ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘটল ’৫৪ ও সত্তরের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১ জানুয়ারি ২০১৯

ঘটল ’৫৪ ও সত্তরের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি

উত্তম চক্রবর্তী ॥ এ যেন ’৫৪ ও সত্তরের নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি। ’৫৪ ও সত্তরের মতোই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকার গণজোয়ারে ভেসে গেছে বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের জোট। সত্তরের মতোই ভোট বিপ্লবে অভাবনীয় নিরঙ্কুশ মহাবিজয় হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের। স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের এটাই প্রথম রেকর্ডসংখ্যক, অবিশ্বাস্য ও ঐতিহাসিক মহাবিজয়। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, যুদ্ধাপরাধী, উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা’র পক্ষেই তাক লাগানো গণরায় দিয়েছে দেশের মানুষ। বিএনপি-জামায়াতের সকল দুর্গ তছনছ করে সর্বত্রই জয়-জয়কার মহাজোটের। অন্ধকারের বদলে দেশের মানুষ আলোর পথে অর্থাৎ দেশের চলমান অভাবনীয় উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রার নিপুণ শিল্পী শেখ হাসিনার পক্ষেই গণরায় দিয়েছেন দেশের মানুষ। ব্যালট বিপ্লবে শুধু প্রত্যাখ্যাতই নয়, বিরোধী দলের মর্যাদাও হারিয়েছে বিএনপি। দুই-তৃতীয়াংশ আসনেই অস্তিত্বের সঙ্কটে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী এই জোটের প্রার্থীরা জামানত পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেনি মহাজোটের গণজোয়ারে কাছে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টিই। স্মরণকালের উৎসবমুখর-অভাবনীয় ও উন্নত ব্যবস্থাপনায় এই নীরব ভোট বিপ্লবের পর এখন চতুর্থবারের মতো এবং টানা হ্যাটট্রিকবার সরকার গঠনের তৎপরতা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট। স্বাধীন ইতিহাসে এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন মহাজোট ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মহাজোটের মহাবিজয়ের পর গণভবনে ফুলেল শুভেচ্ছায় ¯œাত হ্যাটট্রিকবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া শেখ হাসিনা সোমবার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ক্ষমতা ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার বিষয় নয়। জনগণের কাজ করা আমার জন্য একটা সুযোগ। আমার পিতার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে যেতে চাই। ভোটের জয়কে বিজয়ের মাসে আরেকটি ‘বড় বিজয়’ উল্লেখ করে বলেন, এ বিজয়ের ফলে সরকারের সামনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অনেক বেশি বিদেশী বিনিয়োগ আসবে, দেশ আরও এগিয়ে যাবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলার মানুষ পুনরায় ব্যালট-বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা প্রতিরোধ শক্তি হারায়নি এবং সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও উগ্র মৌলবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। একাত্তরের যুদ্ধারাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো, তাদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানো তারা মেনে নেয়নি। ৩০ ডিসেম্বরের একদিন আগেও গণবিরোধী চক্র ও তাদের জোট হয়ত টের পায়নি, বাংলার মানুষের বুকে কত আগুন, কত ক্রোধের লাভা তৈরি হয়েছে। একদিনের এই অগ্ন্যুৎগিরণে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদের ঘাঁটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। প্রচুর টাকা ছড়িয়েও জামায়াতী চক্ররা একটি আসন তো দূরের কথা, কোথাও তাদের জামানতও রক্ষা করতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য দিকই ছিল, হাতে গোনা মুষ্টিমেয় চিহ্নিত সুবিধাবাদী কথিত সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী ছাড়া দেশের প্রায় সব শ্রেণী-পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গরাই এবার প্রকাশ্য দাঁড়িয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের পক্ষে। সাবেক সামরিক, বেসামরিক, আমলা, পুলিশ বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়াও দেশের শীর্ষস্থানীয় সকল বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী সব পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গরা শুধু নৌকাকেই সমর্থন নয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের স্বজনদের পক্ষে থাকা বিএনপি-জামায়াত-যুক্তফ্রন্টকে ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যানের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় সকল ব্যবসায়ী, বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রধান কর্ণধারসহ সারাদেশের শিল্পপতি-ব্যবসায়ী নেতারা রীতিমতো সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাঁকে সমর্থন করেছে, নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। যা অতীতের কোন নির্বাচনে হয়নি। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের মহাজয়ের পেছনে এটিও একটি অন্যতম কারণ। বিএনপি-জামায়াতরা মনে করেছিল নির্বাচনে তাদের পক্ষে নীরব বিপ্লব হবে। কিন্তু হয়েছে ঠিক তার উল্টো। জনতার সরব ব্যালট বিপ্লবে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে কথিত ‘বিএনপির দুর্গ’। ১৯৭৩ সালের পর এবারই প্রথম শক্তিশালী কয়েকটি দুর্গ ভেঙ্গে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে রেকর্ড গড়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির ন্যক্কারজনক ভরাডুবির পর ‘অমুক মাটি বিএনপির ঘাঁটি’ এই স্লোগানের করুণ যবনিকাপাত ঘটেছে। বিএনপির এসব দুর্গ বালুর বাঁধের মতো ভেঙ্গে সেখানে নৌকার পতাকা পতপত করে উড়ছে। বিএনপির এমন করুণ ভরাডুবি প্রসঙ্গে সাধারণ ভোটার কারণ হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, পুড়িয়ে পুড়িয়ে শত শত মানুষকে হত্যা, ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বিপুল অর্থপাচার এবং স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া প্রেমকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ আসনে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত হিসাব অনুযায়ী তিন শ’ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৬৫ আসন, মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ২২টি, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭টি এবং স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিএনপি মাত্র ৫টি আসনে এবং জোটের শরিক গণফোরাম পেয়েছে মাত্র দুটি আসন। চূড়ান্ত ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ এই তিনটি বিভাগে একটি আসনও পায়নি বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের জোট। শুধু রাজশাহী বিভাগে তিনটি, সিলেট বিভাগে দুইটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ও রংপুর বিভাগে একটি করে মোট সাতটি আসন পেয়েছে এই জোটটি। সবচেয়ে বড় কথা বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ মাত্র দুটি আসন পেয়েছে। মাত্র সাতটি আসন পাওয়া এই জোটের মধ্যে বিএনপি ৫টি এবং গণফোরাম ২টি আসন পেয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত প্রায় ২৫টি আসনে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও একটি আসন তো দূরের কথা, কোথাও জামানত পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেনি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রাপ্ত আসনগুলো হচ্ছে বগুড়া-৬, বগুড়া-৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১ ও ২ এই পাঁচটিতে বিএনপির প্রার্থী এবং মৌলভীবাজার-২ এবং সিলেট-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। এবারের নির্বাচনে কেন এমন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের ভূমিধস মহাবিজয়, বিএনপি-জামায়াত জোটের শোচনীয় ভরাডুটি- এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়ের সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সর্বত্র। রাজনৈতিক, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ দিনমজুর পর্যন্ত সবারই অভিন্ন মন্তব্য, বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছরের দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, পরবর্তীতে নির্বাচন ঠেকানোর নামে দেশজুড়ে ভয়াল সন্ত্রাস, নাশকতা ও পুড়িয়ে পুড়িয়ে শত শত মানুষকে হত্যা বিশেষ এবারের নির্বাচনেও যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের স্বজন এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে ২২টি আসন ছেড়ে দেয়ার ঘটনা- এসব কারণেই বিএনপি-জামায়াত জোটকে দেশের জনগণ অভাবনীয় ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে ‘লালকার্ড’ দেখিয়েছে। সবার মুখে ছিল একই প্রশ্ন- সত্যিই কী বিএনপি নির্বাচনে থাকতে চেয়েছিল? বিএনপির বাঘা বাঘা নেতাদের ফাঁস হওয়ার ফোনালাপেই স্পষ্ট ছিল- তারা আদৌ নির্বাচন নয়, নির্বাচনকে ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছিল। পরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্নস্থানে সন্ত্রাস-সহিংসতার মাধ্যমে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হঠাৎ করেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ষড়যন্ত্রের কথাও ফাঁস হয়ে যায় এসব ফোনালাপে। আর এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে প্রচারে না থাকা, পোস্টার-লিফলেট না লাগানো, দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী আসনে না যাওয়া এবং সবশেষ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে পরিকল্পিতভাবে এজেন্ট না দেয়াও ছিল ওই ষড়যন্ত্রের অংশ। এমনকি নির্বাচিত হলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটিও দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার না করার পেছনেও যে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল তা সময়ের ব্যবধানে স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ পরিচালনা এবং দেশের মানুষের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সৃষ্ট গণজোয়ারে তাদের সব ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো তরুণ প্রজন্মসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে গণরায় প্রদান এবং অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মী, সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজ ভোটাধিকার পর্যন্ত না করায় তিন শ’ আসনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসনেই জামানত হারিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থীরা। নির্বাচনকে পরিকল্পিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাদের নানা ষড়যন্ত্র সফল না হওয়ায় এখন পুনর্নির্বাচনের দাবিকে হাস্যকর বলেই মনে করছেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। মহাজোটের পক্ষে সত্তরের মতো গণজাগরনের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, দিন বদলের সনদের পর এবার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার ঘোষণা এবং এবারের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ভোটযুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষকে ব্যক্তি আক্রমণ এড়িয়ে উল্টো সম্মোহনী গুণ নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দলের চিন্তা ও লক্ষ্য কর্মসূচীর সঙ্গে জনমানুষকে সম্পৃক্ত করে বাস্তবানুগ এবং বাস্তবায়নযোগ্য তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও কর্মসূচী ভোটারদের মাঝে তুলে ধরে নৌকার পক্ষে সারাদেশেই অবিশ্বাস্য গণজোয়ার সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে নির্বাচনে ‘ফ্যাক্টর’ বলে পরিচিত নতুন ভোটার হওয়া তরুণ প্রজন্মকে একাত্ম করতে ‘ভিশন-২১০০’ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তরুণ প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণের অঙ্গীকার তারুণ্যের উচ্ছ্বাস যেমন সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তেমনি দেশের বিভিন্নস্থানে ভিডিও ও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের চলমান উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ গৃহীত ১০ মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সমাপ্ত করতে আরেকটিবার নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ইতিবাচক আস্থার সৃষ্টি করেছে ভোটারদের মধ্যে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের চেয়ে সরকারের এবারের ১০ বছর মেয়াদে বাংলাদেশ কোথায় থেকে আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, ১০ বছরের এই অভাবনীয় উন্নয়ন-অগ্রগতিগুলোও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে ভোটারদের মনজয় করতে সক্ষম হন প্রধানমন্ত্রী। যার ফলে শেখ হাসিনা যেখানেই নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন, সেখানেই অবিশ্বাস্য তারুণ্যের ঢল, উচ্ছ্বাস আর তীব্র জনস্রোত নেমেছে। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নতুন ভোটার হওয়া তরুণ প্রজন্মের প্রতি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেশকিছু উদ্দীপনাময় অভিনব আবেদন ভোটের সার্বিক চিত্রই পাল্টে দিয়েছে। আর ওয়াদার ফিরিস্তি নয়, বরং সমীহ জাগানো অভিনবত্ব নির্বাচনী ইশতেহার সারাদেশেই আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের বিজয়ের পথকে প্রশস্ত করেছে বলেই মনে করছেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মহল। অভিজ্ঞ মহলের মতে, নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে শেখ হাসিনা দেশের অনেক স্থানেই নির্বাচনী প্রচারে যেতে না পারলেও এবার তাঁর আবেদনধর্মী, যুক্তিনির্ভর এবং বাস্তবধর্মী ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও কর্মসূচী সম্বলিত ক্যারিশম্যাটিক ভাষণ শুধু দলীয় নেতাকর্মী বা সমর্থকই নয়, দলবহির্ভূত সাধারণ ভোটারদেরও কাছে টানতে সক্ষম হয়েছেন। সব জায়গায় তাঁর নির্বাচনী প্রচারে যাওয়া সম্ভব হবে না- আগে থেকেই এটা উপলব্ধি করে এবারের নির্বাচনেও প্রযুক্তিনির্ভর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গীদের জোটে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের গতানুগতিক বক্তব্যের বিপক্ষে শেখ হাসিনার সম্মোহনী ও সাড়া জাগানিয়া উদ্দীপনাময় অভিনব ভাষণ আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের ভূমিধস বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলেই তাদের ধারণা। গতানুগতিকের পরিবর্তে চমক সৃষ্টির মতো নির্বাচনী ইশতেহার, তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে দেয়া নানা প্রতিশ্রুতি আর সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধানে শেখ হাসিনার অঙ্গীকার সামগ্রিকভাবেই আওয়ামী লীগের বিজয়ের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করেছে। বিশেষ করে পরিকল্পিত ও দৃষ্টিনন্দন নির্বাচনী প্রচার, ‘জয় বাংলা, জিতবেই এবার নৌকা, শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ এই স্লোগান দিয়ে নির্মিত নির্বাচনী প্রচারের গান পুরো নতুন প্রজন্মকেই উদ্বেলিত করে তুলেছিল। এখন প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে এই সাড়া জাগানিয়া গান। একদিকে ষড়যন্ত্রের মানসে বিএনপি-জামায়াতের শ্রীহীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ, অন্যদিকে পরিকল্পিত, তথ্য সম্বলিত এবং জনগণের মধ্যে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তুলতে আওয়ামী লীগের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণেই টানা তৃতীয়বারের মতো ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত করেছে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি।
×