ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ৭৬.৫৩

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ জানুয়ারি ২০১৯

নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ৭৬.৫৩

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ৮০ শতাংশ। অবাধ, সুষ্ঠ,ু শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য এবারে ভোটার উপস্থিতি বেশি ছিল। নির্বাচনে ভোট পড়ার এই হার অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। তবে এর আগে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৮৭ শতাংশ। ওই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের পর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবার ক্ষমতায় যাচ্ছে তারা। এবার তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার অন্য যে কোন দলের চেয়ে অনেক বেশি। একক ভাবে এবার দলটি ভোট পেয়েছে ৭৬.৫৩ শতাংশ ভোট। এদিকে সোমবার নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সার্বিক ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এবারে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সিইসি। এবারের নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ৭৬.৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আসন অনুপাতে জাতীয় পার্টি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও ভোটের অনুপাতে দ্বিতীয় অবস্থানে বিএনপি। এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত ১২.৩৩ শতাংশ। অপরদিকে জাতীয় পার্টির ভোটের অনুপাত ৫.০৭ ভাগ। অন্যান্য রাজনৈতিক দল মিলে এবারে ভোট পেয়েছে মাত্র ৬.০৭ ভাগ। রবিবার দেশের ইতিহাসে ১১ বারের মতো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের একচেটিয়া বিজয় হয়েছে। ইসির দেয়া হিসাব অনুযায়ী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৯ আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অপরদিকে বিএনপি জোটের ব্যাপক পরাজয় ঘটেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেøাগান ছিল মূলত উন্নয়ন। যা তরুণদের প্রচ-ভাবে আকৃষ্ট করেছে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া অতীতে নির্বাচনী সহিংস কর্মকা- জ্বালাও-পোড়াও নীতির কারণে নির্বাচনে তাদের ব্যাপক ভরাডুবি ঘটেছে বলে তারা মনে করছেন। ইসির দেয়া হিসাব অনুযায়ী ২৯৯ আসনের মধ্যে বিএনটির জোট পেয়েছে মাত্র ৮। এর মধ্যে বিএনপি পেয়েছে ৬। ঐক্যজোটের প্রধান নেতা ড. কামালের দল গণফোরাম পেয়েছে দুটি আসন। এর বাইরে ঐক্যফ্রন্টের আর কোন দল এই নির্বাচনে জিততে পারেনি। যদিও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। দল গঠনের পর বিএনপির এই ধরনের পরাজয় অতীতে আর কখনও হয়নি। নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকে ২০ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। একাদশ সংসদে তারাই প্রধান বিরোধী দলে থাকছে। মহাজোটের সঙ্গে শরিক হয়ে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এর বাইরেও মহাজোট শরিক বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ২, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, তরিকত ফেডারেশন ১ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনটি আসনে জয়লাভ করেছে। সব মিলিয়ে ২৯৯ আসনের মধ্যে মহাজোট পেয়েছে ২৮৭ আসন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আসনে তিন কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করায় ফল ঘোষণা করা হয়নি। তবে এই আসনের বিএনপির প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। তিন কেন্দ্রের মোট ভোট রয়েছে সাড়ে ১০ হাজারের মতো। ফলে বিএনপির খাতায় আরও একটি আসন যোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশে দেখা যায় ভোটের পরিবেশ ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। সারাদেশে ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১৬ স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ভোটাররা সšুÍষ্টির কথা জানিয়েছেন। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, অনিয়মের কারণে ১৬ কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার নির্বাচন বন্ধ রেখেছেন। এর বাইরে আর কোখাও কোন অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির পক্ষ থেকে ভোটের দিন কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য বা প্রমাণ হাজির করা হয়নি। ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী আব্দুল মান্নান কেবল ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে কেন্দ্র থেকে নিজের এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২০ এজেন্টকে মেরে বের করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে তিনি শুনেছেন কোন কোন কেন্দ্রে এজেন্ট নেই। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ কেন্দ্রে বিএনপি এজেন্ট দিলেও তারা নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে কোন দায়িত্ব পালন করেনি। তারা কেন্দ্রেই যায়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ সম্পর্কে বলেছেন, কোন দলের এজেন্ট না এলে আমাদের কি করার আছে? এদিকে বিদেশী একাধিক পর্যবেক্ষক সংস্থার পক্ষ থেকেও নির্বাচনে সšুÍষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে। সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন ও ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম পর্যবেক্ষণ শেষে প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
×