ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয় বাংলা, জয়তু শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১ জানুয়ারি ২০১৯

জয় বাংলা, জয়তু শেখ হাসিনা

অনুমিতভাবেই ধারাবাহিক তৃতীয়বারের মতো এবং দেশের ইতিহাসে চতুর্থ বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে জয়ী হয়ে দেশ সেবার সুযোগ পেল। শেষ খবর অনুযায়ী, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ২৯৯ আসনের মধ্যে মহাজোট জয় লাভ করে ২৮৯টি আসনে, ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্ট পায় ৭টি আসন ও অন্যরা ৩টি আসন। উল্লেখ্য, ২৮৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই জিতে নেয় ২৫৫টি আসন। অপরদিকে বিএনপির ঘরে ওঠে ৫টি আসন। এই পরিসংখ্যান এক নজরে বলে দেয় যে, বাংলদেশের সর্ব স্তরের জনগণের কাছে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও কোন দল নেই। এটাই হচ্ছে শেখ হাসিনার গণমুখী রাজনীতির ফল। এই নিরঙ্কুশ বিজয়ের ফলে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির সুউচ্চ সোপানে অধিষ্ঠিত করার বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত যে সকল কাজ তাঁর সুযোগ্য কন্যা, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হাতে নিয়েছিলেন, তা সমাপ্ত করে এই দেশ ও জাতিকে অনন্য উচ্চতার শিখরে নিয়ে যাওয়ার পথের অন্যতম বাধা দূর হলো। সেই সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে এবং লাখো শহীদের রক্তের ও লাখো মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনা এই জাতি অবারও প্রমাণ করল যে, জাতির ক্রান্তিলগ্নে তারা সব সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যায় বিজয়ের পথে। ১৯৮১ সালে সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিরে আসেন দেশের মাটিতে। সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট নেতৃত্বহীন অওয়ামী লীগের হাল ধরেন শক্ত হাতে। সেই থেকে শেখ হাসিনা দলের ভেতরে ও বাইরের বিশাল ও প্রচ- বৈরী পরিবেশ ও জাতি এবং দেশবিরোধী ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিদেশী এজেন্টদের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ধ্বংস প্রায় আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজিয়ে দলটিকে আবার দেশের সবচেয়ে শক্তিধর রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। পুরো আশির দশক জুড়ে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সব রকম সংগ্রামের পুরোধা হিসেবে আবির্ভূত হয় শেখ হাসিনার অওয়ামী লীগ। এ যেন সেই বঙ্গবন্ধুর আইয়ুব বিরোধী সংগ্রামী ষাটের দশকের আওয়ামী লীগ। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানটি ছিল সম্পূর্ণভাবেই আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক প্রচ- আন্দোলনের ফসল, যেখানে রক্ত ঝরেছে দলটির হাজার হাজার কর্মীর। একানব্বই সালের নির্বাচনে তাই যুক্তিসঙ্গতভাবেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে¡ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা ছিল সময়ের চাহিদা। কিন্তু সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে, ভুয়া ভোটার লিস্ট ও অন্যান্য চক্রান্তের ফলে দেশ বিএনপির হাত ধরে ফিরে যায় পূর্বের জিয়া-এরশাদের পাকিস্তানী ধারায়। ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনে দীর্ঘ একুশ বছর পর জাতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফিরে পায় একাত্তরে ছিনিয়ে আনা বিজয়ের স্বাদ। ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধুকন্যা সামরিক-বেসামরিক স্বৈরাচার প্রসবিত একুশ বছরের ক্লেদ, গ্লানি ও জঞ্জাল সরানোর কাজে হাত দেন। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক পানি বণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তিসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক কর্মকা- সম্পাদন করেন, শুরু করেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া। দেশকে ক্ষুধামুক্ত করে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পথে অনেক দূর এগিয়ে যান। বিদ্যুত, গ্যাস, শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে দেখান সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কিন্তু ২০০১ সালের লতিফ-শাহাবুদ্দীন-সায়েদ গং পরিচালিত নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা হয় একাত্তরের পরাজিত শক্তির এ দেশীয় এজেন্টদের। দেশ আবার নিমজ্জিত হয় গভীর অমানিশায়। শেখ হাসিনার অর্জিত সাফল্যগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয় একে একে। দেশে আবার শুরু হয় ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মঙ্গার প্রকোপ, বিদ্যুত উৎপাদন চলে যায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে উত্থান ঘটে জঙ্গীবাদের। হাওয়া ভবন করে দুর্নীতিকে সর্বগ্রাসী করে তোলা হয়। দেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাসহ অন্যান্য সম্পদ সরকার প্রধান ও তার পরিবারের প্রতিটি সফরে স্যুটকেসে করে পাচার করা হতে থাকে। বিদেশী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘুষের বিনিময়ে অসম চুক্তি করে দেশকে আবার ‘তলাবিহীন ঝুড়িতে’ পরিণত করে একাত্তরের পরাজিত শক্তির পদলেহনে ব্যাপৃত হয় তাদের এ দেশীয় এজেন্টরা। ধারাবাহিকভাবে ঘটানো হতে থাকে হত্যা, নির্যাতন। অওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার জন্য ঘটানো হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নারকীয় হত্যাকা-, খুন করা হয় আইভি রহমান, আহসান উল্লাহ মাস্টার, কিবরিয়াসহ অসংখ্য অওয়ামী লীগ নেতাকে। কিন্তু শেখ হাসিনা পরম করুণাময়ের অশেষ দয়ায় বেঁচে যান। সেই সঙ্গে বেঁচে থাকে দেশের কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা। ২০০৮ সালের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রতিফলিত হয় শেখ হাসিনার প্রকৃত জনপ্রিয়তা। তিন শ’ আসনের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ পায় ২৩০টি আসন, যার বিপরীতে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট পায় ৩০টি আসন। এবার ক্ষমতায় আসীন হয়ে শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যান এমন এক উচ্চতায়, যা ছিল এ জাতির জন্য কল্পনাতীত। দেশজ সম্পদ, মাথাপিছু আয়, শিল্প-কৃষি ও সেবা খাতের উন্নয়ন, উন্নয়নের গতিশীলতা, নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো, সড়ক ও পরিবহন, যুব উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, অবহেলিত জনপদ ও জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, সমুদ্র জয়, সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান, মানুষের দোরগোড়ায় প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়া, মহাকাশ বিজয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নÑ সর্বক্ষেত্রেই বাংলাদেশ হয়ে ওঠে বিশ্বের রোল মডেল। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ শুরু করে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প। শুরু হয় মেট্রোরেল, পারণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পসহ বিশাল কর্মকা-। শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও অধিকারের মানসকন্যা। কিন্তু বাংলার মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করার ঘৃণ্য চক্রান্ত থেমে থাকেনি। বাংলার মানুষের অগ্রযাত্রা রোধ করার বহু যুগের এ ষড়যন্ত্র চলমান থাকবে, যত কাল এ দেশে বিচরণ করে যাবে অতি চেনা মীরজাফরের বংশধররা। বাংলার মানুষের সকল প্রকার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাসও তাই বিশাল। ব্রিটিশ ভারতে বাংলা ছিল ব্রিটিশবিরোধী অন্দোলনের সূতিকাগার। ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, প্রীতিলতা, সুভাষ বোস, তিতুমীর, নজরুল এরা সবাই এই বাংলার মানুষ, এরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ। এই বাংলাকে পদদলিত করে শোষণ করার প্রক্রিয়া চলেছে শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী। কিন্তু এ জাতি নতি স্বীকার করেনি কোন দিন। আর হাজার বছর পরে এই দেশে জন্ম নেয়া সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ মুক্ত ও স্বাধীন করেন। নিজের ব্যক্তিগত সব স্বার্থের অনেক উর্ধে উঠে, অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বরণ করে এই বীর নেতা জাতিকে দিয়ে যান একটি স্বাধীন দেশ, লাল-সবুজ পতাকা আর সার্বভৌমত্ব। একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বর এই বাংলার কোটি মানুষের কাছে মাথা নিচু করে মাটিতে অস্ত্র রেখে বন্দীশালায় ঢুকতে হয় ছিয়ানব্বই হাজার হানাদার পাকিস্তানীকে। সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে দেরি করেনি পাকিস্তানীরা ও তাদের দালালের দল। স্বাধীনতার স্থপতিকে তাঁর পরিবার পরিজনসহ, এমন কি শিশু সন্তানসহ নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানের এ দেশীয় দালালবাহিনী স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই। আর অওয়ামী লীগকে এবং দেশের স্বাধীনতাকে আবার ভূলুণ্ঠিত করার লক্ষ্যে জেলখানায় হত্যা করা হয় স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় নেতাদের। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গণহত্যার ধারাবাহিকতা। আর এ ধরনের সন্ত্রাস ও হত্যাকা-ের পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে ঘটাতে থাকে মুক্তিযোদ্ধা সেজে সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে থাকা এবং সামরিক, রাজনৈতিক ও বেসামরিক প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানী দালালবাহিনী এবং তাদের উত্তরসূরি নব্য পাকিস্তানী দালালরা। এরাই এ দেশে উৎপাদন করে যেতে থাকে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ, বিভেদ, অপরাজনীতি, ও ২১ আগস্টের মতো হত্যাকা-। উদ্দেশ্য একটিই-এ দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু একজন শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে গেলেন অচিন্তনীয় উচ্চতায়, মানুষকে ফিরিয়ে দিলেন তাদের ছিনিয়ে নেয়া বিজয়ের গৌরব, পুনর্প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলাদেশকে এবং এর ছুড়ে ফেলে দেয়া সকল আদর্শকে এমনভাবে, ঠিক যেভাবে করতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা জাতির আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখালেন সুখ ও সমৃদ্ধির। বাঙালী আবার বিশ্বলোকে আবির্ভূত হলো বিজয়ী বীরের জাতি হিসেবে। আজ এই দেশ কেবল সমগ্র তৃতীয় বিশ্বের নয় সমগ্র বিশ্বের উন্নয়নের আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, আদর্শিক, প্রতিটি খাতে, প্রতিটি বিভাগে এ দেশ শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। এই বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার শক্তির বিজয় তাই দেখায় সেই যে, অচিরেই বাংলাদেশ বিকশিত হবে একটি উন্নত দেশ হিসেবে। এ দেশের মানুষ জয় করেছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে। শেখ হাসিনা এ দেশকে, এ জাতিকে নিয়ে যাবেন সকল প্রকার উন্নতির চরম শিখরের দিকে। আমাদের শিশুরা হবে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ও সমৃদ্ধশালী জাতির অংশ। লেখক : অধ্যাপক ও সভাপতি, গবর্নেন্স এ্যান্ড রাইটস সেন্টার (জিআরসি) [email protected]
×