ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের রায় নিশ্চিত করল উন্নয়নের ধারাবাহিকতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ জানুয়ারি ২০১৯

নির্বাচনের রায় নিশ্চিত করল উন্নয়নের ধারাবাহিকতা

এম শাহজাহান ॥ নির্বাচনে গণরায়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায় উন্নয়ন কর্মকা-ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে ফের সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এতে দেশের উন্নয়নের এক দশকের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। অর্থনীতির জন্য স্বস্তি হবে নতুন বছর ২০১৯ সাল। বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে এ রকম দেশগুলোর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সরকার প্রধান শেখ হাসিনার বিজয়কে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকেও। এদিকে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এফবিসিসিআই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পেনে অংশগ্রহণ করে। সংগঠনটির নির্বাচনে ক্যাম্পেনে জোরালো সমর্থন দেয় বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এমসিসিআই এবং পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। ওই সময় দেশের সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ীকে নৌকার পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানায় এই চার বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মহাজোটের ঐতিহাসিক বিজয় হয়েছে। এই নির্বাচনে ফলাফলে গভীর সন্তোষ ও আশাবাদী এফবিসিসিআই। জনগণের গণরায়ে আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠনের সুযোগ পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রতি জনগণের বিপুল সমর্থন ছিল, আছে এবং থাকবে। চলমান গণতান্ত্রিক ধারা এবং বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রাখার পক্ষে এটি এক তাৎপর্যপূর্ণ গণরায় বলে এফবিসিসিআই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাকে আরও বেগমান ও শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশের মর্যাদা প্রদানের লক্ষ্যে ব্যবসাবান্ধব মহাজোট সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় সবসময়ের মতো পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। জানা গেছে, বাণিজ্য সংগঠনগুলোর পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগ গণরায় পেয়েছে। এই রায়ের ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকা-ের গতি আরও বাড়বে। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনীতির জন্য স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব জরুরী। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, উন্নয়নের এক দশকে বিশেষ করে ২০০৯-২০১৮ সালের মধ্যে বেশকিছু কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে দশ মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশ বিশেষ উদ্যোগ এবং সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানো হয়েছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানমুখী কিছু প্রকল্প রয়েছে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে। তিনি বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ধারাবাহিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, দশ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামী ২০১৯-২০ সালের বাজেট প্রণয়ন করার কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে, নির্বাচনী ইশতেহারেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এছাড়া নতুন প্রকল্প হিসেবে উন্নয়ন দর্শন আমার গ্রাম আমার শহর ঘোষণা করা হয়েছে। এই দর্শনের ওপর ভিত্তি করে সারাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের উন্নয়ন করা হবে। গ্রামের মানুষ যাতে শহরের সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি গ্রামের প্রতিটি রাস্তা পাকা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া ইউনিয়ন অফিসের মতো প্রতিটি বাড়িতে যাতে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়া যায় সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। গ্রামের স্কুল-কলেজগুলোর মানোন্নয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দেশের গ্রামে করা হবে। এতে গ্রামের শিক্ষার্থীরা গ্রামেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে। কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য বাজার ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন এবং করার উদ্যোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের। এছাড়া গ্রামের পণ্য দ্রুত শহরে নিয়ে আসতে রাস্তা-ঘাট সংস্কার করা হবে। ইতোমধ্যে এক জেলা এক বাজেট প্রণয়নের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রশাসনিক কিছু জটিলতা থাকায় সেটি এখনও বাস্তবায়নের কাজ সম্ভব হয়নি। কিন্তু সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় কিছু পদক্ষেপ এখন নেয়া সম্ভব। এ প্রসঙ্গে জানতে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়ন দর্শন দেয়া হয়েছে। এ কারণে সরকারের ধারাবাহিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তিনি বলেন, গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছেছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। সবচেয়ে বড় কথা এই সময়ে দেশে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এজন্য বর্তমান সরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় বেসরকারী খাত বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আগামী নতুন বাজেট থেকেই আওয়ামী লীগকে কাজ শুরু করতে হবে। জানা গেছে, নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের আস্থাহীনতার সঙ্কট দূর হবে, বাড়বে দেশী বিনিয়োগ। নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ আস্থাহীনতার সঙ্কটে পড়ে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী তা-ব ও আগুন সন্ত্রাসীর কথা এখনও তারা ভুলতে পারেনি। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পাওয়ায় তাদের সেই শঙ্কা দূর হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুরান ঢাকার একজন ব্যবসায়ী বলেন, আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ভাল হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। গত দশ বছরে শেখ হাসিনার সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
×