ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শ্বাসকষ্ট, কাশি ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ

প্রকাশিত: ০৮:২১, ১ জানুয়ারি ২০১৯

শ্বাসকষ্ট, কাশি ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ

মাস্টার রা. ইসলাম, ১৪ বছর বয়স গত ৩ বছর যাবত শ্বাসকষ্টে ভুগছে, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে অতিরিক্ত হাঁচি, কাশি ও চোখ লাল হয়ে যায় ও চুলকায়, বিশেষ করে শীতকালে বেশি হয়। রোগীর অভিভাবক এ সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ চাইলেন। মিসেস রা. খাতুন ৪৬ বছর বয়স, গত ৫ বছর যাবত শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে অতিরিক্ত হাঁচি, কাশি ও চোখ লাল হয়ে যায় ও চুলকায়, বিশেষ করে ঘর ঝাড়ু দেয়ার সময় ও চিংড়ি মাছ খাওয়ার পর বেশি হয়। রোগী শ্বাসকষ্ট কমানো ও দীর্ঘমেয়াদি ভাল থাকার জন্য পরামর্শ চাইলেন। জনাব আঃ আহমেদ ৪৭ বছর বয়স গত ৩ মাস যাবত লক্ষ্য করছেন যে বুকে এক ধরনের বাঁশির মতো শব্দ হয় ও অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যান। বুকে ব্যথার জন্য গত ৩ মাস আগে এনজিওগ্রাম করলে হৃদযন্ত্রের করোনারি রক্ত নালীতে ২টি ব্লক ধরা পড়ে এবং উনাকে ২টি রিং লাগিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে যাতে আর সমস্যা না হয় সে জন্য উনাকে অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়, আর এ কারণেই তার অতীতে হাঁপানি না থাকলেও ওষুধের কারণে উনার শ্বাসকষ্ট হয়েছে। বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ পরিবর্তন করার পর উনার শ্বাসকষ্ট কমে গেল। জনাব মোঃ উল্লাহ ২১ বছর বয়স। গত ৪ বছর যাবত শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে অতিরিক্ত হাঁচি, কাশি ও চোখ লাল হয়ে যায় ও চুলকায়। উনার বাসায় পোষা বিড়াল ও কুকুর আছে এবং মেঝেতে কার্পেট আছে। রোগী ও রোগীর অভিভাবক কিছু পরামর্শ চাইলেন। পরামর্শ ও আলোচনা : হাঁপানির প্রধান কারণ হলো এলার্জি। রোগীকে নিজেই খুব সতর্কভাবে খেয়াল করতে হবে যে কোন জিনিস শ্বাসকষ্ট বাড়ায়, সেই সমস্ত জিনিসকে যথাসম্ভব পরিহার করে চলতে হবে, যেমন তুলা, ঠা-া, পোষা কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। মাইট নামক কীট ধুলার সঙ্গে শ্বাসনালীতে ঢোকে, তাই ঘরকে যথাসম্ভব ধুলামুক্ত রাখতে হবে। দৈনিক একবার অন্তত ভেজা কাপড় দিয়ে ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র মুছতে হবে। শোবার ঘর হবে ছিমছাম, অল্প জিনিসপত্র থাকবে শোয়ার ঘরে। ঘরের মেঝেতে কার্পেট না থাকা ভাল, যদি থাকে তবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ধুলামুক্ত রাখতে হবে। ঘর যেন স্যাঁতস্যেতে না থাকে সেটা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। শোয়ার ঘরে দিনের বেলা পর্যাপ্ত আলো ঢোকা দরকার। বালিশ, তোষক, ম্যাট্রেস এ পাখির পালক বা তুলা ব্যবহার করার চেয়ে স্পঞ্জ ব্যবহার করা ভাল। শীতকালে থাকতে হবে সবচেয়ে সতর্ক। শীতকালে যথাসম্ভব গোসলে, অজুতে বা হাত-পা ধুতে গরম পানি ব্যবহার করতে হবে, কুসুম গরম পানি পান করতে হবে আর শোয়ার ঘর গরম রাখতে হবে। রাস্তার ধুলা, গাড়ির ধোঁয়া ও কুয়াশা থেকে বাঁচার জন্য রুমাল, মুখোশ ব্যবহার করতে হবে ও যথাসম্ভব এগুলোকে পরিহার করতে হবে। এলার্জির জিনিস নয় কিন্তু শ্বাসকষ্ট বাড়ায় এমন জিনিসকেও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। যে সব জিনিস থেকে ধুলা ওড়ে, সেগুলো থেকে হাঁপানি রোগীদের দূরে রাখতে হবে যেমন গুঁড়া মসলা, ধান, চাল, ডাল, গম ঝাড়া বা বাছাই করা। হাঁপানির রোগীরা পারতপক্ষে ঘর ঝাড়ু দেবেন না। উচ্চ রক্তচাপ বা বুক ধড়ফড় করার জন্য ইনডেভার, এডলক, টেনোলক, টেনোরেন বা বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ খাবেন না। অন্যান্য সমস্যার জন্য ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার সময় আপনার যে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট আছে তা উনাকে অবহিত করুন। ধূমপান করা যাবে না, পাশে কেউ ধূমপান করলেও মুখে রুমাল ব্যবহার করতে হবে। পরিশ্রম বা দৌড়াদৌড়ি করে শ্বাসকষ্ট বাড়লে উপযুক্ত ওষুধ সেবনের পর তা করতে হবে অন্যথায় অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ পরিহার করতে হবে। কোন খাদ্যে এলার্জি থাকলে তা পরিহার করতে হবে। ঠা-া জিনিস, ফ্রিজের ঠা-া পানি, আইসক্রিম পরিহার করতে হবে। খাদ্যের ব্যাপারে সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, কোন্ খাবারে শ্বাসকষ্ট বাড়ে, যদি গরুর গোশত, চিংড়ি মাছ বা বেগুন খেলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে তবে তা খাওয়া যাবে না, নচেত তা শুধু এজমার ভয়ে বাদ দেয়ার প্রয়োজন নেই। পেশাগত কারণে হাঁপানি হলে প্রথমে চেষ্টা করতে হবে কম ধুলার স্থানে কাজের জায়গা পরিবর্তন করা, কাজের সময় নাক ও মুখের ওপর পাতলা কাপড়ের মাস্ক বা মুখোশ পরিধান করা। যদি এতে লাভ না হয় তবে পেশা বদলাতে হবে। মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা বা দুশ্চিন্তা অনেক সময় হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে এই মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণ হলো আর্থিক ও সামাজিক সমস্যা আর তাই পরিবারের অন্য সবার দায়িত্ব রোগীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করা। আরোগ্য লাভের আশায় বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তিতে আকৃষ্ট হয়ে বা লোকমুখে মুখরোচক কথা শুনে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় হাতুড়ি চিকিৎসার আশ্রয় নিয়ে লাভ নেই। এ্যান্টি এলার্জি ভ্যাকসিন দিয়ে এজমা সারানোর চেষ্টা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিলাসীতা মাত্র। কারণ যে সমস্ত এলার্জেনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে তা ভিন্ন দেশের এলার্জেন থেকে তৈরি, কাজেই আমাদের দেশের এলার্জেনের সঙ্গে মিল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তা ছাড়া ভ্যাকসিন দিয়ে মাত্র শতকরা ৫ ভাগ রোগী নিরাময় হয়ে থাকে। বাকি ৯৫ ভাগ রোগীর সাময়িক কিছুটা উপকার হলেও তার জন্য সময় লাগে অনেক এবং সেটা হয় খুবই ক্ষণস্থায়ী এবং ব্যয়বহুল। তা ছাড়া এই ধরনের ইনজেকশনে কখনও কখনও এজমা বা শ্বাসকষ্ট বাড়ে। অধ্যাপক (ডাঃ) মোঃ তৌফিকুর রহমান (ফারুক) অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ চেম্বার : মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস মালিবাগ মোড়, হোসাফ টাওয়ার
×