে। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাও বেশ কয়েকটি পত্রে ঠাঁই পেয়েছে। রয়েছে হামলাসহ মিথ্যা মামলার বেশ কিছু কাহিনী। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যের ধারাবাহিকতায় উগ্রপন্থিদের কার্যক্রম গোপনে চলতে থাকে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলেও। তবে ধারণা করা যেতে পারে ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্ঠীর বোমা হামলার পরিকল্পনা তারও আগে শুরু হয়েছিল। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার কথা এ সূত্রে মনে রাখা দরকার। অথচ ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের তৎপরতা বন্ধে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। হামলা প্রতিরোধ ও জঙ্গী দমনে তৎকালীন সরকারের নিষ্ক্রিয়তা জঙ্গীবাদ উত্থানে সহায়ক হয়ে উঠেছিল। ॥ চার ॥ চিঠিগুলো পাঠ করলে দেখা যায়, মানুষের জীবন এখানে কষ্টের অতলান্তিকতায় নীল। যে মানুষগুলো খুন কিংবা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তাদের আক্ষরিক অর্থে কোন অপরাধ ছিল না। একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, আর স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির মানুষ হওয়াই যেন তাদের অপরাধ হয়েছিল সেদিন। মূলত সংখ্যালঘু আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন। তখন রাষ্ট্রের আইনকানুন, প্রশাসন, পুলিশ সব কিছু বিএনপি-জামায়াতের কাছে জিম্মি ছিল। জামায়াত-বিএনপির চোখে ভাল মানুষগুলো ছিল প্রতিপক্ষ, কারণ তারা বাংলাদেশকে ভালবাসতেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী; প্রগতির ধারায় জীবন পরিচালিত করতেন। চিঠিতে প্রকাশিত ঘৃণ্য, জঘন্য, বর্বর ঘটনাগুলো দেশের মাটিতে আবার শিকড় বিস্তার করুক এটা আমরা কেউই চাই না। ৩০ ডিসেম্বর (২০১৮) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে মহাজোটকে বিজয়ী করে ওই জালিম, সন্ত্রাসী ও অপরাধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের এই দেশ থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে আমি মনে করি। লেখক : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
×