ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোট কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে সন্তোষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

 ভোট কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে সন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রচারে অনুপস্থিতির পর ভোটের মাঠেও নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। অনেক ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষের নির্বাচনী এজেন্টরা আসেননি। এমনকি তারা আসতে পারছেন না অথবা তাদের আসতে দেয়া হচ্ছে না এমন তথ্যও প্রিসাইডিং অফিসারকে কেউ জানাননি। যেসব জায়গায় ধানের শীষের এজেন্টরা এসেছেন তারা বলেছেন, প্রশাসন বা সরকারী দলের কোন রকম বাধার মুখে তাদের পড়তে হয়নি। তবে ভোটাররা স্বাধীন-স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরে খুশি। ভোটাররা বলেছেন, সুষ্ঠু এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশে ভোট হয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবারের ভোটের পরিবেশকে সুন্দরও বলেছেন অনেকে। ঢাকা-১১, ১৭, ৮, ৯ আসনে বনানী, গুলশান, বাড্ডা, বনশ্রি, রামপুরা, খিলগাঁও, মতিঝিল ঘুরে কোথাও কেউ ভোট দিতে পারেননি এমন চিত্র পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুরুষ এবং নারী ভোটারদের ভোট দিতে দেখা গেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটার স্লিপ পেতে সহায়তা করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এসব এলাকায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে ধানের শীষের কোন প্রার্থীর সমর্থককে দেখা যায়নি। বিএনপির তরফ থেকে তাদের নেতাকর্মীদের আসতে দেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগও করা হয়নি। সঙ্গত কারণে বিএনপি কর্মীরা কেন একেবারে মাঠেই নামল না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভোটাররা। রামপুরা আল ফুরকান ভোটকেন্দ্রর বাইরে একজন ভোটার আসাদুজ্জামান বলেন, বিএনপিকে সকাল থেকেই তারা দেখেনি। কেন তারা নামেনি তাও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তারা মাঠে নামলে তুলে দিলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারত তাদের দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। এখন কেউ ঘরে বসে থেকে নামতে পাচ্ছে না এমন অভিযোগ করাটা যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন তিনি। রামপুরা মহানগর প্রজেক্টের পাশে ওয়ার্ল্ড ভিউ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তৌহিদ উদ্দিন মোঃ সোহেল জানালেনÑ তার কেন্দ্রে ছয়টি বুথের ছয়টিতেই বিএনপির নির্বাচনী এজেন্ট রয়েছে। ছয়টি বুথের ছয়জন বিএনপি এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের কেউ আসতে বাধা দেয়নি। কেউ তাদের বাসায় গিয়েও কোন ভয় দেখায়নি। ভোটকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বিএনপির এসব এজেন্টের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। বিএনপির এজেন্টরা জানান, ভোটকেন্দ্রে আসার পরও তাদের কেউ বেরিয়ে যেতে পারেনি। এ সময় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির এজেন্টকে একই বেঞ্চের পাশাপাশি বসে কাজ করতে দেখা গেছে। এদের একজন শাহিদা বেগম লিপি জানান, তিনি নির্ভয়ে এসেছেন। সুন্দর ভোট হচ্ছে। কোন বাধা ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। কেন্দ্রটির আরেকটি বুথের বিএনপি এজেন্ট রাশেদা বেগমও বলছেন, তিনি কোন রকম বাধা ছাড়াই সকাল আটটার দিকে কেন্দ্রে এসেছেন। বিএনপির অন্য এজেন্ট এলিনা, সফু আলম এবং মোঃ মঞ্জুও বলছেন, তাদের কেউ বাধা দেয়নি। নির্বাচনী পরিবেশ চমৎকার। ভোট কেন্দ্রের মধ্যেও তারা নির্ভয়ে কাজ করছেন। এই কেন্দ্রের ভোটার ফারহা কাদের ত্বনী জানান, ভোট দিতে আসার ক্ষেত্রে কোন রকম সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। তিনি যা দেখছেন তাতে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। তার কেন্দ্রে কোন গোলযোগ নেই। রামপুরা মহানগর প্রকল্পের আল ফুরকান স্কুলের একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শেখ মোঃ মহসীন জানালেন, সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কোন প্রার্থীর কেউ এখানে কোন ধরনের প্রভাব বিস্তার করেনি। ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিচ্ছেন এবং বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। এখানের দুটি বুথের দুজন বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট হাসি এবং ডালিয়া জানান, তাদের কেউ বাধা দেয়নি। বাধাহীন সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কেথাও বিএনপির ভোটারদের কেউ ভয় দেখাচ্ছেন এমন কোন খবর তারা জানতে পারেননি। একই স্কুলের তিন তলার আরেকটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ ইউসুফ আলী জানান, তার চারটি বুথের মধ্যে দুটিতে বিএনপির এজেন্ট রয়েছে। বাকি যে দুজনকে বিএনপি এজেন্ট হিসেবে পাঠিয়েছে তাদের ভোটার তালিকায় নামই নেই। এছাড়া দুটি করে ছবি আনার কথা থাকলেও একটি করে ছবি নিয়ে এসেছিল। সঙ্গত কারণে তাদের দুজন এজেন্ট নিয়ম অনুযায়ী প্রবেশ করতে পারেনি। তাদের বলা হয়েছিল এসব সমস্যা মিটিয়ে আসতে। কিন্তু এরপর তারা আর আসেনি। কেন্দ্রের এজেন্ট মোঃ আরাফাতও এই বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাদের ভোটার তালিকার সঙ্গে নামের মিল পাওয়া যায়নি। এজন্য তারা প্রবেশ করতে পারেননি। সকালে আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজে (বনশ্রি শাখা) গিয়ে দেখা গেছে ধানের শীষের কোন এজেন্ট নেই। প্রিসাইডিং অফিসার সিদ্দিক আলী জানান, ধানের শীষের কোন প্রার্থীর এজেন্ট আসেনি। তাদের নামের তালিকাও কেউ তাকে দেয়নি। কেন্দ্রের কোথাও বিএনপির কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। এর বিপরীতে কেন্দ্রজুড়েই ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে এই কেন্দ্রের বাইরে কয়েক শ’ ভোটার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। ঠিক ৮টায় ভোট শুরুর কথা থাকলেও দারোয়ান ফটকে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে যাওয়ায় ভোটাররা ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি। ভোটাররা বিক্ষুব্ধ হলে ৮টা ১৮ মিনিটে পুলিশ তালা ভেঙ্গে ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করান। ভোট দিয়ে বেরিয়ে হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, কোন বাধা ছাড়াই ভোট দিয়েছেন তিনি। তাকে কেউ নির্দিষ্ট কোন প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য কোন রকম চাপ দেননি। নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে যাকে খুশি তাকে দিতে পেরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই কেন্দ্রের আরেক ভোটার মোস্তফা কামাল বলেন, ভোট সুন্দর এবং সুষ্ঠু হচ্ছে। অতীতে কোনদিন এত সুন্দর নির্বাচনী পরিবেশ দেখেননি তিনি। সিরাজুর রহমান নামের আরেক ভোটার জানান, তিনি বাধা ছাড়াই ভোট দিয়েছেন। স্বচ্ছ বাক্সের মধ্যে গুটিকয়েক ব্যালট পেপার দেখেছেন। তার মতে, অনেকেই গুজব ছড়াচ্ছেন আগের রাতে ভোট দিয়ে বাক্স ভরে রাখা হয়েছে, তেমন কিছু তিনি দেখেননি। এসব কথার কোন ভিত্তি নেই বলে জানান তিনি। আরেক ভোটার দিলু খন্দকার জানান, অতীতে কোনদিন এত সুন্দর পরিবেশে তিনি ভোট দেননি। তিনি জানান, নম্বরটা আগে সংগ্রহ করে রেখেছিলাম বলে এসেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভোট দেয়া শেষ হয়ে গেছে। বনশ্রির আরেকটি নারী ভোটার কেন্দ্র হলি ক্রিসেন্টে গিয়েও ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শাহিনুজ্জামান জানান, তিনি বিএনপির কোন এজেন্টকে পাননি। কেন আসেনি তাও তাকে কেউ জানায়নি। ভোটারদের মধ্যে আফরোজা খাতুন, শাহিদা, নাসিমা বেগম ভোটের পরিবেশ সন্তোষ জানিয়ে বলেন, এত সুন্দর পরিবেশে কোনদিন তারা ভোট দেননি। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে গিয়েও বিএনপির কোন এজেন্ট পাওয়া যায়নি। এখানের একজন প্রিসাইডিং অফিসার জানান, বিএনপির এজেন্টরা ছিল। কিন্তু প্রতিটি বুথ ঘুরেও বিএনপির এজেন্টদের চোখে পড়েনি। ঢাকা-১৭ আসনে চলচ্চিত্র নায়ক আকবর হোসেন পাঠান, যিনি ফারুক নামেই সারাদেশে পরিচিত তাকে এইচএম এরশাদ সমর্থন দিয়েছেন। তবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী এজেন্ট দেখা গেছে। কেন্দ্রে লাঙ্গলের নির্বাচনী এজেন্ট রবিউল ইসলাম জানান, তিনি বুথে লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করছেন। মোঃ ইউসুফ আলী নামে আওয়ামী লীগের এক এজেন্ট বলেন, সকালের দিকে ধানের শীষের এজেন্টকে দেখেছেন তিনি। কিন্তু তারা কাউকে কিছু না বলেই চলে গেছে। কেন চলে যাচ্ছে তা বলেও যায়নি। ৬১ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, তারা তো এসেছিল। ছিলও। এরপর কেন চলে গেছে তা তো জানি না। কেন্দ্রটির ভোটার আনিসুদৌল্লাহ, সৈয়দ মাশরুর হোসেন. জাওয়াদ খান, সুলতানা নাসরিন, ফারহা, সেগুফি,সামিয়া জামান নামের কয়েক ভোটার জানিয়েছে, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে, কোথাও কোন খারাপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়নি। মানারাতের পাশের অন্য আরেকটি কেন্দ্রে লাইজু নামে একজন বিএনপির এজেন্টকে পাওয়া গেছে। লাইজু বলছেন, সকাল থেকেই তিনি কাজ করছেন। কেউ কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার ধূসর প্রকৃতি গাইন জানান, কোন ঝামেলা ছাড়াই সবাই ভোট দিচ্ছে। তার কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। উত্তর বাড্ডা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে দেখা গেছে মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পুরুষ এবং মহিলারা ভোট দিচ্ছেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, এখানে বিএনপির কোন এজেন্ট আসেনি। স্কুলটিতে আরো তিনটি কেন্দ্র রয়েছে। ওই কেন্দ্রেগুলোর প্রিসাইডিং অফিসারাও জানান, তাদের এখানে বিএনপির কোন এজেন্ট আসেনি। তবে বিএনপির এজেন্ট থাকুক বা না থাকুক তাতে ভোটে কোন প্রভাব পড়ছে না। সাধারণ ভোটারদের কাউকেই এ বিষয়ে মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি। রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ভোটকেন্দ্রে এসে সব থেকে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের যে লাইন চোখে পড়েছে তা প্রায় এক কিলোমিটার। কেন্দ্রের কয়েকটি বুথে বিএনপি এজেন্ট থাকলেও বেশিরভাগেই বিএনপি ছিল না। খিলগাঁও মডেল কলেজ কেন্দ্রেও বিএনপির কোন এজেন্টকে পাওয়া যায়নি। এখানের প্রিসাইডিং অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, এখানে বিএনপির কোন এজেন্ট আসেনি। তবে বিএনপির এজেন্ট থাকা না থাকা নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
×