ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত ৭ জন শপথ নেবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১ জানুয়ারি ২০১৯

ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত ৭ জন শপথ নেবেন না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শপথ নিচ্ছেন না একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত ৭ জন। সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, যেহেতু পুরো ফলই আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি তাই এখানে শপথ নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচন দাবি করছি। পুনর্নির্বাচন না দিলে আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। কী কর্মসূচী দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোটের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আন্দোলন কর্মসূচী ঠিক করা হবে। অপেক্ষা করুন, কী কর্মসূচী আসছে জানতে পারবেন। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সুপরিকল্পিত একটি নির্বাচন হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখান করছি এবং অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করছি। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল বলেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিলাম। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা এবারের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো। মির্জা ফখরুল বলেন, যেসব বিদেশী পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলেছে তাদের সরকার স্পন্সর করে নিয়ে এসেছে। অন্য পর্যবেক্ষকদের আসতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমরা এই নির্বাচন পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না তা এবারের ভোট ডাকাতির নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আচরণ ছিল সরকারেরই আচরণ। সাংবিধানিকভাবে তিনি যে স্বাধীন তা তিনি প্রমাণ করতে পারেননি। সিইসি বলেছেন, কেন্দ্রে আমাদের এজেন্ট ছিল না। আমাদের এজেন্টদের আগেই ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাহলে আমরা কিভাবে কেন্দ্রে এজেন্ট দেব। ফখরুল বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা যেন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে না পারে এ জন্য আসনভিত্তিক মামলা দেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মামলা ও গ্রেফতার বাড়ানো হয়। এমনকি নির্বাচনের দিনও মামলা দেয়া হয়। তফসিলের পরই দেয়া হয় ৫ হাজার মামলা। তিনি বলেন, শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে। এই নির্বাচনের কারণে দেশের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়েছে। যে অর্থবহ নির্বাচন আমরা আশা করেছিলাম তা হয়নি। আগের দিন রাতেই অধিকাংশ ভোট দেয়া হয়েছে। ভোটের দিন ১১টা পর্যন্ত ধানের শীষে বেশি ভোট পড়ছে দেখে ১১টার পর থেকে নৌকায় সিল মারা হয়েছে। আমাদের এজেন্ট বের করে দেয়ায় প্রায় ১০০ প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে। ফখরুল বলেন, এবার নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি সরকার বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। নির্বাচনের পরও নেতাকর্মীদের নামে মামলা ও কারও কারও বাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। সারাদেশের একই চিত্র। মানুষ ১০ বছর পর ভোট দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পূর্বপরিকল্পিত ছক অনুসারে এ নির্বাচন করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার শোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির স্থয়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে কিছুক্ষণ অবস্থান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যোগ দিতে চলে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এ জোটের বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এ হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ। বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় সম্ভাব্য আন্দোল কর্মসূচী নিয়েও আলোচনা হয়। আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
×