ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ দেশ-বিদেশে জয় বাংলার জয়

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১ জানুয়ারি ২০১৯

সিডনির মেলব্যাগ ॥ দেশ-বিদেশে জয় বাংলার জয়

জয় বাংলার জয়ে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশের বাঙালীও আনন্দিত। তার চেয়ে বেশি নিশ্চিন্ত। এর কারণ বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। শুরু থেকে ষড়যন্ত্র আর অনভিপ্রেত ঐক্য মানুষকে বিচলিত করে তুলেছিল। আমরা যারা ভুক্তভোগী তারা জানি এরা কি করতে পারে। কোন বিশেষ কারণ ছাড়া এরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে খুন করেছিল। তারপর জেলখানার ভেতর চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর দেশ চলে গিয়েছিল সামরিক জেনারেলদের হাতে। যার পেছনে পাকিরা ছিল সক্রিয়। পাকিস্তানের ছায়া রাষ্ট্র করার অপচেষ্টা রোধে লেগেছে দীর্ঘ সময়। কোনভাবেই তা চাই না আর। জিতলে তাদেরও কচুকাটা করা হতো। সবচেয়ে বেশি ভয় ছিল বিলেতে পলাতক যুবরাজকে নিয়ে। দুর্নীতিতে কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন করে দেয়া দেশকে শেষ করার জন্য সে একাই যথেষ্ট। এমনও খবর ছিল শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অনেককে তারা চরম শাস্তি দেবে। বেছে বেছে মুক্তমনের মানুষদের মারা হবে দেশে। এই অরাজকতা কতটা বাস্তব, সেটা একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাতেই বোঝা যায়। পৃথিবীর কোন দেশে বিশেষত আমাদের মতো দেশে কোন ইলেকশনই এক শ’ পার্সেন্ট শুদ্ধ হয় না। হওয়া সম্ভবও না। যে সমাজ নানা কারণে হিংসা আর প্রতিশোধপ্রবণ, সেখানে কেউ দেবদূত না। কথা হলো কার শাসন বা কার আমলে দেশ এগোয়। মানুষ এগোয়। গত ক’বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে তার শরীরে এখন তেজ আর দীপ্তি। বিদেশে সম্মান আর মর্যাদা নিয়ে বাঁচা বাংলাদেশীরা কেন শেখ হাসিনার বিরোধিতা করে তাও আমরা বুঝি। এদের গাত্রদাহের মূল কারণ পাকপ্রীতি ও ভারত বিরোধিতা তথা সাম্প্রদায়িকতা। এরা ভাল জানে জলে-স্থলে অন্তরীক্ষে কে বিজয় এনে দিয়েছেন। নদী সমুদ্রসীমায় আমরা জয়ী হয়েছি। মাটিতে জয়ী হয়ে ছিটমহল পেয়েছি। আকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি। তারপরও তারা আলোকিত দেশের বদল বিদ্যুতহীন খাম্বা চায়! জনগণ এবার সে আশায় ছাই ঢেলে দিয়েছে। শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল নৌকা জিতবে। যারা শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে ভোট করবে না বা কোনভাবেই মাথা নোয়াবে না বলেছিল, তারা নিজেদের পায়ে ভর দেয়া ভুলে গেছে। তাই তাদের দরকার হলো আওয়ামী লীগ পরিত্যক্ত কিছু বাতিল মাল। কামাল হোসেনের মতো বয়সী মানুষ সামনে এসে একটা উপকার করলেও দেশটা গুবলেট করে ছেড়েছে। উপকার এই তাকে সামনে পেয়ে এরা মনে করেছিল কাজ হয়ে গেছে। দেশী-বিদেশী লবিং এবার তাদের হয়ে কাজ করবে। কিন্তু তিনি এখন লাগামহীন পাগলা ঘোড়া। কথা কাজ বা আচরণে বেপরোয়া। মানুষ তার ওপর বিশ্বাস রাখবে কোন দুঃখে? রব, মান্না কিংবা কাদের সিদ্দিকীর এতিমখানায় মোমবাতি দেয়ার লোকও নেই। এদের ধারণা ছিল ধানের শীষ নিলেই বিজয় হবে। খালেদা জিয়ার সে কাল আর এ কালের তফাৎ বোঝেনি এরা। তিনি এখন অন্তরালে। তার কথা দলের লোকরাই শোনে না। কিছু হলেই তারা তারেক জিয়ার কাছে নালিশ জানায়। তার বুদ্ধির চাইতে অপকৌশল বেশি। তার ধারণা কোনভাবে খুন করলেই গদি পাওয়া সম্ভব। সে কাহিনী এখন চলে না। বিএনপির এই ভরাডুবির পেছনে ভোট কেড়ে নেয়া দশ ভাগ কাজ করলেও নব্বই ভাগ ছিল তাদের ব্যর্থতা। প্রার্থী নির্বাচন থেকে ভোটের কৌশল ভুলে ভরা। মাঠে রাজনীতি না করা ও করতে না পারাÑ মিলেমিশে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে, যাতে বিএনপি টিকবে কি-না সেটাই এখন দেখার বিষয়। গালভরা কথায় তারা বলে তাদের নাকি দেশব্যাপী বিশাল সমর্থন। জামায়াতের বেলায় শুনি তাদের ক্যাডার ও নেতারা নাকি সবকিছু পালটে দিতে পারে। আসলে কি পারে কি পারে না, সেটা এখন প্রকাশ্য। জুজুর ভয় দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানানো যায়, বশে আনা যায় না। একটা কথা মানতেই হবে, দেশ ও মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তারা দুর্নীতি লুটপাট বা চুরি যেমন চায় না, তেমনি চায় না দেশবিরোধীরা পতাকা উড়িয়ে চলুক। সে কারণেই এমন রায় এল। আর একটা বিষয়, শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা। তিনি দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তাঁর ভেতর গড়ে উঠেছে নতুন এক শেখ হাসিনা, যিনি দেশ-বিদেশে সমাদৃত। তাঁর কথার মূল্য আছে মানুষের কাছে। আর তিনি যেভাবে সব সামাল দিচ্ছেন বা দিতে পারেন, তার কোন বিকল্প নেই। তাঁর ঘোর দুশমনও স্বীকার করে, তিনি না পারলে কেউ পারবে না। এই ইমেজ কাজে এসেছে। তিনি যা করে দেখিয়েছেন তা যেমন তুলনাহীন, তেমনি যা করবেন বলেন তাও করেন। সে কারণে সুখে থাকতে ভূতে কিলায়, এমন কোন পরিবেশে রাজি হয়নি মানুষ। যেসব নেতারা হঠাৎ এসে বড় বড় কথা বলে তারা বুঝলে ভাল যে, এখন শুধু কথায় চিড়ে ভেজে না। দেশের মানুষের মুখে ভাত পরনে কাপড় আর হাতে টাকা। তারা কেন খামোখা বিএনপিকে আনতে মাঠে নামবে? তাই এবার সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে বিএনপি। কি হবে তাদের? তারা কি ফখরুলের অধীনে নতুন কোন পথের সন্ধানে যাবে? না তাদের বিলেতে পালিয়ে থাকা নেতার কথামত আরও বিপদ ডেকে আনবে? তারা এখনই অপপ্রচার শুরু করেছে। বিদেশী মিডিয়া ও বিদেশী ওয়াচডগরা চাইলেই আবার নির্বাচন হবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। একবার ইলেকশন হতেই যেখানে নয় মণ তেল পোড়াতে হয়, সেখানে আর একবার মানুষ সে ঝুঁকি নেবে না। দেশও তেমন কোন বিষয়ে আগ্রহী হবে না। কাজেই তাদের এখন ফাইনাল হিসাব-নিকাশের সময়। বিএনপির সম্ভাব্য নেতৃত্ব যদি হয়, পরিবার কেন্দ্রিক, তা হলে আশা নেই। কারণ সবার বিরুদ্ধেই আছে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ। তাদের পথ কঠিন। তাদের সামনে আইনের পাহাড়। ফলে দল বাঁচাতে হলে নতুন বিকল্প পথ নিতে হবে। পুরনো নেতাদের ভেতর এখন শুরু হবে মারামারি আর অভিযোগের পালা। কে থাকবে, কে থাকবে না সেটাও দেখার বিষয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি সংহত। আপাতত এ কথা বলতে পারি, জয় বাংলা আর মুক্তিযুদ্ধ বরাবরই প্রমাণ করেছে হাজার মতবিরোধিতার পরও মানুষ তাদেরকেই চায়, যারা দেশপ্রেমী। যারা পতাকা সঙ্গীত বা মাটির দুশমন, তাদের চায় না এই দেশ। বরং সময় সুযোগমতো ঠিকই তার প্রতিশোধ নেয়। কাদের সিদ্দিকী, মান্না, রবের রাজনীতি মনে হয় শেষ। কামাল হোসেন তো গতায়ু। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বিকল্প শক্তি বা দলের দরকার বুঝেই হয়ত সময় ঠিক করবে আগামীতে কারা হবে বিরোধীদল। শেখ হাসিনার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা আর ভালবাসা জানিয়ে বলি, যতদিন আপনার হাতে বাংলাদেশ, ততদিন আমাদের আশা ও স্বপ্নের মৃত্যু নেই। জয় হোক বাংলাদেশের। [email protected]
×