ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগযোগ্য বস্ত্র খাতের সাত কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১ জানুয়ারি ২০১৯

বিনিয়োগযোগ্য বস্ত্র খাতের সাত কোম্পানি

অথনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৮ সালে বস্ত্র খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ভাল লভ্যাংশ দিয়েছে। মুনাফায়ও কোম্পানিগুলো ভাল প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। এছাড়া, বস্ত্র খাতে সরকার দফায় দফায় প্রণোদনা ঘোষণা করায় সামনের দিনগুলোতে এ খাতের কোম্পানিগুলোর পারফর্মেন্স আরও ভাল হবে- এমন প্রত্যাশায় বস্ত্র খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। সাম্প্রতিককালে এ খাতে কোম্পানিগুলোর লেনদেন বৃদ্ধি ও শেয়ার দরে চাঙ্গাভাব স্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণ করছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাম্প্রতিককালে প্রায় প্রতিদিনই লেনদেন ও শেয়ার দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। গত তিন মাসে এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর অনেক এগিয়েছে। তবে মুনাফা ও লভ্যাংশে বৃদ্ধি পেলেও এ খাতের কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর তেমন বাড়েনি, বরং কমেছে। ফলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তলানিতে পড়ে রয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোম্পানিগুলোর মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিবেচনায় এ খাতের কয়টি কোম্পানি বর্তমানে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ উপযোগী অবস্থায় রয়েছে। তাদের মতে, এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী বিবেচনায় অবশ্যই সুফল আসতে পারে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিবেচনা করা হয়। যে কোম্পানির পিই রেশিও যত কম, সেই কোম্পানি বিনিয়োগের জন্য তত বেশি উপযোগী। বছর শেষে দেশের পুঁজিবাজারে গড় পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১৫.০৯-তে। সেই হিসাবে পিই রেশিও ১৫-এর নিচে থাকা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকে উত্তম বলে মনে করা হয়। আর পিই রেশিও ১০-এর নিচে থাকা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ বিনিয়োগ বলে মনে করা হয়। পিই রেশিও ॥ বস্ত্র খাতে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৫৩টি। এর মধ্যে ৯টি কোম্পানির পিই রেশিও ১০-এর নিচে রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো জেনারেশন নেক্সট, ড্রাগন সোয়েটার (ডিএসএসএল), নূরানি ডাইং, আরগন ডেনিম, শাশা ডেনিম, এনভয় টেক্সটাইল, পিডিএল, জাহিন স্পিনিং ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। সর্বশেষ শেয়ার দর অনুযায়ী, জেনারেশন নেক্সটের পিই রেশিও ৫.৮৩, ড্রাগন সোয়েটারের (ডিএসএসএল) ৬.৩৩, নূরানি ডাইংয়ের ৭.৪১, আরগন ডেনিমের ৮.১২, শাশা ডেনিমের ৮.২৭, এনভয় টেক্সটাইলের ৮.৮১, জাহিন স্পিনিংয়ের ৯.০৩, পিডিএলের ৯.২০ এবং আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ৯.৮৯। লভ্যাংশ ॥ লভ্যাংশের দিক থেকে কোম্পানিগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ড্রাগন সোয়েটার। সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ড্রাগন সোয়েটার লভ্যাংশ দিয়েছে ২৫ শতাংশ (৫ শতাংশ ক্যাশ ও ২০ শতাংশ বোনাস)। এরপর রয়েছে শাশা ডেনিম ২২ শতাংশ (১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৭ শতাংশ বোনাস), আরগন ডেনিম ১৫ শতাংশ ক্যাশ, পিডিএল ১৪ শতাংশ বোনাস, নূরানি ডাইং ১৩ শতাংশ (২ শতাংশ ক্যাশ ও ১১ শতাংশ বোনাস), এনভয় টেক্সটাইল ১২ শতাংশ (১০ শতাংশ ক্যাশ ও ২ শতাংশ বোনাস), জেনারেশন নেক্সট ১০ শতাংশ বোনাস, জাহিন স্পিনিং ১০ শতাংশ বোনাস এবং আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। শেয়ার প্রতি মুনাফা ॥ সমাপ্ত হিসাব বছরে মুনাফার দিক থেকে এগিয়ে আছে শাশা ডেনিম। কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ৪.৬৪ টাকা। এরপর রয়েছে আরগন ডেনিম ৩.১৮ টাকা, ড্রাগন সোয়েটার ২.২৫ টাকা, এনভয় টেক্সটাইল ২.১০ টাকা, নূরানি ১.৫০ টাকা, আলিফ ১.৫৩ টাকা, পিডিএল ১.৪৩ টাকা, জাহিন স্পিনিং ১.০৭ টাকা এবং জেনারেশন নেক্সট ১.০১ টাকা। এদিকে, চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৮) শাশা ডেনিমের শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ১.৮৩ টাকা, এনভয় টেক্সটাইলের ১.০৩ টাকা, ড্রাগন সোয়েটারের ০.৮১ টাকা, আরগন ডেনিমের ০.৮১ টাকা, নূরানি ডাইংয়ের ০.৫৪ টাকা, পিডিএলের ০.৪৪ টাকা, জাহিন স্পিনিংয়ের ০.৩১ টাকা, জেনারেশন নেক্সট ০.২৭ টাকা এবং আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ০.২৩ টাকা। শেয়ার দরে পতন ॥ গত তিন মাসে বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে চাঙ্গাভাব দেখা গেলেও আলোচিত ৯ কোম্পানির শেয়ার দরে পতন দেখা গেছে। এ সময়ে শেয়ার দরে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে ড্রাগন সোয়েটারের। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫০.৩০ টাকা থেকে ২০.৫০ টাকায় নেমে গেছে। অর্থাৎ গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দরে পতন হয়েছে ৫৯.২৪ শতাংশ। দরপতনের দ্বিতীয় কোম্পানি হলো নূরানি ডাইং। গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৪ টাকা থেকে ১৬ টাকায় নেমে এসেছে। দর কমেছে ৩৩.৩৩ শতাংশ। এরপর জেনারেশন নেক্সটের শেয়ার দর ৮.১০ টাকা থেকে ৬.৩০ টাকায় নেমে এসেছে। দর কমেছে ২২.২২ শতাংশ। আরগন ডেনিমের শেয়ার দর ৩২ টাকা থেকে নেমে এসেছে ২৬.৩০ টাকায়। দর কমেছে ১৭.৮১ শতাংশ। শাশা ডেনিমের শেয়ার দর ৭৩.১০ টাকা থেকে ৬০.৫০ টাকায় নেমে এসেছে। দর কমেছে ১৭.২৩ শতাংশ। আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের শেয়ার দর ১১ টাকা থেকে ৯.১০ টাকায় নেমে এসেছে। দর কমেছে ১৭.২৭ শতাংশ। পিডিএলের শেয়ার দর ১৮.৯০ টাকা থেকে ১৬.২০ টাকায় নেমে এসেছে। দর কমেছে ১৪.২৮ শতাংশ। জাহিন স্পিনিংয়ের শেয়ার দর ১২.৬০ টাকা থেকে ১১.২০ টাকায় নেমে এসেছে। দর কমেছে ১১.১১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি ॥ আলোচিত ৯ কোম্পানির মধ্যে লভ্যাংশ ও মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে রয়েছে ড্রাগন সোয়েটার ও নূরানি ডাইং। গতবছর ড্রাগন সোয়েটার লভ্যাংশ দিয়েছিল ১৫ শতাংশ বোনাস এবং শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছিল ১.২৭ টাকা। এ বছর কোম্পানিটি লভ্যাংশ দিয়েছে ২৫ শতাংশ এবং শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ২.২৫ টাকা। লভ্যাংশে প্রবৃদ্ধি এসেছে ৪০ শতাংশ এবং মুনাফায় প্রবৃদ্ধি এসেছে ৭৭ শতাংশ। আর চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ০.৮১ টাকা। আগের বছর ছিল ০.৪৬ টাকা। প্রথম প্রান্তিকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি এসেছে ৭৬.০৮ শতাংশ। অন্যদিকে, গতবছর নূরানি ডাইং লভ্যাংশ দিয়েছিল ১০ শতাংশ বোনাস এবং শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ১.১৫ টাকা। এ বছর কোম্পানিটি লভ্যাংশ দিয়েছে ১৩ শতাংশ এবং শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ১.৫০ টাকা। কোম্পানিটির লভ্যাংশে প্রবৃদ্ধি এসেছে ৩০ শতাংশ এবং মুনাফায় প্রবৃদ্ধি এসেছে ৩৮.৪৩ শতাংশ। আর চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ০.৫৪ টাকা। আগের বছর ছিল ০.৩৯ টাকা। প্রথম প্রান্তিকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি এসেছে ৩৮.৪৬ শতাংশ। অবশিষ্ট ৭ কোম্পানির মধ্যে আগের বছরের তুলনায় লভ্যাংশ ও মুনাফা কমেছে শাশা ডেনিম, আরগন ডেনিম ও জাহিন স্পিনিংয়ের। মুনাফা কমেছে এনভয় টেক্সটাইল ও পিডিএলের। আর লভ্যাংশ কমেছে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের।
×