ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধীদের কথা কথার কথায় পর্যবসিত

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির নবযাত্রা, উজ্জীবন- জয় বাংলার জয়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির নবযাত্রা, উজ্জীবন- জয় বাংলার জয়

মোরসালিন মিজান ॥ কত যে কথা! কথার ফুলঝুড়ি। সব কথা কথার কথায় পরিণত হলো। শুধু কথায় চিড়ে ভিজে না। ভিজল না এবারও। স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসনের শেষ চেষ্টা ব্যর্থ হলো। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই রায় দিল জনগণ। আগেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। এবার আরও সুসংহত হলো অবস্থান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে। এমন সময় এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? তবে দায়িত্বও বেড়েছে। বিজয়ী দল ও জোটকে বিপুল চাওয়া পূরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতায় থাকা নয় শুধু, আনতে হবে গুণগত পরিবর্তন। মুক্তিযুদ্ধের মৌল আকাক্সক্ষা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই সার্থক হবে এত এত ভোট পাওয়া। বিএনপির কথায় আসা যাক। এবারও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করেছে দলটি। ধানের শীষ প্রতীক লিজ দিয়ে যোদ্ধাপরাধীদের প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছিল। আর নতুন কৌশল হিসেবে সামনে ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নতুন এই ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি নেতা ড. কামাল হোসেন প্রায় প্রতিদিনই সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন। তারও বেশি ছিলেন টেলিভিশনে। গত কয়েকদিনে কত রকমের কথা যে তিনি বলেছেন! হঠাৎই জোরালো কণ্ঠ। উত্তেজনা চরমে। আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্যে গত ১০ ডিসেম্বর তিনি বলেছিলেন, আপনাদের তো আয়ু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আরও ২০ দিন আছে। এই ২০ দিনের মধ্যে সময়কে কাজে লাগান। আর কয়েকদিন পর তো সাধারণ মানুষ হয়ে যাবেন। আপনাদের যেন ৩১ তারিখ মোবারকবাদ দিতে পারি সে সুযোগ দেন। কিছু ভাল কাজ করে না গেলে পরে আফসোস করবেন এই বলে যে সুযোগ পেয়েও কিছু ভাল কাজটি করলাম না। এমনকি একে ওকে হুমকি দিতে দ্বিধা করেননি প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। এতকাল পর যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে কী তিনি এ্যাচিভ করতে চান? এমন প্রশ্নের কোন ব্যাখ্যা তিনি দিতে রাজি হননি। সাংবাদিকরা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির নিয়ে প্রশ্ন করায় ব্যাপক চুটপাট করেন। এমনকি সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন তিনি। প্রশ্নটিকে ‘বেহুদা কথা বলে’ বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রায় মারমুখী হয়ে প্রশ্নকর্তাকে তিনি বলেন, ‘চুপ করো। চুপ করো। খামোশ।’ এমন দম্ভ দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যান। তবে কি ক্ষমতার আঁচ পেতে শুরু করেছে ঐক্যফ্রন্ট? জনগণ সত্যি আছে তাদের সঙ্গে? কেউ কেউ দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার চেষ্টা করেছেন বৈকি। বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো ভাইরাল ছিলেন সব সময়। প্রতিদিন কয়েক দফা কথা বলেছেন। ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী নেতা বলেছিলেন, ৩০ ডিসেম্বর নীরব ভোট বিপ্লব ঘটবে। আওয়ামী লীগকে দেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতিটি কেন্দ্রে পাহারা দেয়ার আহবান জানিয়েছিলেন তিনি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক আলোচিত নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। অসমতল মাঠ জনগণ সমান করে দেবে। অত্যাচারের জবাব ৩০ ডিসেম্বর দেব আমরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল অন্য চিত্র। রবিবার ভোটের মাঠ ঘুরে তাদের কাউকে তেমন পাওয়া গেল না। নেতাদের কথা একদমই কানে তোলেননি সমর্থকরা। কনফিডেন্স পাননি। সচেতন ভোটারা বলছিলেন, বিগত দিনের অন্যায় দুর্নীতি অগ্নিসন্ত্রাসের দায় নিতে হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ার মুখ তাদের ছিল না। আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের প্রার্থীরা দিন-রাত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন। প্রার্থীদের স্ত্রী সন্তান বাবা মায়েরা পর্যন্ত নৌকায় ভোট চেয়েছেন। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা জনগণের কাছে পৌঁছার চেষ্টাটুকুও করেননি। ধানের শীষের পোস্টার টানানোর কেউ ছিল না। নির্বাচনের দিনও তা-ই হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে এজেন্ট দিতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত। ফলে তাদের নিজস্ব ভোটাররাও অত উৎসাহ দেখাননি। এ অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ফল অনুমান করে ফখরুল বলেছেন, জনগণের সঙ্গে তামাশা হয়েছে। মান্না বলেছেন, ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। এমনটি হবে জানলে নির্বাচনে আসতাম না। অর্থাৎ ইউটার্ন। অর্থাৎ জনগণের প্রত্যাশা বুঝতে না পারার ব্যর্থতা। সাধারণ জনগণ বিএনপি-জামায়াতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল অনেক আগেই। এর কারণে কিছুটা, হ্যাঁ, একতরফাই মনে হতে পারে নির্বাচনটিকে। আসলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষেরা চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছিলেন। অর্জন ধরে রাখার কঠিন শপথ নিয়ে জোট বেঁধেছিলেন। এখন নিরপেক্ষ মানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ। শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক চিকিৎসক বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশটি তাদের এই বক্তব্য স্পষ্ট করেছিলেন। দল বেঁধে ভোট দিতে এসেছিলেন তারা। তরুণ প্রজন্মের প্রথম ভোটও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গেছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে চিরতরে ছুড়ে ফেলার সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে তাদের মাঝে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরব নিয়ে বাঁচতে চান বলে জানিয়েছেন তারা। মুক্তিযুদ্ধের শক্তির প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে শেখ হাসিনাকে বেছে নেন। ভোট দেন নৌকায়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাধারণ মানুষও বঙ্গবন্ধু কন্যার উন্নয়নের রাজনীতির পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাই এত বড় বিজয়। সব ঠিক থাকলে আরও এক মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু যত বড় বিজয় তত বড়ই দায়। অনেক দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের সুফল সর্বস্তরে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও অনেক অপ্রাপ্তি। সব দূর করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কথার কথা নয়। এর বাস্তবায়ন করতে হবে। আর তা হলেই যোগ্য সম্মান জানানো সম্ভব হবে ভোটারদের। জয় বাংলার জয় সুনিশ্চিত হবে।
×